ফ্যাটি লিভার কেন ঝুঁকিপূর্ণ?
লিভারে চর্বি অতিরিক্ত পরিমাণে জমার বিষয়কে সাধারণত ফ্যাটি লিভার বলে। লিভারে চর্বি জমলে ক্ষতি কী?
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩৫২৫তম পর্বে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : ফ্যাটি লিভার কী? কেন এটি ঝুঁকিপূর্ণ?
উত্তর : নামের মধ্যে আক্ষরিক অর্থে রোগের কারণ বলা রয়েছে। লিভারে সাধারণ নিয়মেই চর্বি জমা থাকে। একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় চর্বি সঞ্চিত থাকে। শরীর যখন কোনো ঝামেলায় পড়ে, শরীরের যখন অতিরিক্ত শক্তির দরকার হয়, লিভার তখন সেই চর্বি থেকেই শক্তি সঞ্চয় করে। লিভারে পাঁচ ভাগ চর্বি সঞ্চিত থাকতেই পারে। একে আমরা ফ্যাটি লিভার বলব না। এটা যখন বেড়ে যায়, স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন আমরা তাকে ফ্যাটি লিভার বলি।
ফ্যাটি লিভার নিয়ে আগে কথা হতো না, এখন কথা হচ্ছে কেন? ২০০৬-০৭ সালেও লিভার বিশেষজ্ঞরা এক পাতাই জানতেন। এক পাতা লেখা ছিল বইয়ে। কিন্তু এখন যেকোনো টেক্সট বই, এমনকি মেডিসিনের বইয়েও ফ্যাটি লিভারের ওপর আলাদা অধ্যায় থাকে। এর সম্পর্কে আমাদের ধারণা হলো সাম্প্রতিক। আমরা ক্রমেই বেশি করে জানতে পারছি, আসলে ফ্যাটি লিভার কী। আগে মনে করা হতো, হার্টে বা মস্তিষ্কে চর্বি জমলে ঝামেলা, লিভারে জমলে ঝামেলা নেই। কিন্তু এখন আমরা জানি, যাদের লিভারে চর্বি জমে, তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভবিষ্যতে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যানসারেও আক্রান্ত হতে পারে। এটি হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সবার হবে না, তবে কারো কারো লিভারে খারাপ রোগ দেখা দেবে।
এখন হলো, কাদের দেখা দেবে? কাদের দেখা দেবে না? এগুলো নিয়ে কিন্তু আমাদের ধারণা এখন পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। আমরা সাধারণত জানি, লিভারে যাদের চর্বি জমে, তাদের কারো কারো ফ্যাটি লিভার থাকে, কারো কারো হেপাটাইটিস থাকে। যেমন ধরুন, হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের ক্যারিয়ার ও সক্রিয় পর্যায়। বি ভাইরাসে যাদের সক্রিয় রোগ থাকে, তেমনি যাদের ফ্যাটি লিভার থেকে লিভারে হেপাটাইটিস থাকে—আমরা বলি ন্যাশ, নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়ো হেপাটাইটিস—এই ন্যাশ যাদের থাকে, তাদের লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়।
এখন প্রশ্ন থাকতে পারে, কাদের ঝুঁকি রয়েছে, কাদের ঝুঁকি নেই। আগে আমরা জানতাম, শরীরে কিছু কিছু মেটাবলিজমের অস্বাভাবিকতার কারণে এটি হয়। আমরা আমাদের প্রাত্যহিক প্র্যাকটিসে দেখি, কিছু কিছু মানুষ আসে লিভারে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ চর্বি নিয়ে। তবে লিভার খুব ভালো।
আবার কিছু কিছু মানুষ রয়েছে, যাদের লিভারে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ চর্বি, তাদের ক্ষেত্রে দেখি, লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে, লিভার সিরোসিস হয়ে গেছে। এখন আমরা আস্তে আস্তে জানতে পারছি যে ফ্যাটি লিভারের একটি জিনগত কারণও রয়েছে। জিনগত কারণে কারো কারো শুরু থেকেই ন্যাশ থাকে। কারো কারো ক্ষেত্রে ন্যাশটা খুব বেশি বাড়ে। তো, এখানে দুটো কারণ রয়েছে। একটি হলো পরিবেশগত কারণ। আর হলো, খাওয়া-দাওয়া, কিছু কিছু রোগের কারণে লিভারে চর্বি জমবে। কিছু কিছু ভেতরের মেটাবলিজম অস্বাভাবিকতার কারণে খারাপের দিকে যাবে। পাশাপাশি জিনগত বিষয়ও রয়েছে।