ডেঙ্গুতে সর্দি-কাশিও হতে পারে
ডেঙ্গু জ্বর আমাদের দেশে প্রচলিত একটি রোগ হলেও এ বছর ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব বেশি। এর কারণ কী?
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদ্নি অনুষ্ঠানের ৩১৮৪তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : এ বছর ডেঙ্গু জ্বর আতঙ্করূপে দেখা গেছে। এরই মধ্যে ১২ জন মারা গেছে। ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আতঙ্কের কারণ কী? কেন এই আতঙ্ক আবার ফিরে এলো?
উত্তর : সচরাচর যে ডেঙ্গু জ্বর পাওয়া যায়, এটি কীভাবে চলছে, এর ধারাটা ধারণা করা যায়। এবারের জ্বরকে ঠিক আগে থেকে ধারণা করা যাচ্ছে না। এটি এক নম্বর। গত পরশু দিন আমি একজন রোগী পেলাম, তার মাত্র ১২ ঘণ্টার জ্বর ছিল। ডেঙ্গুতে আমরা সাধারণত বলি দুই থেকে সাত দিন জ্বর থাকে। সাধারণত আমরা চার দিনে জ্বরটা পাই। তার মাত্র ১২ ঘণ্টার জ্বর ছিল। সেই ছেলেটা হঠাৎ করে খারাপ হয়ে গেল। এর মানে আমরা তো সচরাচর ১২ ঘণ্টার জ্বর চিন্তাও করি না। তবে তার ডেঙ্গু। এর মানে এই যে জিনিসগুলো হচ্ছে, তা ধারণা করা যাচ্ছে না। দুই নম্বর হলো, আমরা আগে বলতাম, ডেঙ্গু হলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন, প্যারাসিটামল খাবেন। এটা সাধারণত নিজে নিজেই সারে। কিছু কিছু ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষণ রয়েছে। এই জিনিসগুলো সম্পর্কে কিন্তু আমাদের ধারণা নেই। তার মানে যে রোগীগুলো মারা যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে একটি ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষণ ছিল। নাম্বার ওয়ান। অথবা তার আরো কিছু জটিল রোগ ছিল। আর আরেকটি অবস্থা রয়েছে, যেটি একেবারেই ধারণা করা যায় না, সেটি হলো এক্সপেনডেন্ট ডেঙ্গু শক সিনড্রম। রোগীগুলো মারা গেছে, তারও কারো না কারো কো মরবিডিটি অবস্থা ছিল। অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এ রকম আরো কিছু জটিল রোগ ছিল। যেমন : কিডনির রোগ, হার্টের রোগ ইত্যাদি। অথবা যেই জিনিসগুলো হয়েছে, সেগুলো ফলোআপ করা সেভাবে হয়নি। রোগীগুলো যদি ভালোভাবে ফলোআপে থাকে, আশা করি মৃত্যুহার অনেকাংশে কমে যাবে।
প্রশ্ন : এবার মৃত্যুঝুঁকি এত বেড়েছে কেন?
উত্তর : ভাইরাসগুলো তার চরিত্র পরিবর্তন করতে থাকে। বিশেষ করে ফ্লু ভাইরাস যেগুলো রয়েছে, আমরা বলি বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, সেগুলো কিন্তু প্রতিবারই একটু একটু পরিবর্তন হচ্ছে। ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে আমরা চারটা স্টেরিওটাইপ (ধরন) বলি।
ডেঙ্গু যদি প্রথমবার আক্রান্ত করে এবং এটি যদি তরুণ বয়সে হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা আসলে এসিমটোমেটিক (লক্ষণ অপ্রকাশিত) থাকতে পারে। জ্বরও থাকে না, এ রকমও হতে পারে। দ্বিতীয় হলো টিপিক্যাল ডেঙ্গু। আমরা যাকে বলি ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু। জ্বর আসছে, তবে আপনার সর্দি থাকতে পারে। কাশি থাকতে পারে, পেটে একটু ব্যথা থাকতে পারে। কারো কারো পায়খানা কষাও হয়। এর মানে এগুলো থেকে আমরা অন্য ফ্লু থেকে আলাদা করতে পারি না। যখন ডেঙ্গু হয়, আমরা সবাই কিন্তু বুঝতে পারি যে এটা ডেঙ্গু। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এবার কেন হচ্ছে, গতবার কেন হয় এত বেশি হয়নি। গতবার কিন্তু চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ ছিল বেশি। গতবার ডেঙ্গুটা কম ছিল। ছিলই না বলতে গেলে। এবার আমরা চিকুনগুনিয়া পাচ্ছি, তবে কম। মাঝেমধ্যে হঠাৎ একটি-দুটো পাচ্ছি। তবে ডেঙ্গু এবার অনেক আকারে। পত্রিকায় যতটুকু আসছে, তার তুলনায় আরো বেশি। কারণ, ডেঙ্গুটা একটি গুরুত্ব দেওয়ার মতো রোগ। গুরুত্ব দিতে হবে। তবে এই গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি কখন করব জানি না, করা হয় না আসলে। এবার যেগুলো হচ্ছে অধিকাংশের হচ্ছে দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার বা চতুর্থবার। এর মানে ডেঙ্গুর যখন একটি সংক্রমণ হয়, তার আগে একটি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। ওই অ্যান্টিবডিটা ওই জীবাণু থেকে আজীবনের জন্য সুরক্ষা দেবে। তবে অন্য যে জীবাণুগুলো তার বিপরীতে সে সুরক্ষা দিতে পারে না।
হেমোরেজিক ফিভারের মধ্যে একটি রক্তপাত নিয়ে আসতে পারে। আরেকটি সরাসরি শকে চলে যেতে পারে। এগুলো অস্থিতিশীল। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুতে রক্তপাত হয়, তবে রোগী মারা যায় না। এর মানে হেমোরেজিক ফিভারের মধ্যে যেগুলো শকে চলে যাচ্ছে, পাশাপাশি এক্সপেনডেট ডেঙ্গু শক সিনড্রম, যেগুলো সেগুলো হলো অস্থিতিশীল। তারা মারা যেতে পারে। তাদের ঝুঁকি অনেক।