কারো নাম মনে রাখতে চাইলে
কিছুক্ষণ আগেই তার সঙ্গে দেখা হয়েছে। কত কথা হয়েছে। এখনো তার চেহারা স্পষ্ট মনে আছে, কী পোশাক পরেছিল সেই স্মৃতিও টনটনে, কিন্তু নামটি কিছুতেই মনে পড়ছে না। ধ্যাৎ, স্মৃতিশক্তিই বুঝি নষ্ট হয়ে গেল। কারো নামই মনে থাকে না।–এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে অনেককেই। অনেক ক্ষেত্রে নাম ভুলে গিয়ে লজ্জার মধ্যেও পড়তে হয়েছে।
মজার বিষয় হলো, মানুষের স্মৃতির একটি অতি সাধারণ ব্যর্থতা হলো কারো নাম ভুলে যাওয়া। বেশির ভাগ মানুষের মধ্যেই কম বা বেশি এই প্রবণতা দেখা যায়। নাম মনে রাখা অনেকের কাছে দুনিয়ার কঠিনতম বিষয়ের একটি মনে হয়। মনোবিদদের মতে সাধারণ কিছু বিষয় অনুসরণ করেই মানুষের নাম মনে রাখা যায়।
মনোবিদদের মতে, আমরা প্রথমেই একজনের নাম জানি, তখন এটি একটি বিছিন্ন তথ্য হিসেবে মস্তিষ্কে সংরক্ষিত হয়। এর সঙ্গে অন্য তথ্যের কোনো যোগসূত্র থাকে না। পরে যখন ওই ব্যক্তির পেশা, বসবাস, পরিবারসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত জানি এগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি যুক্ত হয়ে সংরক্ষিত হয়। কিন্তু শুরুতে জানা নামটি বিচ্ছিন্ন স্মৃতি হিসেবেই রয়ে যায়। তাই নাম মনে রাখতে হলে অন্য স্মৃতির সঙ্গে নামকেও যুক্ত করতে হবে।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিছু বিষয় অনুসরণ করে কারো নাম সহজেই মনে রাখা যায়। ধাপে ধাপে এসব বিষয় তুলে ধরা হলো।
প্রথমত, কারো নাম জানার পর কয়েকবার মনে মনে পুনরাবৃত্তি করতে হবে। পরবর্তী সময়ে তাঁর নাম ধরে ডাকতে হবে। কোনো কিছু জানতে চাইলেও নাম বলার পর প্রশ্নটি বলতে হবে। এভাবে নামের স্মৃতি দৃঢ় হবে। যেমন : সেলিম বলে একজনের নাম জানলেন। পরে কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করলেন। এবার কোনো কাজে সেলিমকে প্রয়োজন হলেও নামটি আগে বলবেন—সেলিম, আপনি কি বাড়ি যাচ্ছেন? সেলিম, বাড়ির সবাই ভালো আছে? ইত্যাদি।
দ্বিতীয়ত, নতুন জানা নামটির সঙ্গে নিজের কোনো স্মৃতি যুক্ত করে ফেলতে হবে। প্রথম প্রথম বিষয়টি হাস্যকর মনে হলেও নামের স্মৃতি দৃঢ় করতে বিষয়টি বেশ কার্যকর। নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম মনে করতে গেলে সংশ্লিষ্ট ঘটনা বা স্মৃতি মনে করলেই হবে। যেমন : কারো নাম জানলেন রহিম। আচ্ছা এই নামে বিদ্যালয়ে আমার এক বন্ধু ছিল। বন্ধুটি এখন ঢাকায় অমুক জায়গায় চাকরি করে। সম্প্রতিই দেখা হয়েছিল। বেশ মোটা হয়ে গেছে। এবার ওই রহিম ব্যক্তিটির সঙ্গে দেখা হলেই মনে পড়বে স্কুলজীবনে এক বন্ধুর নামে তাঁর নাম। যে ঢাকায় চাকরি করে এবং বর্তমানে বেশ মোটা হয়েছে।
সবশেষে, কোনো ব্যক্তির নামের সঙ্গে ওই ব্যক্তির কাজ বা অন্যকিছুর সম্পর্ক তৈরি করে স্মৃতিতে সেতু তৈরি করতে হবে। যেমন : একজনের নাম কাইয়ুম। সে চারুকলায় পড়ে। তার লক্ষ্য বড় শিল্পী হওয়া। এই স্মৃতিগুলোর সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন—সে কাইয়ুম। কাইয়ুম চৌধুরী বলে একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ছিলেন। এই কাইয়ুমও শিল্পী। পরে ওই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হলেই স্মৃতির সূত্র ধরে নামটি মনে পড়বে।
বিবিসির মতে, নাম মনে রাখার পদ্ধতিগুলো প্রথম প্রথম অনেকের কাছেই অদ্ভুত মনে হতে পারে। তবে এটি নিজের মধ্যেই তো রাখছেন। নতুন কোনো বন্ধুকে নিশ্চয়ই বলতে যাচ্ছেন না কীভাবে তাঁর নাম মনে রেখেছেন। যখন ওই ব্যক্তিকে অন্য কারো সঙ্গে পরিচিত করে দিতে যাবেন, তখন নিজের মস্তিষ্কের স্মৃতির সূত্র ধরে নামটি মনে করবেন।
এবার আপনার স্মৃতির একবার পরীক্ষা হয়ে যায়। এই প্রতিবেদনে তিনটি নাম বলা হয়েছে। নামগুলো মনে করার চেষ্টা করুন তো। কী ভুলে গেছেন। নামের সঙ্গের সূত্রগুলো মনে করুন।