হেডনেক ক্যানসার : ৭০ ভাগ রোগী দেরিতে চিকিৎসকের কাছে যায়
হেডনেক ক্যানসার বেশ প্রচলিত একটি ক্যানসার। মুখের ভেতর ঘা, মুখের কোথাও মাংসের বৃদ্ধি, ফোলা ইত্যাদি হেডনেক ক্যানসারের লক্ষণ। সাধারণত দেখা যায়, ৬০ থেকে ৭০ ভাগ রোগী এই রোগে চিকিৎসকের কাছে দেরিতে যায় বা দেরি করে চিকিৎসা নেয়। এতে রোগ অনেক জটিল হয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩১৫৩তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী ও অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান মোল্লা।
ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অটোল্যারিঙ্গোলজি অ্যান্ড হেডনেক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত। অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান মোল্লা বর্তমানে আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ওরাল ও মেক্সিলোফেসিয়াল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
এনটিভি : আমাদের দেশে রোগীরা কোন সময়ে বেশি আসে? এর মূল কারণ কী?
অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান : আমাদের দেশে বেশি দেখা যাচ্ছে অ্যাডভান্সড কারসিনোমা। স্টেজ তিন বা চারের দিকে বেশি আসে। এর মূল কারণ হলো আমাদের এই রোগ সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব। প্রাথমিকভাবে লক্ষণগুলো দেখতে দেখা যায় বেশি ব্যথা হয় না। সামান্য ঘা, সাদামতো লালচে ঘা। চিকিৎসকরা হয়তো না বুঝে ভিটামিন দিচ্ছে, অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছে। অথবা এমনও হতে পারে কোনো গাছের ওষুধ খাচ্ছে বা হোমিওপ্যাথিক ওষুধ খাচ্ছে। অনেক সময় বলে যে গ্যারান্টি সহকারে চিকিৎসা করিয়ে দিই। এটা করতে করতে দেখা যায় অনেক অগ্রবর্তী পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এই অবস্থায় যখন আসে, তখন দেখা যায় রোগীরও কষ্ট হয়, সার্জন বা চিকিৎসকেরও কষ্ট হয়।
এনটিভি : রোগীদের মধ্যে অসচেতনতা থেকে উত্তরণের উপায় কী?
ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী : আমাদের বেশিরভাগ রোগী ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে দেরি করে আসে। ক্যানসারকে আমরা সাধারণত চারটা গ্রেডে ভাগ করি। স্টেজ এক থেকে চার। স্টেজ এককে আমরা প্রাথমিক পর্যায় মনে করি। স্টেজ তিন ও চার অগ্রবর্তী পর্যায়।
আমাদের দেশে দেরি করে আসার যে কারণ এর মধ্যে মূল হলো অসচেতনতা। প্রথমদিকে তারা লক্ষণগুলোকে অনেক এড়িয়ে যান। পরে যখন চিকিৎসকের কাছে যায়, ধরা পড়ার পরই বোঝা যায় এটি অগ্রবর্তী ক্যানসার।
আরেকটি বিষয় হলো হয়তো রোগ নির্ণয় হলো প্রাথমিক পর্যায়ে। তবে সম্পূর্ণ চিকিৎসায় আসতে আসতে সময় লাগল। এই যে সময়টা নষ্ট হয়, এটি একটি বিষয়। সেটা আর্থিক অসংগতির কারণে হতে পারে বা বোঝার ভুলের কারণে হতে পারে।
এনটিভি : এটাও কি হতে পারে যে আমাদের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে রোগী অনেক?
ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী : রোগীর তুলনায় আমাদের চিকিৎসা দেয়ার যে সুবিধা সেটি অনেক কম। তবে রোগীর রোগ নির্ণয় হতে হতে অনেক দেরি হয়ে যায়। অগ্রবর্তী পর্যায়ে গেলে দেখা যায় যে সার্জারি ছাড়া হয় না। সার্জারি করতে হয়, রেডিও থেরাপি দিতে হয়, সঙ্গে হয়তো অনেক সময় ক্যামোথেরাপি দিতে হয়। রোগীর হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়। সেই চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা রোগীর তুলনায় অত্যন্ত কম। এতে কিছু ক্যানসার চিকিৎসার আওতার বাইরে চলে যায়।
তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হেডনেক ক্যানসারকে আমরা প্রথমে প্রতিরোধ করতে পারি। এটা প্রতিরোধযোগ্য ক্যানসার। দ্বিতীয়ত প্রাথমিক পর্যায়ে যদি রোগ নির্ণয় করা যায় এটি নিরায়মযোগ্য ক্যানসার। তবে যখন সে অগ্রবর্তী পর্যায়ে আসছে, তার যে চিকিৎসা সেটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল, সময় সাপেক্ষ। আমরা বলি যে সার্জারিটা করা লাগে এটি একটি মিউটিলেটিং সার্জারি। দেখা যায়, চেহারার স্বাভাবিকত্ব থাকল না। এ ধরনের চিকিৎসা করতে হয়। এরপর ফলাফলও খারাপ হয়ে যায়।
এনটিভি : এই ধরনের ক্যানসারের রোগী আসলে যেন দ্রুত সঠিক সেন্টারে পাঠায়, সেই জন্য তরুণ চিকিৎসকদের প্রতি পরামর্শ কী?
অধ্যাপক ডা. মতিউর রহমান : গ্রামে গঞ্জে যে তরুণ চিকিৎসকরা কাজ করে থাকে, সেটা ইএনটি বা অন্য চিকিৎসক হোক,মুখটা দেখার পর, মুখ গহ্বরটা দেখতে হবে। যদি সেখানে কোনো বৃদ্ধি, ঘা বা ফোলা দেখা যায়, এটা দুই তিন সপ্তাহে কোনো পরিবর্তন না হয়, ওরাল ক্যানসারের লক্ষণের মতো মনে হয়,তাহলে ডাক্তার বায়োপসি করে দেখতে পারেন। বায়োপসি করে বলতে পারেন, ‘বসে না থেকে,সঠিক সেন্টারে যান’। এর পাশাপাশি প্রতিরোধও করতে পারে। সেই রোগী যদি ধূমপান করে থাকে, পান খেয়ে থাকে, তাকে বলতে হবে এগুলো থেকে বিরত থাকার জন্য। তার যদি দাঁত ভাঙ্গা থাকে, বলবেন, ‘দাঁত ঠিক করে নাও’। অতএব প্রাইমারি যে চিকিৎসক সে অনেক ভূমিকা রাখতে পারে। সহজে রোগীকে গাইড করে প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।