শীতকালের সকালে ব্যায়াম নয়
শীতকালে আমরা তুলনামূলকভাবে কম কাজ করি। কিন্তু খাদ্য গ্রহণে পরিমিত হই না। তাই শরীরে অনেক সময় ভারী হয়ে যায়। সে জন্য শীতে ব্যায়াম করা অন্য ঋতুর চেয়ে বেশি জরুরি। তা ছাড়া ব্যায়াম করলে এমনিতেই শরীরের জড়তা কেটে যায়, কাজে গতি আসে। শীতের সময় সাধারণত রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। অনেকেই এই সময় খুব সহজে ঠাণ্ডা, সর্দি-জ্বরের মতো রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হন। শীতে ব্যায়াম করলে এসব রোগব্যাধি সহজে কাবু করতে পারে না। তাই শীতটাকে স্বাস্থ্যকরভাবে উপভোগ করতে চাইলে ব্যায়াম করা জরুরি।
ব্যায়াম করলে শরীরের রক্তে শ্বেতকণিকা বা হোয়াইট ব্লাড সেল বেড়ে যায়। এর ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেড়ে যায়। তবে শীতকালে সকালের দিকে ব্যায়াম এড়িয়ে গেলে ভালো হয়। বিকেলের দিকটা ব্যায়ামের জন্য উপযোগী। যাঁদের হৃদরোগ আছে, হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা আছে, মেরুদণ্ড বা কোমরে ব্যথা রয়েছে, তাঁদের অবশ্যই বিকেলের দিকে ব্যায়াম করতে হবে।
প্রতিদিন একজন মানুষকে ৪০ শতাংশ ব্যায়াম করতে হয়। আর বাকি ৬০ শতাংশ নির্ভর করে ডায়েটের ওপর। শীতকালে খাবারের তালিকায় কিছু পরিবর্তন আনতে হয়। তাই এ সময় শরীরে তাপ উৎপাদন হয় এমন ডায়েট করতে হবে। যেমন : মধুর সাথে ডার্ক চকোলেট মিশিয়ে খেলে রক্তনালি প্রসারিত হয়। রক্ত চলাচল ভালোভাবে হয়। এ সময় এমন খাবার গ্রহণ করতে হবে যাতে শরীরে তাপ উৎপাদন হবে কিন্তু চর্বি জমা হবে না। ব্যায়ামের সময় ঢিলেঢালা পোশাক পড়তে হবে। এ সময় অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি শীত পোশাক পরে ব্যায়াম শুরু করতে হয়।
আমরা সাধারণত তিন ধরনের ব্যায়াম করে থাকি। কার্ডিওভাসকুলার, ম্যাসকুলার, জয়েন্ট স্ট্রেচিং। সাধারণত ব্যায়ামের ক্ষেত্রে প্রথমে জয়েন্ট স্ট্রেচিং, দ্বিতীয় ভাগে ম্যাসকুলার এবং একেবারে শেষে কার্ডিওভাসকুলার করা হয়। কিন্তু শীতকালে এটি ভিন্নভাবে করতে হয়। এ ক্ষেত্রে প্রথমে কার্ডিওভাসকুলার, দ্বিতীয় ভাগে ম্যাসকুলার এবং পরে জয়েন্ট স্ট্রেচিং করতে হয়। শীতকালে ওয়ার্মআপ করা কঠিন হয়ে যায়। তাই কার্ডিওভাসকুলার দিয়ে ব্যায়াম শুরু করতে হয়। এ সময় ব্যায়ামে সাধারণত বড় মাংশপেশিকে লক্ষ্য করে শরীরচর্চা করতে হয়।
কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়ামের মধ্যে রয়েছে, হাঁটা, দৌড়ানো, স্কিপিং, সাইকেলিং ইত্যাদি। ম্যাসকুলার ব্যায়ামের মধ্যে রয়েছে বুকডন, ওঠাবসা। যাঁরা জিমে যাচ্ছেন, তাঁরা ডাম্বেল বা ভারী জিনিস তুলবেন। অর্থাৎ যেসব ব্যায়ামে শক্তি খরচ হয়, সেসব ব্যায়াম করতে হবে। স্ট্রেচিংয়ের মধ্যে পড়ে বিভিন্ন ধরনের ইয়োগা বা যোগব্যায়াম।
শীতে ঘরে বসে করতে পারবেন এমন কিছু ম্যাসকুলার ব্যায়াম নিচে দেওয়া হলো :
* পায়ের ব্যায়ামের জন্য প্রথমে সাধারণ ওঠাবসা। সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে যেন পায়ের হিল বা গোড়ালি ওপরে উঠে না যায়। পায়ে আঙুল যেন বেঁকে না যায়। এক সেটে কুড়িবার, এভাবে পাঁচ সেট করতে হবে ব্যায়ামের সময়।
* সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বাঁ পা সামনে ফেলুন। এরপর দুই পায়ের হাঁটু ভেঙে আধাআধি করে বসুন। এই অবস্থান থেকে আবার আগের অবস্থানে আসুন। এবার ডান পা সামনে নিয়ে একই রকম করতে হবে। এভাবে ২০ বার করলে এক সেট হবে। এভাবে তিন সেট করতে হবে।
* ট্র্যাডিশনাল বুকডন করতে হবে। প্রথমে উপুড় হয়ে শুয়ে বুকের দুই পাশের হাত মাটিতে রাখতে হবে। হাতে চাপ দিয়ে শরীর ওঠাতে হবে। খেয়াল করতে হবে যখন নামবে তখন বুক যেন মাটি স্পর্শ না করে। এই ব্যায়ামটিও তিন সেট করে করতে হবে।
* টুলের ওপর বা বিছানার ওপর শুয়ে পড়তে হবে। দুই হাত মাথার পেছনে নিতে হবে। দম নিতে নিতে শরীর বাকিয়ে পেছনে যেতে হবে। দম ছাড়তে ছাড়তে আগের অবস্থানে ফিরে আসতে হবে। একে আমরা পুল ওভার ব্যায়ামও বলে থাকি।
খসরু পারভেজ রুমি : ফিটনেস ট্রেইনার