অভিমত
অ্যাপস ভিত্তিক সিএনজি কতটা সম্ভব?
বর্তমান সময়ে ঢাকার গণপরিবহনে সিএনজি, উবার-পাঠাও আলোচিত বিষয়টি। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া, যাত্রী জিম্মিসহ নানা রকম ভোগান্তি থেকে যাত্রীদের মুক্ত করার জন্য পরিবহণ খাতে আসে তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়া। শুরু হয় অ্যাপস ভিত্তিক উবার-পাঠাও পরিবহণ ব্যবস্থা।
এই অ্যাপস ভিত্তিক উবার-পাঠাও পরিবহন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর সিএসজি অটোরিকশা এক ধরনের কোণঠাসা হয়ে গেছে। তাদের যাত্রী কমে গেছে, তাদের ভাড়া কমে গেছে। লোকসানের মুখে পড়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল সিএনজি শ্রমিকদের সংগঠন। সরকারের কাছে কয়েক দফা দাবিও তুলে ধরেছিল। চাপের মুখে তারা ইউটার্ন নিয়েছে। বলছেন সিএনজিও অ্যাপসের মাধ্যমে চলবে। অ্যাপস ব্যবহার করে যাত্রীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অটোরিকশা ডাকতে পারবেন। হ্যালো সিএনজি রাইড শেয়ারিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান এমনই অ্যাপ তৈরির কাজ করছে।
বাংলায় তৈরি অ্যাপটি শিগগরিই গুগুল প্লেস্টোরে ছেড়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং বিভাগ। আর এ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে চরম নৈরাজ্যে থাকা অটোরিকশা খাতকেও ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
অর্থাৎ, রাইড শেয়ারিং কোম্পানির অধীনে আসছে সিএনজি অটোরিকশা। এই প্রক্রিয়া চালু করতে সিএনজি শ্রমিক ঐক্যপরিষদ ড্রাইভার-মালিকদের স্মার্টফোন ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা ইতিমধ্যে ড্রাইভারদের অ্যাপস ব্যবহারের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করেছেন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে সিএনজি অটোরিকশা মিলবে বিভিন্ন রাইড শেয়ার অ্যাপের ন্যায় মাধ্যমে।
কিন্তু অ্যাপস ভিত্তিক সিএনজি অটো রিকশা চালানো কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এই পদ্ধতিতে সিএনজি মালিক সমিতি আশার মুখ দেখতে পেলেও হেতে বিপরীত ঘটনাও ঘটতে পারে। এই পদ্ধতি সিএনজির ক্ষেত্রে কতটা সফল হবে তাও কিন্তু প্রশ্ন সাপেক্ষ।
সিএনজি চালকদের অধিকাংশ সাধারণ ফোন ব্যবহার করেন। ‘চ্যানেল আই’ অনলাইনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ৯৯ শতাংশই সাধারণ বা ফিচার ফোনগুলো ব্যবহার করেন সিএনজি চালকরা। তা ছাড়া অনেকেই অ্যাপস ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না। এ ছাড়া দেশে যে ৭০ হাজার সিএনজি চালক রয়েছেন তাদের অধিকাংশের মধ্যেই তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে কোনো জ্ঞান নিয়ে নেই। হয়তো প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞান দেওয়া হবে, অ্যাপস ব্যবহার সম্পর্কে জানানো হবে, সিএনজি চালকরা হয়তো স্মার্টফোনও কিনবেন। কিন্তু এই পদ্ধতিতে উবার, পাঠাও এর মতো তাদের সফলতা নাও আসতে পারে। এতে কিছুদিন পরেই তারা অ্যাপস বিমুখ হওয়ার সম্ভব রয়েছে।
তা ছাড়া, এই মুহূর্তে তারা চাইলেই অ্যাপস পদ্ধতিতে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ অ্যাপস ভিত্তিক যে রাইড শেয়ারিং নীতিমালা হচ্ছে, এখনো এখানে সিএনজি অটোরিকশাকে রাখা হয়নি। এই নীতিমালায় অটোরিকশা না রেখে ২০০৭ সালের সিএনজি অটোরিকশা সেবা নীতিমালা অনুসরণ করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু অ্যাপে সিএনজি অটোরিকশা চালানোর আগে রাইড শেয়ারিং নীতিমালায় অন্তর্ভুক্তি না হলে ভাড়াসহ নানা রকম জটিলতা তৈরির সম্ভবনা রয়েছে।
যখন অ্যাপসের মাধ্যমে কোনো অটোরিকশাকে ডাকা হবে তারা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ৫০-১০০ টাকা আরো বেশি করে যে চাবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা তো থাকছে না। কেননা, এর আগে যখন, অটোরিকশা সিএনজিগুলো চলাচলের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মিটার পদ্ধতিতে ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল তখন সেটা তারা অনুসরণ করেননি। অ্যাপস ভিত্তিক পরিবহনে অন্তর্ভূক্তি হওয়ার পর এই স্বভাব থেকে তারা নাও বের হতে পারে। এ রকমটি হলে যাত্রীরা আবারও এই সিএনজি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে চালকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে শুধু অর্থের অপচয় ছাড়া আর কোনো ফলের সম্ভাবনা থাকবে না।
এখন দেখা যাক, অ্যাপস পদ্ধতিতে সব সিএনজিচালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হয় কি না। আর এটা হলে চালকদের স্বভাব কতটা পরিবর্তন হয় সেটাও দেখার বিষয়। সব কিছু জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েকটা মাস।
লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও প্রতিনিধি, বাংলাদেশ প্রতিদিন