সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মানববন্ধনের ডাক ইলিয়াস কাঞ্চনের
চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ (নিসচা)-এর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। ২৫ বছর ধরে এই সংগঠনটির কাজ করছেন তিনি। আগামী ৩ আগস্ট শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মানববন্ধন করবেন ইলিয়াস কাঞ্চন। সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের বিষয় নিয়ে তিনি এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এনটিভি অনলাইন : সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আপনি অনেক দিন ধরেই কাজ করছেন। সামনে আপনাদের মানববন্ধন রয়েছে।
ইলিয়াস কাঞ্চন : শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর সবাই আমাকে বলছেন, ‘ভাই, আপনি কিছু বলেন।’ এই ২৫ বছরে মানববন্ধন আমি অনেক করেছি। তবে এসব করে কিছু হয় না। এটা অনেক পরে বুঝতে পেরেছি। এ জন্য আমরা কাজের ধরনও পরিবর্তন করেছি। শুধু কথা বলে, কিংবা র্যালি, অনুষ্ঠান করা হয় হয়তো, কিন্তু কেউ আসলে এভাবে বুঝতে চায় না। কিছু কিছু পরিবর্তন হয়তো হয়। শুক্রবার মানববন্ধনের জন্য যাঁরা আমাকে অনুরোধ করেছেন, দেখি তাঁরা আসেন কি না। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক কিছু বলা যায়। বড় বড় বুলি আওড়ায় অনেকে। আমি দেখব, তাঁরা কতজন আসেন এই মানববন্ধনে। সেদিন স্কুল বন্ধ। অফিস বন্ধ। খুব সকালেও আমরা মানববন্ধন করছি না। দেখি কতজন আসেন।
এনটিভি অনলাইন : মানববন্ধন করে তেমন কিছু হয় না বলছেন। এর কারণ কী?
ইলিয়াস কাঞ্চন : অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। এয়ারপোর্ট রোডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের এক ছাত্র সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। এরপর মানববন্ধন করা হয়। সেই মানববন্ধনে শুধু সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্টুডেন্টরাই ছিল। অন্য ডিপার্টমেন্টের কেউ আসেনি। আসলে যার যায়, সে বোঝে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর একই অবস্থা হয়েছিল।
এনটিভি অনলাইন : মানববন্ধন ছাড়া আর কোনো উপায়ে আপনারা সচেতনতা বৃদ্ধি করছেন?
ইলিয়াস কাঞ্চন : শ্রমিক ও মালিকরা একতাবদ্ধ। আমাদেরও এক হতে হবে। চালকদের সঙ্গে আমরা পেরে উঠব না। এদের গালি দিয়েও লাভ নেই। কোনো কিছু বললেও লাভ হবে না। চালকদের আপন করে নিয়ে বোঝাতে হবে। বলতে হবে, ভাই, তোমরা গাড়ি চালাচ্ছ। ঠিক আছে, কিন্তু বুঝেশুনে চালাও। অনেক সময় চালকরা আমাকে বলে, রাস্তা ঠিক নাই কিংবা আইন ঠিক নাই। আমরাও তাদের বলি, প্রয়োজনে আমরা যাব তাদের কাছে, যাতে আইন কিংবা রাস্তা ঠিক হয়, কিন্তু তুমি যে বেপরোয়া গাড়ি চালাচ্ছ, সেটা তুমি করো না।
এনটিভি অনলাইন : আরো কী কী কর্মসূচি আপনারা পালন করছেন?
ইলিয়াস কাঞ্চন : স্কুলে গিয়ে গিয়ে শিশুদের আমরা সচেতন করছি রাস্তা পারাপার বিষয় নিয়ে। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের সংগঠনের ১২৪টি শাখা আছে। ঢাকা ছাড়াও পুরো দেশে সংগঠনের পক্ষ থেকে স্কুলে যাওয়া হচ্ছে। প্রাইমারি শিক্ষকদের বছরে বড় ট্রেনিং হয়। শিক্ষকরা ট্রেনিং নিতে আসেন। আমরা সেই সময় তাদের সড়ক দুর্ঘটনা সচেতনতামূলক ট্রেনিং করাই। কারণ সব স্কুলে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য কাজের ধরনে আমরা পরিবর্তন এনেছি। কারণ, এর আগে এসব নিয়ে সরকারকে বলেছি, মালিক ও চালককে বলেছি। বললে কিছু হয় না। আমি অনেক বলেছি। চালক ও মালিকের কাছে গিয়ে বুঝিয়েছি। আসলে কাউকে ক্ষেপিয়ে দিলে একটা কাজও হবে না। তাই এই পথ অবলম্বন করছি। শ্রমিকদের মতো রাস্তায় গিয়ে হরতাল করতে পারব না আমরা। তাই যেভাবে হোক, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করতে হবে।
এনটিভি অনলাইন : আপনাদের তো ড্রাইভিং প্রতিষ্ঠানও আছে?
ইলিয়াস কাঞ্চন : আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের পরামর্শে আমরা প্রতিষ্ঠানটি করেছি। অনেক শিক্ষিত ছেলেকে আমরা ট্রেনিং দিই বিনা পয়সায়। তিন মাসের ট্রেনিং। এভাবে আমরা ৫০০ শিক্ষিত চালক তৈরি করেছি। ড্রাইভিং লাইসেন্স তারা পেয়েছেন। পাঁচশ পরিবার সচ্ছল হয়েছে। ভালো চালক পেয়েছি আমরা।
এনটিভি অনলাইন : শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। তাদের উদ্দেশে আপনি কী বলবেন?
ইলিয়াস কাঞ্চন : ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে আমি একমত পোষণ করছি। এক প্রতিষ্ঠান নয়, সব প্রতিষ্ঠানকে আন্দোলন করতে হবে। একদিনের মানববন্ধন করে কিছু হয় না। আমি ২৫ বছর ধরে কাজ করছি। সবাইকে কাজ করে যেতে হবে। একদিন কিংবা দুদিন করে লাভ নেই। এই ছাত্ররাই বেতনের মধ্যে ভ্যাট দূর করেছে আন্দোলন করে। ভর্তি ফি বাড়ার পরও আন্দোলন করেছে ছাত্ররা। সড়ক দুর্ঘটনায় কোনো ছাত্র মারা গেলে সেই প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররাই শুধু পথে নামে। কেন সব প্রতিষ্ঠানের ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে পথে কি নামা যেত না! সড়ক দুর্ঘটনা আমার হয়নি, হতে পারে, এই ভাবনা থেকে সবাইকে এক হতে হবে। আমি চাইব এই ভাবনা নিয়ে সবাই যেন আমাকে সাহায্য করে। আমার পাশে যেন দাঁড়ায়।