অসুস্থ কাদের খানকে কেউ দেখতেও যাননি!
বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা কাদের খানের মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান হিন্দি চলচ্চিত্র অঙ্গন। দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন, গত সোমবার ৮১ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম ভরে ওঠে শোকবার্তায়।
তবে বর্ষীয়ান অভিনেতা শক্তি কাপুর দুঃখ করে বলেছেন, খুব নিঃসঙ্গ ছিলেন কাদের খান। অসুস্থতাকালে চলচ্চিত্র অঙ্গনের কেউ তাঁকে দেখতেও যাননি।
১৯৭৩ সালে যশ চোপড়া পরিচালিত ‘দাগ’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয় কাদের খানের। তিন শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো ‘আদালত’, ‘বৈরাগ’, ‘খুন পাসিনা’, ‘ছালিয়া বাবু’, ‘পারভারিশ’, ‘চোর সিপাহি’, ‘সত্তে পে সত্তা’। আশির দশক ছিল তাঁর সুবর্ণ সময়।
কাদের খানের ৩০০ সিনেমার ১০০টিতেই ছিলেন জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা শক্তি কাপুর। হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, কী নিঃসঙ্গ ছিলেন কাদের খান। জীবনের শেষ দিনগুলোতে ইন্ডাস্ট্রির কাউকে পাশে পাননি। সবাই তাঁকে এড়িয়ে গেছে।
‘আমার ক্যারিয়ারের অর্ধেকটাই কাদের খানের সঙ্গে কাটিয়েছি—আমরা একসঙ্গে একশটির বেশি সিনেমা করেছি, দুই সহ-অভিনেতার একসঙ্গে কাজের এটাই সর্বোচ্চ উদাহরণ। তিনি আর নেই, ইন্ডাস্ট্রি এখন তাঁর কথা ভাবছে। মারা যাওয়ার পর কেন একজন অভিনেতাকে মানুষ স্মরণ করবে? যখন কাজের মধ্যে থাকে অথবা অসুস্থ থাকে অথবা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যায়, তখন কেন কেউ সুন্দর করে কথা বলে না? তারা একমাত্র তখনই কথা বলে, যখন একজন অভিনেতা আর পৃথিবীতে থাকে না,’ বলেন ৬৬ বছরের শক্তি।
দুঃখ করে শক্তি কাপুর বলেন, ‘এক দশক ধরে যখন কাদের খানের হাতে কোনো কাজ ছিল না, রোগে ভুগছিলেন, কেউ তাঁর খোঁজ নেননি। কেন তাঁকে এতটা নিঃসঙ্গ হয়ে চলে যেতে হলো? অভিনেতারা যখন অসুস্থ হন বা কাজ করতে পারেন না, তখন কেন তাঁদের ছেড়ে সবাই চলে যায়? আর্থিকভাবে কাদের খান বেশ নিরাপদই ছিলেন, কিন্তু নিঃসঙ্গ ছিলেন। অসুস্থতাকালে মানুষ খুব একটা দেখতে যাননি তাঁকে, সময় দেননি কেউ।’
শক্তি কাপুর এ-ও বলেন, “আবার চলচ্চিত্র দুনিয়ায় ফেরার ইচ্ছে ছিল কাদের খানের। যখনই তাঁর সঙ্গে কথা হতো, তিনি বলতেন, ‘আমি ফের চলচ্চিত্র জগতে ফিরব, শুধু একটা কারণে—নতুন প্রজন্মকে সংলাপ বলাটা শেখাতে চাই, মুখ থেকে যে শব্দ বেরোবে, তা গোলাপ ও প্রজাপতির মতো হওয়া চাই। আজকাল অভিনেতারা যেভাবে কথা বলে, তার অর্ধেকই বোঝা যায় না। তাই আমি এই প্রজন্মের অভিনেতাদের ভাষা শেখাতে চাই।’”
অভিনয়ের পাশাপাশি সংলাপ লেখায়ও কাদের খান ছিলেন বেশ দক্ষ। ১৯৭০-৮০-এর দশকে প্রায় ২৫০টি ছবির সংলাপ লিখেছেন তিনি। সেরা সংলাপ, সেরা কৌতুক অভিনেতা হিসেবে বহুবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার পেয়েছেন এই অভিনেতা। সূত্র : ডিএনএ।