ফেইসাল পালসি : মুখ বেঁকে যাওয়া রোগ
ফেইসাল পালসি এক ধরনের স্নায়ুরোগ, যেখানে ফেইসাল করোটিক স্নায়ুর অসুস্থতায় মুখের একদিক আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে অবশ হয়ে মুখ অন্যদিকে বেকে যায়, যাতে চেহারার বিকৃতি, চোখের সমস্যা ও মুখের স্বাদের ব্যাঘাত ঘটে।
রোগী সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন থাকে চেহারা বিকৃতির কারণে। তা ছাড়া প্রবীণদের ক্ষেত্রে হঠাৎ করে মুখের পক্ষাঘাতে অনেকে স্ট্রোক অর্থাৎ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা রক্ত জমাট হওয়া ভেবে বা মুখের অবস্থা স্বাভাবিক হবে কি না, এসব দুশ্চিন্তায় বেশ ভেঙে পড়েন।
ফেইসাল করোটিক স্নায়ু একটি গুরুত্বপূর্ণ মিশ্র স্নায়ু, যার সঠিক কর্মক্ষমতার ওপর নির্ভর করে মুখের সৌন্দর্য, আবেগ, উচ্ছ্বাসসহ মুখের বিভিন্ন ধরনের অভিব্যক্তির প্রকাশ। সঠিক ও স্পষ্টভাবে কথা বলা, মুখের ভেতরের লালাগ্রন্থি ও চোখের অশ্রুগ্রুন্থির যথাযথ নিঃসরণ এবং জিহ্বার মাধ্যমে স্বাদ গ্রহণ ইত্যাদি।
করোটির মধ্যে কানের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে রয়েছে ফেইসাল স্নায়ুর সরাসরি সম্পর্ক। তাই কানের প্রদাহ, আঘাত, টিউমার ইত্যাদির জটিলতায় এ স্নায়ু সহজে আক্রান্ত হয়ে মুখ বেঁকে যেতে পারে। এ কারণে মুখের পক্ষাঘাতকে কানের রোগ হিসেবে ধরা হয়। যেখানে ৯০ শতাংশেরও অধিক ক্ষেত্রে কানের বিভিন্ন সমস্যার কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগ যেকোনো বয়সের পুরুষ বা নারীর ক্ষেত্রে হতে পারে। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। অনেক সময় রোগী সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে, তার মুখ একদিকে বেঁকে গেছে বা সচেতন অবস্থায় বুঝতে পারে মুখের একদিকে অস্বস্তি বা দুর্বল লাগছে, যা আস্তে আস্তে অবশ হয়ে বাঁকা হয়ে যায়।
অনেক কারণে এ রোগ হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় অজ্ঞাত কারণে, যাকে বলা হয় বেলস পালসি।
মুখের পক্ষাঘাতের কারণ
ফেইসাল পালসি দুটি কারণে হয়ে থাকে। যেমন :
১. কেন্দ্রীয় কারণ
যেখানে ফেইসাল স্নায়ু মস্তিষ্কে উৎপত্তি স্থানে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যেমন : মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, রক্ত জমাট বাধা, টিউমার, ফোড়া, মাল্টিপল স্কে¬রোসিস, পলিনিউরাইটিস ইত্যাদি। যেখানে মুখের নিচের অংশ সাধারণত আক্রান্ত হতে থাকে।
২. প্রান্তিক কারণ
সাধারণত দেখা যায়, যেখানে ফেইসাল স্নায়ু মস্তিষ্কের বাইরে, করোটির ভেতরে, টেমপোরাল অস্থির মধ্যে এবং করোটির বাইরে আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ অজ্ঞাত কারণে হয়ে থাকে।
অন্যান্য কারণ
করোটির মধ্যে : একুয়াস্টিক নিউরোমা, শরীরের অন্যান্য স্থান থেকে স্থানান্তরিত ক্যানসার, মেনিনজাইটিস।
টেমপোরাল অস্থির মধ্যে : মধ্যকর্ণের তীব্র প্রদাহ, দীর্ঘস্থায়ী কানের প্রদাহ (কলিস্টিওটোমা), আঘাত (দুর্ঘটনাজনিত বা অপারেশনের ফলে), ভাইরাসের সংক্রমণ, বেলস পালসি, টিউমার।
করোটির বাইরে : প্যারটিড লালাগ্রন্থির টিউমার, আঘাত।
শারীরিক রোগের কারণেও মুখ বেঁকে যেতে পারে, যেমন বহুমূত্র, উচ্চ রক্তচাপ, শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তির অভাবজনিত কারণ এইডস, সারকয়ডসিস ইত্যাদি।
রোগের উপসর্গ
এটি নির্ভর করে রোগের কারণ ও স্নায়ুর ক্ষতের ব্যাপ্তির ওপর।
- সাধারণভাবে মুখ একদিকে বেঁকে যায়, মুখের আক্রান্ত দিকের
- চোখ বন্ধ করতে সমস্যা হয়।
- অশ্রু ও লালা নিঃসরণ কমে যায়।
- মুখে খাদ্য জমে থাকে।
- জিহ্বায় স্বাদ লোপ পায়।
- কথা বলতে সমস্যা হয়।
- কানে ব্যথা, মুখ দিয়ে লালা গড়ানো, পানাহারে সমস্যা হয়।
-কদাচিৎ বধিরতা, মাথাঘোরা, উচ্চ শব্দের প্রভাবে কানে অস্বস্তিবোধ হয় এবং বহিঃকর্ণের ত্বকের ওপর ছোট ছোট ফোসকা পড়ে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।