সালমানের সঙ্গে দেখা হয়নি, ‘তেরে নাম’ খুব ভালো : রানু
ষাট বছর আগে বেশ সচ্ছল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন রানু মণ্ডল। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। পরে প্রয়াত বলিউড তারকা ফিরোজ খানের পাচকের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। পশ্চিমব্ঙ্গ থেকে মুম্বাইয়ে নিয়ে যান ফিরোজ। এরপর রানুর পরিবারে ভাঙন ধরে, শুরু হয় জীবন বাঁচানোর সংগ্রাম।
২০১৯ সালে বদলে গেল জীবন। কলকাতার রানাঘাট রেলস্টেশনের ভবঘুরে গায়িকা থেকে রাতারাতি অন্তর্জাল তারকা রানু মণ্ডল। মুম্বাইয়ে জনপ্রিয় সংগীত পরিচালক হিমেশ রেশমিয়ার সঙ্গে গান রেকর্ডিং করে প্রচারের সব আলো তাঁর ওপর। প্রথাগত শিক্ষা ছাড়াই গান গেয়ে সেলিব্রেটি রানু। তাঁকে নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই জনমানসে।
ইন্ডিয়া টিভির অনলাইন সংস্করণ এক খবরে বলেছে, বার্তা সংস্থা আইএএনএসের সঙ্গে সম্প্রতি ফেসবুক লাইভ সেশনে যোগ দেন রানু মণ্ডল। বলেন, ‘আমার জীবনের গল্প বেশ দীর্ঘ। আমার জীবনের গল্প দিয়ে সিনেমা বানানো যাবে। আর সেটা হবে বিশেষ কিছু।’
মাত্র এক সপ্তাহ আগে রানুর একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে অন্তর্জালে, সেখানে লতা মঙ্গেশকরের ‘এক পেয়ার কা নাগমা হ্যায়’ গাইতে শোনা যায়। তার পর ইতিহাস।
‘আমি ফুটপাতে জন্মাইনি। আমি সচ্ছল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি, কিন্তু ভাগ্য এখানে নিয়ে এসেছে। মাত্র ছয় মাস বয়সে আমার মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই,’ বলেন রানু মণ্ডল। অবশ্য তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন দাদি, কিন্তু জীবন বড় কঠিন।
রানু বলেন, ‘আমাদের বাড়ি ছিল, কিন্তু সেটি তো রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। বহু বহু দিন একাকিত্বে কেটেছে। খুবই কষ্ট করেছি, কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস হারাইনি। বিভিন্ন পরিস্থিতিতেই গান গেয়েছি। গান শেখার সুযোগ হয়নি কখনো, শুধু ভালোবেসেই গান গেয়ে গেছি।’
‘আমি লতা মঙ্গেশকরের কাছ থেকে গান শিখেছি। তিনি আমাকে শিক্ষা দেননি বটে, কিন্তু আমি রেডিও ও ক্যাসেট থেকে শুনে শিখেছি,’ যোগ করেন রানু।
রানু মণ্ডল বলেন, ‘বিয়ের পর আমরা পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুম্বাই চলে যাই। আমার স্বামী ফিল্মস্টার ফিরোজ খানের বাড়িতে পাচকের কাজ করত। তাঁর ছেলে ফারদিন তখন কলেজে পড়ত। ওঁরা আমাদের নিজ পরিবারের মতোই দেখভাল করতেন।’
মুম্বাইয়ে যখন ছিলেন, সেই দিনগুলো ভালোই উপভোগ করতেন রানু মণ্ডল। জ্যাকি শ্রফের ‘হিরো’ ছবিটি মুক্তির পরেই দেখতে গিয়েছিলেন। তারপর ‘ভেঙে যায় পরিবার’। চলে যেতে হয় নিজের রাজ্যে।
অনেক বছর পর আবার হাসির দিন ফিরেছে। রানুর মেয়ে স্বাতী রায় দেখা করেছেন। বলিউডে তাঁর অভিষেক হয়েছে।
‘আমি খুব খুশি, দারুণ লাগছে। এরই মধ্যে পাঁচ-ছয়টা গান রেকর্ড করেছি। মুম্বাইয়ের সংগীতজগতের মানুষেরা আমার জন্য অনেক কিছু করছে। তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ। সেই ঘর থেকে মুম্বাইয়ে প্লেনে করে নিয়ে আসাটা কঠিন ছিল। মুম্বাইয়ে একটা বাড়ি থাকলে ভালো হতো। কিন্তু এখনো এটা ভাবতে পারিনি। সৃষ্টিকর্তা এখানে আছেন,’ বলেন রানু মণ্ডল।
খবরে প্রকাশ, রানু মণ্ডলকে ৫৫ লাখ রুপি দামের একটি বাড়ি উপহার দিয়েছেন সুপারস্টার সালমান খান। সে খবর উড়িয়ে দিয়ে রানু বলেন, “সালমানের সঙ্গে আমার এখনো দেখাই হয়নি। তাঁর ‘তেরে নাম’ সিনেমাটি খুব ভালো।”
ছিলেন রেলস্টেশনের ভবঘুরে, ভিক্ষুক। যাঁকে কেউ একসময় পাত্তাও দেননি, আজ তিনি বড় তারকা। রাতারাতি বদলে গেছে রানু মণ্ডলের জীবন। বিভিন্ন প্রস্তাব পাচ্ছেন এ নারী। রানুর সুদিন ফিরেছে, তাতেই খুশি গানপ্রেমীরা।