বৈশাখের বারতা নিয়ে রাঙতা মেলা
বৈশাখ সামনে রেখে পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে 'মেয়ে নেটওয়ার্ক' আয়োজিত বাংলাদেশি উদ্যোগের মেলা ‘রাঙতা’।
শুরুতেই জেনে নিই ‘মেয়ে নেটওয়ার্ক’ সম্পর্কে। ‘মেয়ে’ বাংলাভাষী মেয়েদের একতার নেটওয়ার্ক। এটি একটি ভাবনার সূতিকাগার, কর্মযজ্ঞের মঞ্চ এবং বন্ধুতার উঠোন। মেয়ে পুরোপুরি অলাভজনক নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কেই উদ্যোক্তা প্রকল্পের নাম রাঙতা।
প্রাণের টানে শখ ও স্বাতন্ত্র্যকে পুঁজি করে ২০১৩-তে রাঙতার পথচলা শুরু। গত পাঁচ বছরে বেড়েছে রাঙতার কলেবর, তবে এর মূল সুরটি রয়ে গেছে আগের মতোই।
বরাবরের মতো এবারও রাঙতা মেলায় অংশ নিচ্ছেন মেয়ে নেটওয়ার্কের উদ্যোক্তা শাখা ‘হুটহাট’-এর উদ্যোক্তারা। সেইসঙ্গে যোগ দিয়েছেন হুটহাটের বাইরে আছেন কিন্তু সমমনা কয়েকজন উদ্যোক্তাও।
বাংলাদেশি পণ্যের বাজার বৃদ্ধি, ক্রেতা তৈরি এবং দেশি উদ্যোক্তাদের ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই শুরু হয়েছিল রাঙতা মেলা।
আয়োজকরা জানালেন, রাঙতা যখন শুরু হয়, তখন বাংলাদেশে, বিশেষ করে ঢাকায় যেসব মেলা হলো তা বিদেশি (মূলত পাকিস্তানি) পণ্যে সয়লাব থাকত। বাংলাদেশি পণ্য সেখানে কোণঠাসা হয়ে পড়ত। এমনকি ক্রেতারাও বাংলাদেশি পণ্য দেখে মুখ ফিরিয়ে নিতেন। উদ্যোক্তা বন্ধুদের প্রতিকূল অভিজ্ঞতা শুনে মানসম্মত বাংলাদেশি পণ্যকে উৎসাহ জোগাতে প্রথম রাঙতার আয়োজন করা হয়। সেই শুরু। এরপর আর রাঙতাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
এ বছর মেয়ের নিজস্ব স্টলসহ মোট ৪৪টি স্টলে নিজেদের পণ্যের পসরা সাজাবে ৫৫টি উদ্যোগ। পাওয়া যাবে নতুন-পুরাতন বই, গাছ, হরেক রকম খাবার, মসলা, ছোট-বড় সকলের জন্য নিজস্ব নকশার জামাকাপড়, যুগল পোশাক, দেশি তাঁতের শাড়ি, দেশি জামদানি, কাতান, নকশিকাঁথা শাড়ি, হাতে বানানো গয়না, রংতুলিতে আঁকা পোশাক, গৃহস্থালির সরঞ্জাম, চামড়াজাত পণ্য, ব্যাগ, জুতো, নির্ভরযোগ্য কসমেটিকস, খেলনা, পেইন্টিং এবং বিভিন্ন ধরনের সেবা।
এবার প্রথমবারের মতো রাঙতা মেলায় কার্ডে মূল্য পরিশোধের সুবিধা রাখা হচ্ছে। সেইসঙ্গে থাকবে বাড়িতে মেলার পণ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও।
আগামী ৬ ও ৭ এপ্রিল দুদিন ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে মেলা।
'মেয়ে' থেকে যাত্রা শুরু করলেও রাঙতা লিঙ্গনির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য। মেয়ে নেটওয়ার্কের এই প্রাণের মেলায় সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আয়োজকরা। ‘মেয়ে’র পক্ষ থেকে এবারের রাঙতা আয়োজনের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করছেন তৃষিয়া নাশতারান, স্মিতা দাস এবং সাবরিনা আমান রিভী।
এ বছরের রাঙতা মেলায় যে উদ্যোগগুলো রয়েছে সেগুলো হলো : আকাশলীনা, অমৃত যোগ, অংশু, আর্টোপলিস, এস্টেরিয়া, আয়নাঘর, ব্যাড হ্যাবিট, ব্যাগ উওম্যান, বেগুনি প্রজাপতি, বিজেন্স, বইয়ের জাহাজ, বোকা বাক্স, কেয়ারশপ বিডি, ক্লোসেট ডি তাতিয়ানা, ঈহা, ফৌজি, ফ্লেভারস বাই পুনিজ কিচেন, গাথা, গুটিপোকা, হানি বি, কান পেতে রই, কারুজ, কইন্যা, লাল কাজল, লৌকিক, মেঘস্বর কুরিয়ার, মেয়ে, মুদিতা, নগরকৃষি, নানানতা, নীলান্তী, পটের বিবি, রাঙা, রানজুনি, রংদারু, রেগা, রদ্দি, রংধনু ক্রিয়েশন, সুগারক্যাসল, দি মালাকাইট ক্যাসকেট, গোপা আর্ট, তুগুন, তুমি গলার মালা, ওয়্যারহাউস, ওয়াও ফুড অ্যান্ড ক্রাফট, অলকানন্দা, চর্চা, চিত্রলেখা, তেরোপার্বণ, নগরপলাশ, বুবুর বায়না, ভাঁজ বিন্যাস, মিঠাই মণ্ডা, রসুইঘর।
এসবের সঙ্গে রাঙতায় থাকবে শিশু আর্যর জন্য চিত্র প্রদর্শনী। ২০১৫ সালে মাত্র চার বছর বয়সে আর্যর মাথায় ধরা পড়ে ব্রেইন টিউমার। বর্তমানে সাত বছরের ছোট্ট আর্য ব্রেইন টিউমার আর ক্যানসারকে পরাজিত করে দেশে ফিরেছে। তবে তাকে পুরোপুরি সুস্থ হতে পাড়ি দিতে হবে আরো অনেকটা পথ। সেই পথ বেদনার এবং ব্যয়বহুল। আর্যর জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে তার বাবা শিল্পী বিপ্লব ভট্টাচার্যর আঁকা ছবির প্রদর্শনীও থাকবে রাঙতায়।
সব মিলিয়ে এবারের রাঙতায় অংশ নেওয়া ৫৫টি উদ্যোগই এককথায় অনন্য।
যেসব কারণে রাঙতা অন্য অনেক মেলার থেকে আলাদা তার মধ্যে রয়েছে, এই মেলা হুইলচেয়ার প্রবেশগম্য। এখানে শিশুদের মায়ের দুধ পানের জন্য আলাদা স্থান থাকবে, মেলা প্রাঙ্গণে ধূমপান নিষেধ। সবচেয়ে বড় বিষয়টা হলো, এই মেলায় কোনো পাকিস্তানি পণ্য পাওয়া যাবে না।
রাঙতা মেলা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে যোগাযোগ করতে পারেন রাঙতার ফেসবুক পেজে। লিংক- https://www.facebook.com/Rangtaa2013/