আমাদের মাশরাফি ও একটি অ্যাম্বুলেন্স
আমরা প্রত্যেকেই কিছু না কিছু করি। কেউ ছাত্র, কেউ সাংবাদিক, কেউ ডাক্তার, কেউ ক্রিকেটার, কেউ শিল্পী, আরো কত কত কী। এসব পরিচয়ের আগে আমাদের বড় পরিচয় হলো আমরা মানুষ। আমাদের বিবেক ও অনুভব আছে, আমাদের দায়িত্বও অনেক। মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রবৃত্তিও আমাদের মানবিকতার প্রকাশ। সমাজে, রাষ্ট্রে যাঁরা আমাদের আইডল, তাঁরা যদি মানুষের কল্যাণে কাজ করেন, তবে সেটি আমাদের মনকে তীব্রভাবে নাড়া দেয়। কেননা, আমরা তাঁদের অনুকরণ করি, অনুসরণ করি। বিশেষত, তারকারা যদি মানবসেবায় কাজ করেন, তবে সাধারণ মানুষও মানুষের কল্যাণে কাজ করতে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত হন। যেহেতু তারকাদের কাজকর্ম দ্বারা মানুষ প্রভাবিত হন, তাই তাঁদের দায়িত্বও অনেক বেশি থাকে।
ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের অধিনায়ক। তিনি তারকা ক্রিকেটার হলেও তাঁর কিছু কিছু কাজ ক্রিকেটকেও ছাড়িয়ে গেছে বহু আগে। তিনি আমাদের কাছে হৃদয়ের মানুষে পরিণত হয়েছেন। সম্প্রতি একটি খবরে চোখ আটকে গেল : ‘মাশরাফিকে দেওয়া কথা রেখেছে রংপুর রাইডার্স’। স্বাভাবিক প্রশ্ন জাগে, কী কথা রেখেছে রংপুর রাইডার্স? সংবাদে বলা হয়েছে : বিপিএল শুরুর আগে মাশরাফি বিন মুর্তজা রংপুর রাইডার্সের কর্ণধার সাফওয়ান সোবহানের কাছে 'রংপুর এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন'-এর জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিলেন। মাশরাফির চাওয়া পূরণ করেছে রংপুর রাইডার্স। কর্তৃপক্ষ ‘নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন’-এর কাছে অ্যাম্বুলেন্সটি হস্তান্তর করেছে। মাশরাফি জানিয়েছেন, 'প্রয়োজনে যে কেউ এই অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যবহার করতে পারবেন।'
জানা যায়, নড়াইলবাসী দীর্ঘদিন ধরে অ্যাম্বুলেন্স সমস্যায় ভুগছিল। বিশেষত হতদরিদ্র মানুষরা রোগী নিয়ে প্রায়ই সমস্যায় পড়তেন। সাধারণ মানুষের এই সমস্যা সমাধানেই মাশরাফি রংপুর রাইডার্সের কাছে একটি অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিলেন। রংপুর রাইডার্স কেবল তাদের দেওয়া কথাই রাখল না, কথা রাখার মধ্য দিয়ে তারা উপকৃত করল নড়াইলবাসীকে।
মাশরাফি চাইলে নিজের জন্য কিছু চাইতে পারতেন। চাইতে পারতেন তাঁর পরিবারের জন্যও। কিন্তু তিনি চেয়েছেন সাধারণ মানুষের জন্যে। মানুষের কষ্ট তাঁকে ভাবিয়েছে। সেই সমস্যা সমাধানে তিনি উদ্যোগও নিয়েছেন। এখানেই তাঁর উদারতা ও মহত্ত্ব। মানবিক বোধ থেকেই 'নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা করেছেন মাশরাফি।
নড়াইলবাসীর উন্নয়নে এ সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া তিনি অনেকভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সে খবর মিডিয়ায়ও এসেছে। মাশরাফির কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। এ ক্ষেত্রে তিনি সাধারণ মানুষ তো বটেই, অন্য তারকাদের জন্যও অনুসরণীয় হতে পারেন।
মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য তারকাদের অনেক সুযোগ রয়েছে। সে সুযোগটুকু সবার কাজে লাগানো উচিত। একটি অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে মাশরাফি ছোট হননি, বরং তিনি বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন। এরই মধ্যে যাঁরা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। অন্য তারকারা যদি তাঁদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমাজ উন্নয়নে কাজ করেন, মানুষের পাশে দাঁড়ান তবে সাধারণ মানুষ যে বিশেষ উপকৃত হতো, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মাশরাফিকে তাঁর মহত্ত্বের জন্য অভিবাদন। এই মহত্ত্বের জগতে অন্য তারকাদেরও স্বাগতম।
লেখক : প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক, বাঁক।