‘হুমায়ূন স্যারের গল্পে কাজ করার তৃষ্ণা মেটেনি’
হুমায়ূন আহমেদের বেশির ভাগ নাটকেই কাজ করেছেন অভিনেতা ফারুক আহমেদ। নানা চরিত্র নিয়ে দর্শকের সামনে হাজির হয়েছেন তিনি। তবে হুমায়ূন আহমেদের গল্পে কাজ করার তৃষ্ণা মেটেনি বলে জানান ফারুক। নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীতে সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।
ফারুক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি স্যারের ছোট ভাই আহসান হাবীবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সেই হিসেবেই পরিচয়। আমি মঞ্চে কাজ করতাম, আমার অভিনয় স্যার পছন্দ করতেন। যে কারণে স্যারের বেশির ভাগ নাটকে আমার জন্য চরিত্র থাকত। নানা চরিত্র নিয়ে আমি দর্শকের সামনে হাজির হয়েছি। তবে স্যারের গল্পে কাজ করার তৃষ্ণা আমার এখনো মেটেনি। অভিনয় আমার নেশা, যে কারণে এখনো কাজ করছি। তবে প্রত্যেকটা কাজ করার সময় স্যারকে মনে পড়ে। তাঁর শূন্যতা অনুভব করি। আজ স্যারের মৃত্যুবার্ষিকী, সবার কাছে দোয়া চাই। স্যারের জন্য সবাই দোয়া করবেন, স্যার যেখানেই থাকুক যেন ভালো থাকেন।’
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে অন্য পরিচালকদের মধ্যে পার্থক্য দেখিয়ে ফারুক বলেন, ‘স্যার অনেক সিরিয়াস বিষয় মানুষের কাছে সহজভাবে বলতে চেষ্টা করতেন। দর্শক গল্পের ভেতরে প্রবেশ করে নাটকের অংশ হয়ে যেত, গল্পের চরিত্র নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারত। আর এখন বেশির ভাগ চিৎকার করে দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। যেমন ধরেন একটা সিক্যুয়েন্স, গ্রামের কর্তা পুকুরে মাছ ধরছেন। তার কাছে এসে সহকারী বলল, জনাব বিরাট সমস্যা। তখন কর্তা বললেন, কী সমস্যা, সহকারী? জনাব মোড়ল সাহেবের স্ত্রী গলায় দড়ি দিয়েছে। আর এখনকার নাটকে যা হয় তা হলো, কর্তা পুকুরে মাছ ধরছে, সহকারী চিৎকার করতে করতে এলো, জনাব মোড়ল সাহেবের স্ত্রী গলায় দড়ি দিছে, গ্রামে পুলিশ আসছে, তাড়াতাড়ি আসেন।’
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কথাশিল্পী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার ও গীতিকার। আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের পথিকৃৎ বলা হয় তাঁকে।
হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত উল্লেখ্যযোগ্য চলচ্চিত্র হলো দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেটুপুত্র কমলা ইত্যাদি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। লেখালেখি এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বার্থে তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে দেন।
২০১১ সালে তাঁর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। দেশ ও দেশের বাইরে অনেক চিকিৎসার পরও সুস্থ হয়ে ওঠেননি তিনি। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই মারা যান কিংবদন্তি এই লেখক। নুহাশপল্লীর লিচুতলায় তাঁকে সমাহিত করা হয়।