প্রস্রাব আটকে রাখতে না পারার সমস্যা : কারণ কী?
প্রস্রাব আটকে রাখতে না পারা একটি জটিল সমস্যা। অনেকেই এ ধরনের বিব্রতকর সমস্যায় ভোগেন। এর কারণ কী?
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৫৫৫তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. তাজকেরা সুলতানা চৌধুরী। বর্তমানে তিনি সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : প্রস্রাব আটকে রাখতে না পারার সমস্যাটি আসলে কী?
উত্তর : আমি আসলে একজন জেনারেল সার্জন ও ইউরোলজিস্ট। প্রস্রাবের রাস্তার সমস্যাগুলো নিয়েই আমি ব্যবস্থাপনা করি। আমাদের কাছে মূত্র ঝড়া রোগটি নিয়ে অনেকেই আসে। নারীদের ইউরোলোজি আমাদের দেশে কম উন্নত। এখনো অনেক কম চিকিৎসক রয়েছে। আমরা এ ধরনের রোগী অনেক পাই, যারা প্রস্রাব ধরে রাখতে পারে না এবং যাদের ঘন ঘন বাথরুমে যেতে হয়। মানসিক ও সামাজিক অনেক ধরনের বিব্রতকর অবস্থা নিয়ে তারা থাকে। অনেক বৃহৎ জনগোষ্ঠী এতে ভুগছে। নারী- পুরুষ উভয়েই রয়েছে। বাচ্চারাও রয়েছে। ষাঠোর্ধ্ব মানুষ, যাদের ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গেছে, মা-খালারা যাদের সন্তান বড় হয়ে গেছে, একটা বয়স পার করে গেছে, তাদের এ সমস্যাটা বেশি হয়েছে। তবে ইদানীং কর্মজীবী নারীদের ক্ষেত্রেও আমরা এমন পাচ্ছি। করপোরেট লাইনে কাজ করে যারা, যাদের সারা দিনই প্রায় কাজ করতে হয়, তাদের ক্ষেত্রেও এ ধরনের সমস্যা আমরা পাচ্ছি। প্রতিটি রোগীকে আলাদা করে বিচার করে কারণটা বের করি।
প্রশ্ন : কী কী কারণ রয়েছে?
উত্তর : রিপ্রোডাকটিভ জীবনে যখন একটি মেয়ে মা হয়, সেটা স্বাভাবিক একটি বিষয়। যাদের গর্ভাবস্থায় বাজে কোনো ইতিহাস রয়েছে, আবার যাদের বিয়ে হয়নি, তবে অন্যান্য মেডিকেল সমস্যায় ভোগে, যেমন তাদের স্থূলতা থাকতে পারে, থাইরয়েডের সমস্যা থাকতে পারে, জুভিনাল ডায়াবেটিসে রোগীরা আক্রান্ত থাকতে পারে, তাদের আরো মেটাবলিক রোগ, কিডনির সমস্যা বা উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তারা অন্যান্য ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রস্রাব আটকাতে পারে না। রোগী এলে তাদের আমরা পরীক্ষা করে বের করি। তবে প্রচলিত হলো, নারীদের মাতৃত্বকালীন সমস্যার কারণে, তারা স্ট্রেস ইনকনটেন্ট নামে একটি সমস্যায় ভোগে। এতে প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
দৈনন্দিন কাজের মধ্যে হয়তো বিষয়টি বোঝা যাবে। দৈনন্দিন কাজের মধ্যে সে রয়েছে, সে ভারী জিনিস তুলছে, তখন প্রস্রাব পড়ছে। আবার হয়তো হাঁচি দিচ্ছে, কাশি দিচ্ছে, এর সঙ্গে এক ফোঁটা প্রস্রাব ঝড়ে পড়ছে। এটা খুব বিব্রতকর।
আমাদের দেশের অবস্থায় অনুযায়ী বেশির ভাগ নারী ধার্মিক। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে ভালোবাসে। তারা হয়তো নামাজ পড়তে পারছে না, এর জন্য খুব উদ্বিগ্ন থাকে। সারা বাংলাদেশ থেকে যখন নারী রোগীরা আমার কাছে আসে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ গল্পগুলোই করে। সে নিজেকে পরিবারের মানুষের কাছ থেকে সরিয়ে নেয়, যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যায় না, একা একা থাকতে পছন্দ করে। এমন একটি জায়গায় বেশি থাকে, যার পাশে একটি টয়লেট রয়েছে। এর বাইরে সে কোথাও যেতে চায় না।
প্রশ্ন : কী পরীক্ষা দিয়ে আপনারা সমস্যাটি নিশ্চিত হন?
উত্তর : আসলে রোগীরা তো তাদের কথার মধ্য দিয়েই গল্পগুলো বলে ফেলে। ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে আমরা ইতিহাস দিয়ে রোগ নির্ণয় করে ফেলি। এরপর আমরা পয়েন্ট আউট করি, তার ঝুঁকি কতটুকু রয়েছে। সে কোন অবস্থায় রয়েছে, সে অবস্থা বোঝার জন্য আমরা ফিজিক্যাল পরীক্ষা করি। আর ল্যাবের পরীক্ষা আমাদের সাহায্য করে, তবে অনেক কম।
যেহেতু এই অসুখটা প্রতিরোধযোগ্য। উন্নত বিশ্বের মানুষেরও এই সমস্যা রয়েছে। তবে ব্যাপ্তিটা বেশি নয়। কারণ, অ্যান্টিনেটাল কেয়ার, পোস্ট নেটাল কেয়ার ওদের উন্নত হয়।
যখন মায়েরা গর্ভাবস্থার মধ্য দিয়ে যায়, সেটি কিন্তু একটি প্রাকৃতিক বিষয়। কখনোই এটি একটি অসুখ নয়। গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের হার্ট, ফুসফুস, কিডনি প্রত্যেকটি জায়গায় একটি পরিবর্তন হয়। বাচ্চা হয়ে যাওয়ার পর সম্পূর্ণটাই আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসে। এই হওয়া ও ফিরে আসা, এই সময় অঙ্গগুলোতে চাপ পড়ে। মেয়েদের যে প্যালভিক ডায়াফার্ম (বেসিনের মতো পেশির ডায়াফার্ম) এতে চাপ পড়ে। এর মধ্যে মূত্রথলি থাকে, জরায়ু থাকে, পিছনে মলদ্বার বা মলাশয় থাকে। এরপর যখন শিশুটি আসে সে সব কিছু সরিয়ে সেখানে জায়গা করে নেয়। ধীরে ধীরে নয় বছরে সে আস্তে আস্তে জায়গা তৈরি করে। পেশিটা তখন হালকা হয়, জায়গা দেয়। তবে গর্ভাবস্থা যখন শেষের দিকে তখন কিন্তু আস্তে আস্তে তার জায়গা কমে যায়। তার জীবন যাপনের ধরন, তার ব্যায়াম, তার খাবার –দাবারের ধরন, ওই সময় সেগুলো যদি সে জানে, তখন সমন্বয় করবে।
এরপর বাচ্চা যখন হয়ে যাবে, তখন অনেক ধরনের ট্রমা হয়। বাধাযুক্ত প্রসব হয়। কারো ক্ষেত্রে হয়তো এটি হলো না, সে হয়তো সিজার করল, কিন্তু করার পরে মায়ের সেই জায়গাটা ফিরে আসার জন্য বিশ্রাম নিতে হবে। তাকে কিছু বিশেষ ব্যায়াম করতে হবে। নির্দিষ্ট নিয়মে পানি পান করতে হবে এবং বাথরুমে যেতে হবে। প্রস্রাব জমিয়ে রাখা যাবে না।