ভোটার ১৪০ জন, প্রার্থী ৪১
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন ২০১৯-২১ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২৭ জুলাই শনিবার। কার্যনির্বাহী পরিষদের ১৯টি পদে নির্বাচন করছেন ৪১ প্রার্থী, তবে সমিতির মোট ভোটার ১৪০ জন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে এফডিসি চত্বর। নির্বাচনের পর নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে চলচ্চিত্র, এমনটাই আশা করছেন সাধারণ প্রযোজকরা। চলচ্চিত্রের সমস্যা দূর করার জন্য বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে আশা করছেন প্রযোজক নেতারা।
এ বিষয়ে প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘গত সাত বছর আমাদের চলচ্চিত্র নানা সমস্যায় ভুগছে, এর মূল কারণ এত দিন আমাদের প্রযোজক সমিতির নির্বাচিত কমিটি ছিল না। তবে এবার আমরা আশাবাদী, আগামী দিনে আমাদের সমস্যাগুলো সমাধান হবে। আমার কাছে মনে হয়, আমাদের প্রথম সমস্যা সিনেমা হলে চলচ্চিত্র প্রজেকশন, নির্বাচনের পর আমরা প্রথম এই সমস্যার সমাধান চাইব, তার পর ই-টিকেটিং। এ দুটি সমস্যা সমাধান করতে পারলে নিয়মিত চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে উৎসাহ পাবেন প্রযোজকরা।’
প্রযোজক মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘আমরা নিয়মিত যাঁরা চলচ্চিত্র নির্মাণ করি, তাঁরা জানি ছবি মুক্তি দিতে গেলে কী কী সমস্যা হয়। আমরা আসলে নিজেদের সমস্যাগুলোর সমাধান চাই। গত সাত বছর যেহেতু আমাদের নির্বাচিত সদস্য ছিল না, তাই আমরা নিজের জায়গা থেকে কাজ করেছি। আগামী দিনে নির্বাচিত হয়ে কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে কাজ করতে পারব। সমস্যা যেমন আছে, সমাধানও আছে। আমরাই আমাদের সমস্যার সমাধান করব ইনশাআল্লাহ।’
চিত্রনায়িকা ইয়ামিন হক ববি বলেন, ‘আমি যেমন পর্দায় কাজ করছি, তেমনি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করছি। নিজের চাওয়া-পাওয়া সবকিছুই এই চলচ্চিত্রকে ঘিরে। যে কারণে চলচ্চিত্রের সব কাজের সঙ্গে চাই। অবশ্যই আমাদের সুদিন ফিরবে, আমরাই ফেরাব। আমরা ১৯টি পদের জন্য প্রার্থী হয়েছি ৪১ জন। এর মধ্যে যাঁরা পাস করবেন, তারা মূল কাজগুলো করবেন, বাকিরা পাশে থেকে সহযোগিতা করবেন, কারণ আমরা সবাই প্রযোজক।’
প্রযোজক আলিম উল্লাহ খোকন বলেন, ‘প্রযোজক সমিতির ক্ষতিগ্রস্ত প্রযোজকদের জন্য একটি ফান্ড তৈরি করা দরকার। সেখানে সরকারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অনুদানের সিনেমা প্রযোজনা যেন প্রযোজক সমিতির মাধ্যমে করা হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। আগামী দুই বছরে দুই জোড়া নায়ক-নায়িকা, পরিচালক, চিত্রনাট্যকার, সংগীত পরিচালক, গীতিকার, খল-অভিনেতা, কমেডিয়ানসহ চলচ্চিত্র পরিবারের শিল্পী সংকট দূর করতে হবে। দেশি সিনেমা বিদেশের প্রেক্ষাগৃহে নিয়মিত বিপণন নিশ্চিত করতে হবে। আমি জাজ মাল্টিমিডিয়ার সিইও হিসেবে এমন অনেক কাজই করছি। সমিতি তার কাজ শুরু করলে আরো বেশি বেশি কাজ করা সম্ভব।’
প্রযোজক মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘চলতি বছরে শুরুতে আমি চলচ্চিত্র মুক্তি দিয়েছি। আমার মতো অনেক প্রযোজক আছেন, চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী। আশা করি, নির্বাচনের পর সব সমস্যা সমাধান হবে। তবে পুরাতন নেতাদের পাশাপাশি নতুন মুখ প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’
প্রযোজক সামসুল আলম বলেন, ‘আসলে আমাদের চলচ্চিত্রে সমস্যার শেষ নেই। গত সাত বছর আমাদের সমিতির কার্যক্রম ছিল না, এটাই মূল সমস্যা। কারণ, আমরা চলচ্চিত্রকে বলে থাকি জাহাজ। জাহাজের ক্যাপ্টেন হচ্ছেন পরিচালক। তবে জাহাজের মালিক হচ্ছেন প্রযোজক। একটা পরিবারের মালিক বা কর্তা যদি না থাকে, তা হলে সেখানে অনেক ধরনের সমস্যা থাকবে। আশা করি, আগামী দিনে সব সমস্যা সমাধান হবে।’
প্রযোজক মোরশেদ খান হিমেল বলেন, ‘কে জয়ী হবে আর কে পরাজিত, এটা সমস্যা নয়। এফডিসিতে আমরা কেউ কারো বিপক্ষে নই। নির্বাচনের আগে আমরা যেখানে এক হয়ে মিলেমিশে কাজ করছি। নির্বাচনের পরও আমরা সবাই এক থাকতে হবে। সব সময় সবাই সবার খবর রাখতে হবে।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনকৃত এফবিসিসিআইর অঙ্গসংগঠন। মামলা ও নানা জটিলতার কারণে সাত বছর ধরে বন্ধ ছিল এই সমিতির নির্বাচন। এর আগে নির্বাচন হয় ২০১১ সালের ১৮ আগস্ট।
এবারের নির্বাচনে কোনো প্যানেল থাকছে না। নির্বাচন হবে দুই ধাপে। প্রথমে সাধারণ সদস্যরা ১৯ জন নির্বাহী সদস্যকে নির্বাচিত করবেন। এরপর ১৯ জন মিলে সম্পাদকীয় পদের জন্য ১০ জনকে নির্বাচিত করবেন। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অর্থাৎ নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মিরাজুল ইসলাম উকিল। সদস্য হিসেবে থাকবেন মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন (উপসচিব), মো. খাদেমুল ইসলাম (সহকারী প্রোগ্রামার)। আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকবেন আবদুর রহিম খান (যুগ্ম সচিব), সদস্য আব্দুছ সামাদ আল আজাদ (যুগ্ম সচিব), সৈয়দা নাহিদা হাবিবা (উপসচিব)।
২০১৬ সালে প্রযোজক নাসির হোসেনের করা রিটের কারণে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। পরপর তিনবার কেউ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না—এফবিসিসিআইর অধীন সংগঠনের এমন নির্বাচনী রীতির খেলাপ করা হয়েছে মর্মে নাসির হোসেন বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেছিলেন। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত নির্বাচন স্থগিত করেন।
এর আগে ২০১৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মামলার কারণে নির্বাচন সাময়িক বন্ধ করা হয়েছিল। এরপর সে বছর ২৯ অক্টোবর দুই দলই চলচ্চিত্রের স্বার্থে নাসিরুদ্দিন দিলুকে আহ্বায়ক করে ২২ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।