চোখে কম দেখার কারণ, করণীয়
বিভিন্ন সমস্যার কারণে মানুষ চোখে কম দেখতে পারে। চোখে কম দেখার কারণ ও করণীয় বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩২০৯তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. শাহীন রেজা চৌধুরী।
ডা. শাহীন রেজা চৌধুরী বর্তমানে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : চোখে কম দেখছে, সেটি আপনারা বোঝেন কীভাবে? তখন কী করেন?
উত্তর : কোনো একটি লোক এসে যখন বলে আমি চোখে কম দেখি, তখন আমরা দুটো জিনিস চিন্তা করি। একটি হলো চশমা জনিত কারণ অথবা এই ক্ষেত্রে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। যেমন কর্নিয়াতে ঘা, ছানি পড়া, রেটিনাতে কোনো সমস্যা। এটাকে আলাদাভাবে বোঝার জন্য চোখের চিকিৎসকদের কাছে পিনহোল নামে একটি যন্ত্র রয়েছে, চশমা যদি ফ্রেমে লাগিয়ে দেখি সে দেখতে পাচ্ছে, তখন বুঝি চশমা দিলে সে ভালো থাকবে। যদি এটি দিয়ে ভালো না দেখে, তখন বুঝতে হবে চশমা দিয়ে কোনো উন্নতি হবে। অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। এই কারণ যদি ছোটবেলায় হয়, পাঁচ বছর, ছয় বছরের আগে যদি হয় এবং চশমা ছাড়া অন্য সমস্যাগুলো রয়েছে এর ভেতরে- যদি এই সমস্যাটা দূর না করে, তাহলে চোখ একটি সময় নষ্ট হয়ে যাবে। যেই চোখটিতে কম দেখে সেটি অলস হয়ে যাবে। অলস হলে দুটো চোখ সমান দেখবে না এবং এটা আজীবনের জন্য এমন রয়ে যাবে।
এতে তার সমস্যা কী? যদি চশমা লাগে সে পড়ল না, অন্য রোগ রয়েছে ঠিক করল না, তখন অলস চোখের সমস্যা হবে।
অলস চোখ এমন একটি চোখ যেটি বাইরে থেকে দেখতে সুন্দর, ভেতরেও সুন্দর, অথচ সে দেখছে না। চিকিৎসকও কিছু খুঁজে পায় না, রোগীও বলে চোখে দেখি না।
আর এক চোখে যেহেতু ভালো দেখে তাই সে নিজেই বুঝবে না। তাহলে আমাদের উচিত কী? যদি পাঁচ বছরের আগে কারো চোখ ট্যারা থাকে, তাহলে বুঝতে হবে সে চোখে কম দেখে। ট্যারা চোখ কখনো ভালো দেখে না। এটা প্রথমে মনে রাখতে হবে। ট্যারা চোখ থাকলে, ছয় বছরের আগে একে ঠিক করতে হবে। ছয় থেকে আট বছরে চিকিৎসা করলে সে স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে পারে। আট বছর পার হয়ে গেলে তার আর ভালো দেখার কোনো সুযোগ নেই।
অনেকে দেখবেন বাঁকা করে দেখে। তার তো সোজা হয়ে দেখার কথা,তাহলে বাঁকা হয়ে দেখে কেন? কারণ, এটি একটি চশমাজনিত সমস্যা। অনেক শিশু টিভির কাছে গিয়ে টিভি দেখে, সোফা থেকে একদম টিভির কাছে গিয়ে হাজির। এর মানে এখান থেকে বসলে সে ভালো দেখছে না। একে ঠিক করতে হবে। না হলে চশমাজনিত কারণে ট্যারা হতে পারে, ট্যারার কারণে সমস্যা হতে পারে।
যাই করতে হবে ছয় বছরের আগে। ছানি পড়েছে ছয় বছরের আগে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। চোখের পাতা নেমে গেল, একেবারে বন্ধ হয়ে গেল, ছয় বছরের আগে ঠিক করতে হবে। না হলে কী হবে? চোখটা ট্যারা হয়ে যাবে। সৌন্দর্য হারাবে। এরপর কী হয়? ছেলে বা মেয়ের যখন বিয়ের বয়স হয়, তখন প্রশ্নটা আসে। আগে আসত না। আগে তো মনে করত এটা লক্ষ্মী ট্যারা। লক্ষ্মী বউ, লক্ষ্মী জামাই দুটোই মনে করত। এখন তো এটি একটি বড় সমস্যা। তাই এটা জানা উচিত যে ছয় বছরেই আগে হোক, অস্ত্রোপচার করে হোক, যেটা চিকিৎসা লাগে ঠিক করতে হবে। আর বড় বয়সে যদি অস্ত্রোপচার করা হয়, তাহলে দেখবে না, তবে চোখটা সোজা হবে।
অলস চোখের রোগী কিন্তু ডাক্তার হলেও সার্জন হতে পারবে না, মাইক্রোস্কোপে যে কাজ করা লাগে সেটা পারবে না, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারবে না, ইয়ার ফোর্সে যেতে পারবে না। অনেক জায়গায় তার বাধা তৈরি হবে। সেই জন্য মা-বাবাকে সচেতন হতে হবে। সরকারকে সচেতন হতে হবে।