মিশা-জায়েদের ইচ্ছায় ভোটার কমে, বাড়ে!
বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির ২০১৭-১৯ সালের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৬২৪ জন। আগামী ২৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে ২০১৯-২১ সালের নির্বাচন। ওই নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ৪৪৯ জন। বর্তমান কমিটি ১৮১ জনকে বাদ দেয় ভোটার তালিকা থেকে। তাঁদের সহযোগী সদস্য করা হয়। আবার একই সময়ে ভোটার তালিকায় যুক্ত হয় নতুন ছয়টি নাম।
ভোটার তালিকার এ অবস্থা নিয়ে মিশা সওদাগর-জায়েদ খান নেতৃত্বাধীন কমিটির বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ উঠেছে, শিল্পী নয় দাবি করে বেশ কয়েকজন পুরোনো শিল্পীর সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। তাঁদের অনেকেই রাজ্জাক-শাবানার সঙ্গেও বহু চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। আবার অনেক শিল্পীকে ভোটার বানানো হয়েছে সমিতির গঠনতন্ত্রকে অবমাননা করে।
২০১৭ সালের ৫ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে সমিতির দায়িত্ব নেয় মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান নেতৃত্বাধীন কমিটি।
গত নির্বাচনে শিল্পী সমিতির মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৬২৪ জন। মিশা সওদাগর-জায়েদ খান প্যানেল ক্ষমতা নেওয়ার পর এ তালিকা থেকে ১৮১ জন ভোটারের ভোটাধিকার বাদ দিয়ে কেবল সহযোগী সদস্য করা হয়েছে। তাঁরা এবার ভোট দেওয়ার অধিকার পাবেন না। অন্যদিকে সংগঠনের নিয়ম না মেনে নতুন করে বেশ কিছু শিল্পীকে ভোটার করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মিশা-জায়েদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন ভোটার তালিকা থেকে বাদপড়া একাধিক শিল্পী।
তবে মিশা-জায়েদের কমিটি ছাড়াও গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে একাধিক শিল্পীকে পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ২০১৬-১৭ মেয়াদের শাকিব-অমিত কমিটির নামেও। অনেকে দাবি করেন, মূলত ওই আমলেই এই অনিয়মের শুরু। যার বলি হয়েছেন অনেকেই মিশা-জায়েদের আমলে এসে।
২০১৭ সালের ৫ মে নির্বাচনের ঠিক আগে ৮২ জনকে নতুন পূর্ণ সদস্যপদ দিয়ে ভোটাধিকার দেয় শাকিব-অমিত কমিটি। এ অভিযোগ শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটিরও। অনেক সদস্যও ভোটাধিকারের দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন শাকিব-অমিত কমিটির দিকে।
আসন্ন নির্বাচনে শিল্পী সমিতির ২০১৯-২১ মেয়াদের নির্বাচনে মোট ভোটার হচ্ছে ৪৪৯ জন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর শিল্পী সমিতির কার্যালয়ের বোর্ডে ভোটারদের এ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।
অনেকেই অভিযোগ করেন, সততার অভাবেই সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ওই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন। তাঁরা স্বজনপ্রীতি দেখিয়ে অযোগ্যদের ভোটার করেছেন। কিন্তু যারা যোগ্য, তাদের ছাঁটাই করে দিয়েছেন।
গঠনতন্ত্রের যে ধারা নিয়ে কথা উঠেছে, সেটি শিল্পী সমিতির গঠনতন্ত্রের ৫(ক) ধারা। যেখানে স্পষ্ট করে লেখা আছে, বাংলাদেশে মুক্তি পাওয়া ন্যূনতম পাঁচটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অবিতর্কিত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করতে হবে। কার্যকরী পরিষদের আবেদন গৃহীত হলে তবেই তিনি পূর্ণ সদস্যপদ পাবেন। ভোটের অধিকার এবং কার্যকরী পরিষদের যেকোনো পদের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। আর আবেদনকারীকে অবশ্যই পেশাগতভাবে চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পী হতে হবে।
৫(ক) ধারা সামনে এনেই ১৮১ জন পূর্ণ সদস্যের ভোটাধিকার বাদ করে তাদের সহযোগী সদস্য করে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে আবার গঠনতন্ত্রের এ ধারার বাইরে গিয়ে বেশ কিছু শিল্পীকে সদস্য করা হয়েছে। যাদের অধিকাংশেরই পাঁচটি ছবি মুক্তি পায়নি।
এতসব অভিযোগের বিষয়ে মিশা সওদাগর বলেন, ‘ভোটার নিয়ে যা কিছু হয়েছে, তা আমাদের একক সিদ্ধান্ত নয়। কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও উপদেষ্টা পরিষদ মিলেই ভোটার তালিকা সংশোধন করা হয়েছে। তবে সংশোধনের এ তালিকায় কিছু আসল সদস্যও বাদ পড়েছে হয়তো। মানুষ তো ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। চাল বাছতে গেলে তো কিছু ভালো চালও পড়ে যায়। আমাদের বেলায়ও হয়তো এমন কিছু হয়েছে। এ জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। পরেরবার ক্ষমতায় এলে এগুলোর সংশোধন আনার চেষ্টা অবশ্যই করব।’
বিষয়টি নিয়ে আসন্ন নির্বাচনের প্রধান কমিশনার ইলিয়াস কাঞ্চন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণই কমিটির বিষয়। যদি অনিয়ম বা নীতির পতন ঘটেও থাকে, আমার কিছু বলার নেই। কারণ আমার কাজ নির্বাচনটা শেষ করা। শিল্পীদের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে, কেবল তারাই এর প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করতে পারে। এটা কমিটি ও শিল্পীদের বিষয়।’