জরায়ুমুখের ক্যানসার বেশ প্রচলিত একটি ক্যানসার। এই ক্যানসারের কারণ কী, এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৯৫২তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. সেলিনা আক্তার।

বর্তমানে তিনি শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে গাইনি বিভাগের ইউনিটপ্রধান ও অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

প্রশ্ন : জরায়ুমুখের ক্যানসার বলতে কী বোঝায়? কারা এই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন?

উত্তর : নারীর যে প্রজননতন্ত্র, আমরা যাকে বলি ইউটেরাস, এর শেষে একটি অংশ থাকে, যেটা যোনিপথে এসে খুলে। একে আমরা জরায়ুমুখ বলি। এটি বাইরে থেকেই দেখা যায়। সেই মুখের যে ক্যানসার, একে আমরা বলি জরায়ুমুখের ক্যানসার।

আমাদের দেশের মেয়েরা যেসব কারণে সবচেয়ে বেশি মারা যাচ্ছে, এর মধ্যে এটা অন্যতম প্রধান কারণ। সবচেয়ে বিপদ যেটি, প্রতিদিন বাংলাদেশে ১৮ জন মেয়ে মারা যাচ্ছে জরায়ুমুখের ক্যানসারের জন্য। আর পৃথিবীর কোথাও না কোথাও প্রতি দুই মিনিটে একজন মেয়ে মারা যাচ্ছে জরায়ুমুখের ক্যানসারের জন্য। এটি এতটা ঝুঁকিপ্রবণ।

প্রশ্ন : যেকোনো ক্যানসারেই তো কিছু ঝুঁকির বিষয় রয়েছে। জরায়ুমুখের ক্যানসারের ঝুঁকির কারণ কী কী হয়ে থাকে?

উত্তর : আমাদের দেশে কিন্তু ঝুঁকিগুলো বেশি। যাদের অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়, তাদের জরায়ুমুখের ক্যানসারের আশঙ্কা থাকে। শুধু বিয়েই নয়, বিয়ের পর ঘন ঘন বাচ্চা হচ্ছে, একের বেশি বাচ্চা হচ্ছে, অনেক সময় পরিবার পরিকল্পনা নিচ্ছে না, অনেকে আবার ধূমপান করে, নারীদের মধ্যে অনেকে ধূমপান করে, গ্রামে আমরা দেখি যে তামাক খাচ্ছে, বিড়ি খাচ্ছে—এগুলো হলো জরায়ুমুখের ক্যানসারের কারণ। আরো কিছু কারণ রয়েছে, যেমন—এসটিডি। একে আমরা যৌনবাহিত রোগ বলি। দুঃখের বিষয় হলো, যৌনবাহিত রোগ নিয়ে মেয়েরা চিকিৎসকের কাছে আসে না। অনেক দিন ধরে যখন যৌনবাহিত রোগ থাকছে, সেখান থেকে পরিবর্তিত হয়ে জরায়ুমুখে ক্যানসার হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের মেয়েরা সাধারণত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আসে না।

আরেকটি বিষয় রয়েছে, যদি কোনো পুরুষ দুটি বিয়ে করে, তার প্রথম স্ত্রী যদি জরায়ুমুখের ক্যানসারে মারা যায়, দ্বিতীয় যে বিয়ে করল সেই নারীর কিন্তু ক্যানসারের ঝুঁকি রয়ে যাচ্ছে। কারণ হলো, এসপিভি নামে একটি ভাইরাস রয়েছে, যাকে আমরা বলি হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস, আমরা বলি ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ জরায়ুমুখের ক্যানসারের জন্য এই ভাইরাস দায়ী। এটি প্রধানত যৌনসঙ্গমের মাধ্যমে ছড়ায়। এ জন্য এই বিষয়গুলো একটু খেয়াল রাখতে হবে।