৮০ টাকায় ‘বোবার বিরিয়ানি’
বিরিয়ানি পছন্দ করেন না এমন ভোজনরসিক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। কিন্তু পছন্দ করলেই তো হবে না, বিরিয়ানি হওয়া চাই স্বাস্থ্যসম্মত। তা ছাড়া দামটাও হাতের নাগালে হতে হবে। কিন্তু কোথায় পাওয়া যাবে এমন বিরিয়ানি যা একাধারে সুস্বাদু, স্বাস্থ্যকর ও সাশ্রয়ী? যদি আপনি এমন কোনো বিরিয়ানির খোঁজ করে থাকেন তাহলে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের ‘বোবার বিরিয়ানি’। যারা নিজেদের ভোজনরসিক বলে দাবি করেন তাঁদের একবার হলেও ঢুঁ মেরে আসা উচিত ‘বোবার বিরিয়ানি’ থেকে।
নামকরণের সার্থকতা
দোকানটির প্রকৃত নাম ‘ফায়জানে মদিনা বিরিয়ানি হাউজ’, কিন্তু সেটি এখন পরিচিত ‘বোবার বিরিয়ানি’ হিসেবে। কেন এ অদ্ভুত নামকরণ জিজ্ঞেস করলে এর মালিক আফতাব হোসেন বলেন, ‘আমার যে লোক বিরিয়ানি পরিবেশন করেন তার নাম সামির। সে কথা বলতে পারে না। তাই সবাই বলতে থাকে চল বোবার দোকানের বিরিয়ানি খেয়ে আসি। এভাবেই লোকে মুখে বলতে বলতে বোবার দোকানের বিরিয়ানি থেকে এর নাম হয়ে যায় বোবার বিরিয়ানি। তা ছাড়া ফায়জানে মদিনা বলার চেয়ে বোবার বিরিয়ানি বলা সহজ। যদিও শুরুর দিকে কোনো নাম ছাড়াই দোকান চালু করা হয়েছিল।’
বোবার বিরিয়ানির ইতিহাস
বোবার বিরিয়ানির ইতিহাস বেশ পুরোনো। ১৯৮৬ সালে চালু হয় বিরিয়ানির এই দোকান। প্রথমে বিরিয়ানির পরিবর্তে বিক্রি করা হতো তেহারি। প্রতি প্লেট তেহারির দাম ছিল মাত্র পাঁচ টাকা। এখন মেলামাইনের প্লেট ব্যবহার করা হলেও তখন ব্যবহার করা হতো টিনের প্লেট। বিরিয়ানির দোকানটিরও অবস্থান ছিল বর্তমান জায়গা থেকে বেশ দূরে। এরপর একসময় জেনেভা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তখন বর্তমান জায়গায় আবারও দোকানের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে তেহারির পরিবর্তে বিরিয়ানি বিক্রি শুরু করেন দোকানটির তৎকালীন মালিক আলতাফ হোসেন। বর্তমানে আলতাফ হোসেনের ছেলে আফতাব হোসেন দোকান পরিচালনা করেন।
কত দামে, কী খাবেন?
ফুল এক প্লেট বোবার বিরিয়ানির জন্য আপনাকে গুনতে হবে মাত্র ৮০ টাকা। তাতে আপনি পাবেন তিন থেকে চার পিস মাঝারি আকারের গরুর মাংস। একটি বড় আকারের আলু এবং যথেষ্ট পরিমাণে বিরিয়ানি। যদিও ভোজনরসিকদের কাছে পরিমাণটা কম মনে হতে পারে। হাফ প্লেট বিরিয়ানি দাম ধরা হয়েছে ৪০ টাকা। সেখানে বিরিয়ানির পরিমাণ কমে যাওয়ার সাথে সাথে মাংসের টুকরোর সংখ্যা নামবে দুইয়ে। এ ছাড়া বিরিয়ানির সঙ্গে ঠাণ্ডা বোরহানিরও ব্যবস্থা রয়েছে। একগ্লাসের দাম মাত্র ৩০ টাকা। এমনিতে বোবার বিরিয়ানি সবসময়ই মোটামুটি গরম অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে যারা ধোঁয়া ওঠা বোবার বিরিয়ানির স্বাদ নিতে চান তাদের যেতে হবে সকাল ৮টার দিকে। সকালে যারা পারবেন না তাদের জন্য সুযোগ থাকছে বিকেল ৪টার দিকে যাওয়ার। কারণ এই দুই সময়ে চুলা থেকে রান্না করা বিরিয়ানি নামানো হয়। এ ছাড়া পার্সেলেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
যেভাবে যাবেন
বোবার বিরিয়ানির জন্য আপনাকে যেতে হবে রাজধানীর মোহাম্মাদপুরে। সেখান থেকে আপনার হেঁটে বা রিকশার মাধ্যমে যেতে হবে জেনেভা ক্যাম্পের প্রথম গেটে। যা মোহাম্মাদপুর মডেল স্কুলের পাশেই অবস্থিত। তবে মোহাম্মাদপুরের লোকেরা জায়গাটিকে চেনে ক্যাম্পের বাজার নামে। গেট দিয়ে ঢুকে সোজা হাঁটলেই বামদিকে পড়বে বোবার বিরিয়ানির দোকান।
সুস্বাদু হওয়ার গোপন রহস্য
বোবার বিরিয়ানি সুস্বাদু হওয়ার প্রধান কারণ না কি লাকড়ির চুলা। এমনটাই জানালেন মালিক আফতাব হোসেন। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বিরিয়ানি গ্যাসের চুলায় রান্না হওয়ার কারণে স্বাদ কমে যায়। এ ছাড়া মশলাতেও কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। মাংস নরম ও বিরিয়ানির স্বাদ বৃদ্ধি করতে বেশিরভাগ বিরিয়ানিতে টেস্টিং সল্ট দেয়া হলেও মানুষের ক্ষতির কথা চিন্তা করে বোবার বিরিয়ানিতে টেস্টিং সল্ট এড়িয়ে চলা হয়। আমার এখানে মোবাইল কোর্ট এসেছিল কিন্তু ক্ষতিকর কিছু না পেয়ে চলে গেছে।’
দোকান ছোটই থাকবে
বোবার বিরিয়ানির ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ উদাসীন দোকানটির মালিক আফতাব হোসেন। দোকান নিয়ে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই, যেমন চলছে, চলুক না। আর দোকান বড় করার কোনো পরিকল্পনা নেই। বিরিয়ানির দোকান ছোট হয়। তবে জিনিসপত্রের দামের সঙ্গে মিল রেখে ভবিষ্যতে বিরিয়ানির দামও কিছুটা বাড়তে পারে।’
চারপাশের পরিবেশ
বোবার বিরিয়ানির দোকানের পরিবেশ যথেষ্ট ভালো। আপনার জন্য সেখানে রয়েছে দুজন বাবুর্চিসহ ছয়জন কর্মী। তবে সে খেতে যাওয়ার একমাত্র চ্যালেঞ্জ হলো জেনেভা ক্যাম্প এলাকার পরিবেশ। অন্যান্য এলাকার তুলনায় জায়গাটা বেশ ঘিঞ্জি। এ ছাড়া চারপাশের পরিবেশ অনেকের কাছে কিছুটা নোংরা লাগতে পারে। তবে যারা ভোজনরসিক তারা বিরিয়ানির জন্য এটুকু ত্যাগ স্বীকার করতেই পারেন।