রসগোল্লার মতো খেতে হবে বৃত্তের খুদের খিচুরি
খুদের খিচুরি গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার। এই খাবারকে একেক অঞ্চলে একেক নামে ডাকা হয়। বিক্রমপুর বা মুন্সীগঞ্জের লোকজন এটিকে বলেন, খুদের বউয়া। কেউবা বলেন, বউ খুদি, খুদের ভাত বা খুদের খিচুরি।
এই খুদের খিচুরির সঙ্গে বানানো হয় শুঁটকি, আলু, কালোজিরা, বেগুন, সরিষাসহ নানান পদের ভর্তা। এবার খাবার পালা। সাধারণ ভাত-ভর্তার মতো খেলে হবে না। প্লেটে খুদের খিচুড়ির সঙ্গে পছন্দমতো ভর্তা মাখাতে হবে। এরপর গোল গোল করে রসগোল্লার মতো বানিয়ে ঢুপ করে মুখে পুড়ে দিতে হবে। এভাবে একেকটি খুদের ‘রসগোল্লা’খেতে খেতে কখন যে পেটের সাইজ রসগোল্লার মতো হবে টেরও পাবেন না। মনে হবে, আরেকটু খাই।
ক্যাফে বৃত্তের খুদের খিচুরি, সঙ্গে চার পদের ভর্তা ও ডিম ভাজা। ছবি : লেখক
নাগরিক ব্যস্ততায় আপনি চাইলেও বাসায় এখন খুদের চাল পাবেন না। তার ওপর নানান পদের ভর্তা বানানোর ঝক্কি। এসব ঝামেলা কোন গৃহিণী নিতে চায় বলুন? কিন্তু ভোজনরসিক মনকে কে বোঝাবে!
তো, আপনি চাইলেই ঢাকা শহরেই সুন্দর পরিবেশে খেতে পারেন সুস্বাদু খুদের খিচুরি। সঙ্গে থাকবে আলু, কালোজিরা, বেগুনা ও সরিষার ভর্তা এবং একটি ডিম ভাজা। এত্ত কিছু পাবেন ৮০ টাকায়।
এই খাবারটি খাওয়ার জন্য আপনাকে যেতে হবে ক্যাফে বৃত্ততে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আদাবর থানা ভবনের পাশে গড়ে ওঠেছে ক্যাফে বৃত্ত।
একদিন সময় করে দুপুরে চলে যাই সেখানে। অর্ডার দেওয়ার কিছুক্ষণ পর চলে আসে গরম গরম খুদের খিচুরি। সঙ্গে ছিল চার পদের ভর্তা ও একটি ডিম ভাজা। সঙ্গে একটি চামচ দিয়েছিল। আমি অবশ্য ওই চামচ-টামচ দিয়ে খাই না। হাত ধুয়ে ঝাপিয়ে পড়ি খুদের খিচুরির ওপর। প্রথমেই কালোজিরার ভর্তা দিয়ে খিচুরি মাখিয়ে গোল গোল রসগোল্লার মতো বানাই। এরপর মুখে দিয়েই চোখ বন্ধ করে রাখি কিছুক্ষণ। এভাবে একের একের পর এক ভর্তা, কখনো এক সাথে দুটি ভর্তা মিশিয়ে গোল্লা গোল্লা করে খেতে থাকি। মাঝেমধ্যে ডিম ভাজাও মুখে পুরছিলাম। এক প্লেট খাওয়ার পরই পেট ভরে যায়। মনে হচ্ছিল, আরেকটু নিই।
ক্যাফে বৃত্তের ভেতরের পরিবেশ
আয়েশ করে খাওয়া শেষে কথা বলি ক্যাফে বৃত্তের লোকজনের সঙ্গে। জানতে পারলাম, প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে ৪টা পর্যন্ত পাবেন এই খুদের খিচুরি। শুক্রবার ভোজনরসিকদের ভিড় বেশি থাকায় সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পাওয়া যায় এটি।
২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ক্যাফে বৃত্ত চালু হওয়ার পর থেকেই তারা খুদের খিচুরি বিক্রি করে আসছে। এখানে যে শুধু খুদের খিচুরি বিক্রি হয়, তা নয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ফাস্ট ফুড আইটেমও বিক্রি হয়। আকর্ষণীয় মূল্যে বেশ কিছু সেট মেনুও পাবেন। এ ছাড়া তাদের আরেকটি খাবার নিয়ে লোকজনের মুখে প্রশংসা শুনেছি। সেটি হলো সরিষার তেলের তেহারি, দাম ১২০ টাকা। সেই খাবার চেখে দেখব আরেকদিন।
জানতে চাইলে ক্যাফে বৃত্তের অন্যতম মালিক মো. তৌহিদুল ইসলাম শাওন বলেন, ‘খুদের ভাত একটি জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী খাবার। রাজধানীবাসীকে জনপ্রিয় এই খাবারের স্বাদ দিতে আমরা চালু করেছি খুদের খিচুরি। আলহামদুলিল্লাহ ভালোই বিক্রি হয়। অনেকে খেয়েদেয়ে আবার বাসা বা অফিসের জন্য পার্সেলও নিয়ে যায়।’
বাইরে থেকে ক্যাফে বৃত্ত। ছবি : লেখক
এক প্রশ্নের জবাবে শাওন বলেন, ‘ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী আমরা দিনের রান্না দিনেই করি। খুব যত্ন নিয়ে রান্না করেন আমাদের বাবুর্চিরা। খাবারগুলোকে সুস্বাদু করার চেষ্টা করি, যাতে ক্রেতারা আমাদের খাবারগুলোকে মনে রাখে এবং বারবার খেতে আসে।’
ক্যাফে বৃত্তের কোনো শাখা নেই। তবে ভবিষ্যতে শাখা খোলার ইচ্ছে আছে বলে জানান শাওন। ক্রেতা সম্পর্কে জানতে চাইলে শাওন জানান, সব বয়সের মানুষ ক্যাফে বৃত্ততে খেতে আসে। তবে দিনে তরুণ বয়সের শিক্ষার্থীরা বেশি আসে খেতে। আর রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আসে লোকজন।
তো আর দেরি কেন? আপনি যদি কখনো খুদের খিচুরি খেয়ে থাকেন বা নাও খেয়ে থাকেন তাহলে ক্যাফে বৃত্তের খুদের খিচুরি চেখে দেখতে পারেন নিশ্চিন্তে, আপনার ৮০ টাকা পানিতে যাবে না।