ভাইরাল জ্বরে কি অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন?
বিভিন্ন কারণে জ্বর হয়। জীবনে জ্বর হয়নি এ রকম মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে জ্বর হলেই অনেকে আবার নিজেই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলেন এবং পূর্ণ মাত্রায় কোর্স সম্পন্ন করেন না। এ থেকে অ্যান্টিবায়োটিক তার কার্যক্ষমতা হারায়। এ বিষয়ে এনটিভিকে বিস্তারিত জানিয়েছেন দেশের খ্যাতনামা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আবদুল জলিল চৌধুরী।
শুরুতে জ্বর সম্পর্কে অধ্যাপক ডা. আবদুল জলিল চৌধুরী বলেন, জ্বর কোনো অসুখের নাম নয়। জ্বর কোনো একটি অসুখের লক্ষণ। জ্বরকে আমরা এভাবে ভাগ করি, অল্প সময়ের জন্য জ্বর। আবার দীর্ঘমেয়াদি জ্বর। কিছু জ্বরের চিকিৎসা করলেও ভালো হয়। কিছু জ্বর না চিকিৎসা করলেও ভালো হয়। স্বল্পকালীন জ্বর যেগুলো আছে, যেমন, ভাইরাল ফিভার, যেটাকে আমরা ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা বলি। আর দীর্ঘমেয়াদি জ্বর বা মাঝামাঝি জ্বরগুলো হচ্ছে, ম্যালেরিয়া টাইফয়েড, টিবি, কালাজ্বর। এ ছাড়া নিউমোনিয়া, মেয়েদের প্রস্রাবে ইনফেকশন এগুলো স্বল্পমেয়াদি হতে পারে, দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। আবার কোনো কোনো জ্বর আছে বারবারে হতে পারে।
জ্বর হওয়ার প্রধান কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. আবদুল জলিল চৌধুরী বলেন, প্রথমে দেখতে হবে জ্বর হওয়ার প্রধান কারণ কী। আমাদের দেশের জ্বরের প্রধান কারণ হলো ইনফ্লুয়েঞ্জা, ফ্লু। যদি ঋতুর ভিন্নতার কারণে হয়। যদি এর সঙ্গে নাক দিয়ে পানি পড়ে, সর্দি হয়, চোখ একটু জ্বালপোড়া করে, নাকে পানি পড়ে, মাথা ব্যথা হয় এবং দু‘দিন ধরে হয়তো জ্বর থাকল তাহলে সাধারণত একে ফ্লুই মনে করি। তবে সব জ্বরই যে ফ্লু হবে সেটা নাও হতে পারে। যদি সিলেটে কোনো রোগীর জ্বর হয় সে প্রথমেই ম্যালেরিয়ার চিন্তা করে। রাজশাহী বা ময়মনসিংহ অঞ্চলে জ্বর মানেই মনে করা হয় কালাজ্বর। তবে ঢাকা শহরে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জ্বর সর্দি, কাশি , ফ্লু হয়- যেই জ্বরই হোক প্রথমে তিনদিন হয়তো চিকিৎসকের কাছে যাওয়া লাগে না। ঘরেই চিকিৎসা করা সম্ভব। যদি জ্বর এলে প্রচণ্ড মাথাব্যথা হয়, চোখে ঘোলা লাগে দেখতে, বমি হয়- এ রকম হলে সেদিনই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া লাগতে পারে। তবে সামান্য জ্বর, মাথা ব্যথা, সর্দি- এগুলোতে চিকিৎসকের কাছে প্রথমে দু-তিনদিন না গেলেও চলে।
জ্বর হলে গায়ে ঠান্ডা পানি বা জল পট্টি দেওয়া উপকারী কি না জানতে চাইলে এই চিকিৎসক বলেন, জ্বর যখন হয়, তখন শরীরে একটি কাঁপুনি হয়। এর মানে জ্বর আসছে। জ্বর যখন আসে, শরীরের রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয়। তাপ তখন শরীরে ধরে রাখে এবং জ্বর আসে। তখন যদি শরীরে ঠান্ডা পানি লাগাই, তখন আরো কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসবে। তাই কোনো অবস্থায় শরীরে ঠান্ডা পানি লাগানো যাবে না। টেপিড স্পনজিং অর্থাৎ কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে শরীরে স্পঞ্জ করতে হবে। যেন রক্তনালিগুলো প্রসারিত হতে পারে এবং জ্বর ছাড়তে পারে। ঠান্ডা পানি দিয়ে কখনো শরীর মোছা ঠিক না। মাথায়ও ঠান্ডা পানি ঢালা ঠিক না। এতে আরাম লাগে ঠিকই, তবে জ্বরের পর যে কাশি হবে সেটা দূর করা কঠিন হবে।
আবার জ্বরের মধ্যে জলপট্টি দেওয়া যেতে পারে। কিন্ত মাথায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানি ঢাললে কাশি হয়ে যায়। সেই কাশি সহজে ভালো করা মুশকিল। এটা এড়িয়ে যাওয়া ভালো। করতে চাইলে স্বল্পক্ষণের জন্য করা যেতে পারে, এর বেশি না।
প্যারাসিটামল খাওয়ার নিয়ম জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ দুই থেকে চারবার করে প্যারাসিটামল খেলে তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না।
অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. আবদুল জলিল চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে বিদেশের চেয়ে ওষুধ অনেক সস্তা। যেকোনো জায়গায় বললেই এখন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দেয়। এখন অনেকেই জ্বর আসার দিনই অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করে দেন। যেটা অবশ্যই বর্জনীয়। বেশির ভাগ ভাইরাল ফিভারের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক লাগে না। আর যদি অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া হয় এবং পূর্ণ মাত্রায় সম্পন্ন না করা হয়, তখন এটি আর পরবর্তী সময়ে তেমনভাবে কাজ করে না। তখন আমাদের জন্য অন্য অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তখন রোগ শনাক্ত করাও কষ্ট হয়ে যায়।