বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বর্তমান পরিস্থিতি কী?
আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য, ‘সমতা ও সংহতি নির্ভর সার্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা’।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপনের প্রেক্ষাপট ও বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বর্তমান পরিস্থিতি কেমন, এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৪০০তম পর্বে আলোচনা করেছেন অধ্যাপক ডা. মো. মোজাহেরুল হক। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা।
প্রশ্ন : বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস আজ। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য কী? দিবসটিকে যে এত গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হচ্ছে, এর কারণ কী?
উত্তর : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিজেরাও দিবসটি পালন করে এবং সারা বিশ্বেও দিবসটি পালিত হয়। এই দিনটির একটি প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে প্রতিবছরই। বিভিন্ন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কিন্তু এটি করা হয়। এখন কথা হচ্ছে, গত বছরও আমাদের সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবাটা প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল। এ বছরও এই একই প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। একে গতবারও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এবারও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বলছি কেন? আপনি জানেন, আমরা সানটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য) অনেকখানি অর্জন করেছি বাংলাদেশে। বিশ্বের অনেক দেশ রয়েছে, যারা সুন্দরভাবে সব লক্ষ্যই অর্জন করেছে। আমরা অর্জন করেছি এখন এটি প্রসারিত করতে হবে। জনগণের স্বাস্থ্যের মান উন্নয়ন করতে হবে। এমডিজি এরপর এখন এসটিজি এসেছে। এমডিজির লক্ষ্যগুলো আমরা অনেকখানি অর্জন করেছি। তিন নম্বর গোল যেটি রয়েছে সেটিই কিন্তু ইউনিভার্সেল হেলথ কভারেজ। মানে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা।
প্রশ্ন : সার্বজনীন মানে কী?
উত্তর : স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা, সবার জন্য, সবখানে এবং সবসময়। মানে কোনো ভেদাভেদ যেন না হয়। আর সবার জন্য এটি প্রাপ্য। এখন সবার জন্য প্রাপ্য হবে, এই বিষয়টি কী। এখানে কিন্তু একটি মানসম্মত চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে। প্রত্যেকের জন্য একটি মানসম্মত চিকিৎসা সব জায়গায় ও সব সময়। আমরা যদি এটি অর্জন করতে চাই, তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, এখন যেমন রয়েছে, এটি আমরা অনেকখানি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব। তবে খুব ভালো কিছু অর্জন করতে হলে, আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে।
প্রশ্ন : স্বাস্থ্য সবার জন্য, সব জায়গায় সমান- এর মানে কী? ঢাকায় একটি বড় বিশেষায়িত হাসপাতালে যে চিকিৎসা দরকার, সেটিই কি জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে থাকা দরকার?
উত্তর : না, বিষয়টি আমরা ঠিক সেভাবে দেখব না। আমাদের পর্যায়গুলো যদি আমরা দেখি, তাহলে আমরা প্রথম পর্যায়টা দেখি, কমিউনিটি ক্লিনিক। এরপর ইউনিউয়ন সাব সেন্টার, ইউনিয়ন সেন্টার। এরপর উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স। এরপর উপজেলার পরে বিভাগীয় হাসপাতাল। বিভাগীয় হাসপাতালের পরে বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো রয়েছে। যেমন : আমাদের বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ইউনিভার্সিটি রয়েছে। আমাদের ক্যানসার হাসপাতাল রয়েছে। আমাদের হৃদরোগ ইনস্টিটিউট রয়েছে। নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট রয়েছে। সুতরাং এগুলো সব বিশেষায়িত হাসপাতাল। পাশাপাশি আমাদের যে মেডিকেল কলেজগুলো রয়েছে, এগুলোও বিশেষায়িত হাসপাতাল। কারণ, বিশেষজ্ঞরা প্রতিটি বিভাগে থাকে।
প্রশ্ন : আমাদের দেশ এই সাবর্জনীন স্বাস্থ্যসেবার কোন পর্যায়ে রয়েছে?
উত্তর : এখন বাংলাদেশের যদি হেলথ ইনফ্রাসট্রাকচারের (স্বাস্থ্য পরিকাঠামো) কথা চিন্তা করা হয়, এটি একটি ভালো পর্যায় রয়েছে পারিকাঠামোগত দিক থেকে। যেমন আমি পর্যায়গুলো বললাম, একেবারে দোর গোড়া থেকে শুরু করে কমিউনিটি পর্যায় থেকে একেবারে উপরের পর্যায় পর্যন্ত, আমাদের কিন্তু একটি পদ্ধতি রয়েছে। প্রশ্নটা হলো, এই যে ব্যবস্থাটা রয়েছে, এটা কার্যকর কতখানি। যেমন আমরা দেখি, আমাদের উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে এখন বিশেষজ্ঞরা থাকেন। নয়জনের মতো বিশেষজ্ঞ থাকেন। সেখানে প্রায় ৩৫ জনের মতো অবস্থা রয়েছে। ৫০ থেকে ১০০ শয্যার হাসপাতাল রয়েছে। এখন কথা হলো, এটি কতখানি কার্যকরভাবে রয়েছে। থাকা এক জিনিস আর কার্যকরভাবে থাকা এক জিনিস। পরিকাঠামোগত থাকা এক জিনিস, আর সেটি কার্যকরভাবে এগিয়ে নেওয়া আরেক জিনিস।
প্রশ্ন : আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের এই অবস্থানটিতে আসলে আমরা কোন পর্যায়ে রয়েছি?
উত্তর : এ রকম পর্যায় কিন্তু আমাদের পাশের দেশেও রয়েছে। ভারতেও রয়েছে, নেপালেও রয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো কতখানি কার্যকরীভাবে রয়েছে। মানে সত্যিকারভাবে কার্যকর অবস্থায় রয়েছে কি না। এই জায়গায় আমরা কিন্তু বেশ পিছিয়ে রয়েছি। সেই জায়গায় আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে থাইল্যান্ড। সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে। তাদের তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে একেবারে উঁচু পর্যায় পর্যন্ত, তাদের একটি কার্যকর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে। যখন আমি কার্যকর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বলব, তখনই সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থাটা আসে। এখন আমার পঞ্চগড়ের একজন রোগী বা টেকনাফের একজন রোগী, তাঁর যেই চিকিৎসাটা দরকার সেটি তিনি পাচ্ছেন কি না,সেটি দেখতে হবে। এখন কথা হলো, পঞ্চগড়ে সেই হাসপাতাল নেই। একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে কিন্তু তাদের একটি কার্যকর স্বাস্থ্যব্যবস্থা নেই। যখন আমি কার্যকর স্বাস্থ্যব্যবস্থা বলব, তখনই সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কথা আসে। এখন আমার পঞ্চগড়ের একজন রোগী বা টেকনাফের একজন রোগী, তার যেই চিকিৎসাটা দরকার, সেই চিকিৎসাটা তিনি সেখানে পাচ্ছেন কি না, দেখতে হবে। এখন কথা হলো,পঞ্চগড়ে তো টারশিয়ারি (তৃতীয় মান) হাসপাতাল নেই, বিশেষায়িত হাসপাতালও নেই। এরপর বিভাগীয় হাসপাতালে যেসব সুযোগ সুবিধা রয়েছে, পঞ্চগড় যেহেতু বিভাগ সেই হিসেবে রয়েছে। এখন কমিউনিটি ক্লিনিক যখন প্রথম তার কাছে গেল, তখন সেখান থেকে কার্যকরী রেফারেল সিস্টেম লাগবে। বিষয়টির আমরা গুরুত্ব দেব এই জন্য যে কার্যকর না হলে রেফারেল সিস্টেম কাগজে- কলমে থাকতে পারে। কিন্তু সেই রোগী যিনি পঞ্চগড়ের গ্রামাঞ্চলে ছিলেন, তার যে টারশিয়ারি হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধাটা দরকার, সেটি তিনি কোথায় পাবেন। সেটা পেতে হলে আমাদের দেশে যেটি করা দরকার, সেটি হলো রেফারেল পদ্ধতি। মানে তার যেই পর্যায়ে রোগ নির্ণয় হোক না কেন, সে যেন তার সেই বিষয়ে চিকিৎসার জন্য, বিশেষায়িত হাসপাতাল, যেটা কি না কেন্দ্রীয় পর্যায়ে রয়েছে, সেখানে আসে। এই পদ্ধতিটা থাকলেই তার চিকিৎসা সেবাটা আমরা নিশ্চিত করতে পারি।
প্রশ্ন : ব্যয়বহুল চিকিৎসার ক্ষেত্রে দরিদ্র জনগোষ্ঠীও যেন চিকিৎসা পায়- সেই ক্ষেত্রে আমরা কোন অবস্থায় রয়েছি?
উত্তর : এখন আপনি একটি ক্যানসারের উদাহরণ দিয়েছেন। ক্যানসার চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। কেবল ক্যানসার নয়, অনেকগুলো নন কমিউনিকেবল (অসংক্রামক) রোগ রয়েছে, অনেকগুলো কমিউনিকেবল (সংক্রামক) রোগও রয়েছে। এই জিনিসগুলোর চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এখন দেখার বিষয়, জনগণ এই টাকা ব্যয় করে চিকিৎসা নিতে পারে কি না। আমাকে ক্যানসারের চিকিৎসার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, আমি বলব, ক্যানসারের চিকিৎসা ব্যয় মেটানোর মতো অবস্থা আমাদের দেশের রোগীদের অনেক কম।
ক্যানসার তো প্রচুর হচ্ছে বাংলাদেশে। তার নানা কারণ রয়েছে। এখন কথা হলো, তারা তো ব্যয়বহুল চিকিৎসাটা করতে পারেন। তার জন্য কী ব্যবস্থা? আমরা নিশ্চিত করতে চাচ্ছি, সবার জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা।
এই জায়গায় ইনসুরেন্সের কথা বলেছেন, সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হেলথ ইনসুরেন্সটা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকেই রয়েছে। এটাতে যেটা সুবিধা সেটা হলো, যিনি প্রচেষ্টা করতে পারেন না, তার জন্যও, যিনি করতে পারেন, তার জন্যও। এখন যিনি প্রচেষ্টা করতে পারেন না তার জন্য রাষ্ট্র ভর্তুকি দেয়। তার ইনস্যুরেন্স প্রিমিয়ামটা হয়তো তাকে কম করে দেওয়া হবে, যিনি হত দরিদ্র বা দরিদ্র তার জন্য, আর যিনি প্রচেষ্টা করতে পারবেন তার জন্য এক রকম থাকবে।
আরেকটি হতে পারে, যেটি সরকার পুরোটাই দিতে পারে। এটি একটি পদ্ধতি হতে পারে। তাহলে তার চিকিৎসাটা নিশ্চিত করা যায়। আমি একটি উদাহরণ দেই, নেপালে যখনই ক্যানসার ধরা পড়ে, তখন রোগীকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়। এটা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সমমানের। সুতরাং এই পদ্ধতিটা কিন্তু ক্যানসার রোগীদের খুবই সাহায্য করে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগকে কী করে আরো আধুনিক, আরো সার্বজনীন করা যায়?
উত্তর : আমি একটু আগের প্রসঙ্গটায় আসি, ব্যয়ের বিষয়টা। আপনি শুনে আশ্চর্য হবেন, প্রতি বছর ৬৫ লাখ লোক গরিব হয়ে যায়, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যয় মেটাতে গিয়ে, শুধু স্বাস্থ্যব্যয়। অন্য কারণেও হয়। এর একটি প্রভাব কিন্তু সেসব পরিবারের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যের ওপরও পড়ে। ব্যয়ের একটি বড় অংশ শুধু স্বাস্থ্যের জন্য করতে হয়। এই জিনিসটি দিয়ে যদি আমরা আরো একটি জিনিস দেখি, ৬৭ শতাংশ অর্থ কিন্তু আমাদের পকেট থেকে ব্যয় হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেটি বলছে, ৩২ ভাগের বেশি হলে, এটি স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। সুতরাং আমাদের স্বাস্থ্য ব্যয়ের এই জিনিসটা যেমন কমিয়ে আনতে হবে, পাশাপাশি আমরা দারিদ্র্য দূরীকরণ বলি, সেখানেও এটি দিতে হবে। স্বাস্থ্য বাংলাদেশে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এখন প্রশ্ন আসছে, আমরা মানসম্মত চিকিৎসা দিতে গেলে, আমাদের কী নিশ্চিত করতে হবে। আপনি যেটি বললেন, শিক্ষা একটি বড় বিষয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কী চাচ্ছে? তারা বলছে, চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য বিষয়, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে অন্য যেসব বিষয় দরকার, সেগুলো সহজপ্রাপ্য হতে হবে। সেটা আবার জনগণের কাছে পৌঁছুতেও হবে।
আমার একটি বিরাট সিটিস্ক্যান মেশিন রয়েছে। কিন্তু আমার পঞ্চগড়ের দরিদ্র রোগীর এটাতে কিন্তু সহজপ্রাপ্যতা নেই। সুতরাং আমাকে নিশ্চিত করতে হবে,যন্ত্রটি রয়েছে, কিন্তু এর সহজপ্রাপ্যতা রয়েছে। এরপর সাশ্রয়ী মূল্যের হতে হবে। কী? মানসম্মত চিকিৎসা, সুযোগ সুবিধা। এটিই আমরা সার্বজনীন চিকিৎসার মধ্যে বলছি।
এখন কথা হলো চিকিৎসক যদি মান সম্মত শিক্ষার মাধ্যমে প্রশিক্ষিত না হয়, তাহলে মান সম্মত চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা সহজলভ্য করতে হবে। এই জিনিসগুলো সহজলভ্য ও প্রবেশযোগ্য করতে হবে। পাশাপাশি চেষ্টা করতে হবে।
এখন বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার কিন্তু দুটো দিক রয়েছে। একটি হলো সরকারি, আরেকটি হলো বেরসরকারি। সরকার স্বাস্থ্যসেবা দিতে দায়বদ্ধ। কারণ, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়াটা আমাদের স্বাস্থ্যগত অধিকার। আমাদের সংবিধানে এটা কিন্তু প্রায় বিনামূল্যে। তবে আমরা যদি পদ্ধতিটাকে উন্নত করতে পারতাম, তাহলে যেটি হতো, সেটি হলো, সব মানুষের জন্য আমরা সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারতাম। শিক্ষার মান উন্নত করতে হবে, চিকিৎসক, নার্স, পেরামেডিক্স- এরা যেই প্রশিক্ষণ পায়, এর মান উন্নত করতে হবে।
এটা কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান পেশায় যারাই রয়েছেন, সবার বেলাতেই প্রজোয্য। এটা হলো একটা দিক।
বর্তমানে কিন্তু মেডিকেল কলেজগুলোতে চিকিৎসাসেবার মান সর্বনিম্ন।এটা আমি মনে করি। ব্যতিক্রম দিয়ে তো আর আদর্শ হবে না।
ইদানীং একটি প্রতিবেদনে দেখলাম, সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে শিক্ষার স্বল্পতা রয়েছে। একটি মেডিকেল কলেজে কতজন শিক্ষক লাগবে, এটি নির্দিষ্ট করে দেওয়া রয়েছে। এটা যদি না থাকে, তাহলে আমি মান সম্মত প্রশিক্ষণ পাব না।
সুতরাং এই শিক্ষার মানের দিকে প্রথম নজর দিতে হবে। এজন্য আমি এই কথাটি বললাম।
প্রশ্ন : আমরা সামান্য সর্দিকাশিতেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে চাই। কম জনপ্রিয় চিকিৎসকের কাছে যেতে চাই না। এটি কীভাবে রোধ করা যায়?
উত্তর : এটা রোধ করা যাবে না। কারণ, চিকিৎসক পছন্দের বিষয়টি আমার অধিকার। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমি কার কাছে যাব, এটি আমার অধিকার।
প্রশ্ন : এর কারণ কী? রেফালেল সিস্টেম নেই বলে কি এমন হচ্ছে? যদি রেফালেল সিস্টেম থাকত, তাহলে কী হতো?
উত্তর : আমি এই জায়গাটি পরিষ্কার করি। আমার অধিকার হলো, আমি আমার পছন্দের চিকিৎসকের কাছে যাব। এখন কথা হলো, তাহলে সরকারি চিকিৎসকের বেলায় নীতিমালা কী হবে। সরকারের যে পদ্ধতিটা রয়েছে, সেটি তো উপজেলা পর্যায় থেকে শুরু করে বিশেষায়িত হাসপাতাল হবে। সরকারের যেটি পদ্ধতি হবে, সেটি হবে রেফারেল সিস্টেম।
সুতরাং ওই রেফারেল সিস্টেমেও রোগীরা জানবেন, এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেখানে কতজন রয়েছে। তার মধ্যে যদি তিনি পছন্দ করতে চান, আমি এই চিকিৎসক দেখাব, তার সেই অধিকার রয়েছে। সুতরাং কোথায় ভিড় হবে সেটি বড় কথা নয়। আমার চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক আমার পছন্দে হবে। কী চিকিৎসা নেব, সেটিও আমার পছন্দে হবে। পাশাপাশি আমার জন্য সেই পছন্দগুলো সহজলভ্য করতে হবে। এটা সরকারের দায়িত্ব। তবে বেসরকারিভাবে যেই পদ্ধতিটা রয়েছে, এর সঙ্গে একে মেলালে চলবে না। তবে বেসরকারি যে নীতিমালা সরকার করতে পারেন, সেটি হলো, মানসম্মত যেই চিকিৎসাসেবা দেওয়া দরকার সেটি জনগণ পয়সা দিয়ে পাচ্ছে কি না, সেটি দেখা।
প্রশ্ন : একজন রোগীর চিকিৎসকের কাছ থেকে কতটুকু সময় পাওয়ার অধিকার রাখে?
উত্তর : এটা দুজনেরই স্বাধীনতা। মানে দুজনেরই এটি একটি স্বাধীনতা। রোগী যতক্ষণ পর্যন্ত না সন্তুষ্ট হয়ে চিকিৎসকের কাছ থেকে বের হয়ে আসছে, সেটা চিকিৎসককে দিতে হবে। এটি হলো আদর্শ। রোগী সন্তুষ্ট হলো কি না, এটি চিকিৎসকের দেখার বিষয়।
প্রশ্ন : শিক্ষা ব্যবস্থা ও মিডিয়ার মাধ্যমে স্বাস্থ্য সচেতনতা কীভাবে বাড়ানো যেতে পারে?
উত্তর : এটা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমি যেটি বলি, আমাদের যুদ্ধ করতে হবে। যুদ্ধটা হলো জনগণকে সচেতন করা, যাতে তারা স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন মেনে চলে। মানে স্বাস্থ্যকর জীবনাচার। এই জিনিসটা যেন জনগণ জানে এবং জেনে সেই ভাবে চলে। এর জন্য কিন্তু আমাদের যুদ্ধ করতে হবে। কেন যুদ্ধ করতে হবে? যুদ্ধ করতে হবে এই জন্য আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যেমনই থাকুক না কেন, আমাদের দেশের সম্পদের একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমি বাংলাদেশকে গরিব দেশ বলব না। আমি বলব, সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা খুব সম্পদশালী দেশ। আমরা যদি একে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারি, বাংলাদেশে চিকিৎসার মান অনেক উপরে ওঠে যাবে।
আমি যেটি বলতে চাচ্ছি, প্রতিটি মানুষকে এবং প্রতিটি মা-বাবাকে, প্রতিটি শিশুকে আমরা যদি স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে পারি, তাহলে ভালো। স্বাস্থ্য সচেতন বলতে আমি বলব, আমাদের কিছু জীবনাচার রয়েছে। যেমন : আপনি তামাকের কথা বললেন। সিগারেট খাব না। সকালবেলা হাঁটব। কী কী জিনিস আমাদের এড়িয়ে যাওয়া দরকার, সেগুলো জানতে হবে। যেমন : ভেজাল খাব না, বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করে আমাদের খেতে হবে। আমার বাংলাদেশের বাতাস কিন্তু খুব দুষিত। হর্ন একটি খারাপ জিনিস। এটা সারাক্ষণ আমরা দেখি। আমাদের জীবনাচারে এই জিনিসগুলো ঢুকিয়ে দিতে হবে এবং বাচ্চাদের মধ্যেও এই জিনিসগুলো ঢুকিয়ে দিতে হবে। সবাই যেন মেনে চলে এই বিষয়ে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।