বলিউডে কি ‘মি টু’ আন্দোলন শুরু?
বর্ষীয়ান অভিনেতা নানা পাটেকার ও পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন সাবেক ভারতসুন্দরী ও ‘আশিক বানায়া আপনে’ খ্যাত অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত। এবার তাঁর পক্ষে মুখ খুললেন বলিউড তারকারা। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, ফারহান আখতার, পরিণীতি চোপড়া, স্বরা ভাস্কর, রিচা চাড্ডা, টুইঙ্কেল খান্নাসহ অনেকেই এ নিয়ে কথা বলেছেন। নেটিজেনরা তনুশ্রী-নানা-বিবেক বিতর্ক নিয়ে সরব।
২০০৮ সালে তনুশ্রী প্রথম সোচ্চার হন নানা পাটেকার, কোরিওগ্রাফার গণেশ আচার্য, ‘হর্ন ওকে প্লিজ’ প্রযোজক সামি সিদ্দিকি ও পরিচালক রাকেশ সারেংয়ের বিরুদ্ধে। ১০ বছর পর সেই আলোচনা ফের জেগে উঠেছে সম্প্রতি।
তনুশ্রীর দাবি, ওই ঘটনার পর তিনি মুষড়ে পড়েছিলেন। ছবির জগৎ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। কেন তিনি দীর্ঘদিন ইন্ডাস্ট্রি থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন, কেন তিনি মনে করেন, ভারতে মি টু আন্দোলন কখনো হবে না; সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এসব প্রশ্নের উত্তর দেন তনুশ্রী দত্ত।
তনুশ্রীর সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারের পর যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরব হয়ে উঠছে। বলিউড তারকারা এ নিয়ে কথা বলছেন।
২০১৩ সালে ‘মেন অ্যাগেইনস্ট রেপ অ্যান্ড ডিসক্রিমিনেশন’ (এমএআরডি) নামে সামাজিক প্রচারাভিযান শুরু করেছিলেন ফারহান আখতার। একটি ‘থ্রিড’ রি-টুইট করে তিনি লিখেছেন, এটিই সব বলবে। ১০ বছর আগে তনুশ্রী দত্ত ক্যারিয়ার ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, এখনো সেই সময় বদলে যায়নি। তাঁর উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে সাহসের প্রশংসা করা উচিত।
বলিউডে নীরবতা ভাঙার জন্য ভারতের বিখ্যাত সাংবাদিক বরখা দত্ত ফারহানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও পরিণীতি চোপড়াও মনে করছেন, বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ হওয়া দরকার। যাঁরা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন এবং মুখ খুলেছেন, তাঁদের পক্ষে থাকা ও শ্রদ্ধা করতে আহ্বান জানিয়েছেন এ তারকারা।
অভিনয় ছেড়ে সাহিত্যে আসা সাবেক বলিউড সুন্দরী টুইঙ্কেল খান্না তনুশ্রীর মতো মুখ খোলার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, নিপীড়নমুক্ত কাজের পরিবেশের দাবি ও উদ্দেশ্য মানুষের মৌলিক অধিকার। এই সাহসী নারীর পক্ষে থাকলে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।
রিচা চাড্ডা বলেছেন, তনুশ্রী দত্তকে একা ও প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেখে তিনি কষ্ট পেয়েছেন। তিনি মনে করেন, নিজের প্রচারণার জন্য কোনো নারী এ ব্যাপারে বলেন না। সেটে তাঁর সঙ্গে যা হয়েছিল, তা উদ্দেশ্যমূলক। তাঁর একমাত্র দোষ হলো, তখন না ফেরা আর সাহসী না হওয়া।
শ্রুতি শেঠ বলেছেন, যৌন নিপীড়ন চিরতরে শেষ করতে বলিউড জেগে ওঠা শুরু করেছে। তনুশ্রীকে সাহসী আখ্যা দিয়ে তিনি আশা করেন, আরো অনেক নারী অপরাধের বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন।
তবে চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক হাঁসাল মেহতা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়াই একজনকে কীভাবে দোষী করছে সবাই? আনুষ্ঠানিক অভিযোগের পর সঠিক তদন্তের মাধ্যমেই তা জানা যাবে।’
বলিউড মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চন বলেন, ‘না আমি তনুশ্রী, না আমি নানা; তাই এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারব না।’
অন্যদিকে বলিউড সুপারস্টার আমির খান বলেন, ‘কোনো কিছুর পুরো সত্যটা না জেনে মন্তব্য করা ঠিক না। মনে করি, এ ব্যাপারে আমি মন্তব্য করতে পারি না। আমার দিক থেকে বলব, বলা ঠিক নয়। কিন্তু এটা বলতে পারি, যখন এমন কিছু ঘটে, তখন তা সত্যিই দুঃখের। এখন যখন ঘটেছেই... তদন্ত হওয়া দরকার। আমি মনে করি না, আমরা এ নিয়ে মন্তব্য করতে পারি।’