দশে মিলে করি কাজ
তারুণ্যের স্বপ্নের ভাসমান সেতু
তারুণ্য এক শক্তি। তারুণ্য চাইলেই পারে যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে। তারুণ্যই পারে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। তারুণ্যই পারে পরিবর্তন করতে পারে সমাজব্যবস্থাকে। তারুণ্য যে কত বড় শক্তি, তার একটি বড় প্রমাণ মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের ঝাঁপা অঞ্চলে একটি ঘটনা।
একটি সফল উদ্যোগের ফলে মনিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের ঝাঁপা অঞ্চলে প্রায় ২০ হাজার মানুষের স্বস্তি এলো। ওই অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হয়ে গেল। সেখানে আর কখনো সেতুর অভাবে মারা যাবে না মানুষ। ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়ার ভোগান্তি হবে না। ঘাম ঝরানো কৃষকের জমির ফসল আর নষ্ট হবে না। বলছি দেশের বৃহত্তম ভাসমান সেতুর কথা।
যশোরের ঝাঁপা বাঁওড় অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি স্বাধীনতার ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও দূর করতে পারেননি কোনো জনপ্রতিনিধি। দূর করতে পারেননি হাজারো মানুষের যোগাযোগের কষ্টকে। অবশেষে ঝাঁপা গ্রামের স্কুলশিক্ষকের এক সফল উদ্যোগে দূর হয়েছে মানুষের দুর্ভোগ। ২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি শিক্ষক আসাদুজ্জামান তাঁর পরিকল্পিত বুদ্ধিতে নিজ এলাকার মানুষের সঙ্গে এক সভা করেন। সেখানে একটি ভাসমান সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। ৫৬ যুবককে নিয়ে গ্রামবাসীর অর্থায়নে শুরু করেন সেতুর নির্মাণকাজ।
নির্মাণের জন্য মেহেদী হাসান টুটুলকে সভাপতি মনোনীত করে গঠিত কয়েছে সেতু বাস্তবায়ন কমিটি। কমিটির সহসভাপতি আবদুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক লিটন, সহসাধারণ সম্পাদক প্রভাষক শাহাদাৎ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মোশাররফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুজ্জামান, সদস্য মাওলানা নুরুল হক, আবু মুছা, আক্তারুজ্জামান, অসিম কুমার, আসাদুজ্জামান প্রমুখ।
হাজারো মানুষের দোয়া আর ভালোবাসায় গড়ে তোলেন দেশের বৃহত্তম ভাসমান সেতু। এক হাজার ফুট দীর্ঘ সেতুটি তৈরি করতে ব্যবহার করা হয় ৮৩৯টি প্লাস্টিক ড্রাম। সেতুটির ফ্রেম তৈরি হয়েছে লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে। ফ্রেমের দুই পাশে দুসারি ড্রাম দিয়ে পানিতে ভাসানো হয়েছে। সেতুতে অ্যাঙ্গেল ও পাত ব্যবহার হয়েছে ২০টন। পাটাতনের সিট ব্যবহার হয়েছে ১৩টন।
সব মিলিয়ে এই সেতুটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৬০ লাখ টাকা। ৫৬ জন মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি হয় ভাসমান সেতুটি। সেতুটি ব্যবহারের জন্য জনগণকে গুনতে হবে না আলাদা কোনো অর্থ। আগের নিয়োমেই নৌকার টোল পরিমাণ টাকা নেওয়া হবে ব্যবহারকারীদের কাছে থেকে।
সেতুটি নির্মাণের পর যশোরের জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দীন ফিতা কেটে সেতুটি উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওবায়দুর রহমান, ঝাঁপা ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল হক মন্টু, চালুয়াহাটি ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ সরদার, রাজগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল লতিফ, রাজগঞ্জ বাজার কমিটির সভাপতি আবুল বাসারসহ স্থানীয় সুধীজন।
এদিকে হাসি ফুটে উঠেছে ঝাঁপা গ্রমাবাসীর মাঝে। সেতুটি গ্রামের মানুষের যোগাযোগ সুবিধায় বিশাল এক ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন কোমলপুরের ইউপি সদস্য আবদুর গফুর। তিনি বলেন সবচেয়ে বড় কথা হলো, আসা-যাওয়ার যোগাযোগব্যবস্থায় অনেক অবদান রাখবে এই ভাসমান সেতু। অনেক সময় দূরদূরান্ত থেকে ফিরতে রাত হলে পার হওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হয়, ঘাটে নৌকা থাকে না, সেতুটি নির্মাণের ফলে সব সমস্যার সমাধান হলো। তা ছাড়া এলাকার উন্নয়নে অনেক বড় ভূমিকা রাখবে এই সেতু।
নিজ জায়গা থেকে নিজের অবস্থানের পরিবর্তন করতে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এমন অর্জন বিশাল এক অবদান হয়ে থাকল বাংলাদেশে।
লেখক : শিক্ষার্থী