অভিমত
চালের দাম কি কমবে না?
‘রাসেল, ২৫ কেজির বস্তা কত?’
‘ভাইয়া আবারও ২৫ টাকা বাড়ছে। ১৪৯০ টাকা।’
‘মানে কি?’
‘ভাইয়া আপনে ১৪৮০ টাকা দেন।’
‘কেন বাড়াল?’
‘ভাইয়া তাতো জানি না।’
কথা বাড়াই না। নিয়মিত চাল কিনি এই রাসেলের কাছ থেকে। চালের বড় দোকান ওর। শুধু চালই বিক্রি করে। পাইকারি বিক্রেতা। ১৪৮০ টাকা, সাথে রিকশা ভাড়া ২০ টাকা। ১৫০০ টাকাই পড়ল। কেজি হিসেব করলে পড়ল ৬০ টাকাই।
চালের দাম নিয়ে সরকারের কোনো মাথা ব্যথাই যেন নেই। বাড়ছে বাড়ুক। মুনাফাখোররা হাতিয়ে নিক কোটি কোটি টাকা, তাতে কি? আমাদের সরকারের তো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, ক্ষতি হলে হচ্ছে সাধারণ মানুষের। যাদের মাসে হিসেব করে চলতে হয়। সরকারের এই নীতি চলছে বেশ কিছুদিন ধরে।
সরকার মাঝে মাঝে আওয়াজ দিয়েও আবার কেন যেন থেমে যায়। এই যে থেমে যাওয়া সংস্কৃতি চালু হয়েছে, এটাই এই সরকারের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে একসময়। কোথায় যেন আটকা পড়ে আছে সরকার। কাদের কাছে যেন জিম্মি হয়ে পড়েছে সরকার। কারা যেন পেছন থেকে সরকারের সুতায় টান দিয়ে বলে খবরদার। বেশি উচ্চবাচ্য করবেন না চাল নিয়ে, পুরো দেশ অচল করে দেব। আমরা ইচ্ছে করলেই ভাতের চাল নিয়ে দুর্ভিক্ষ লাগিয়ে দিতে পারি। সারাদেশের মানুষ না খেয়ে থাকবে। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে এক সপ্তাহও লাগবে না। বিশ্ব জানবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে। সুতরাং খবরদার। আমরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াব। দাম বাড়াব ২৮ টাকা, কমাব ৭/৮ টাকা। একদম চুপ করে থাকবেন। আপনার দু-একজন মন্ত্রী মাঝে মাঝে মিছে দরদ দেখাবে সচিবালয়ে। দেখাক, তাতে আমাদের কিচ্ছু যায় আসে না। আপনাদের পাওনা আপনারা জায়গা মতো পেয়ে যাবেন। আমাদের আমাদের মতো ব্যবসা করতে দেন। কোনো বাগড়া দেবেন না। আপনাদের কেউ কেউ ইচ্ছে করলে আমাদের সাথে ব্যবসা করতে পারেন। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু ওই যে সচিবালয়ে বসে সাংবাদিকদের ডেকে চাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কথা বলবেন, চিৎকার করে করে বলবেন- জেলের ভাত খাওয়াবেন, তা চলবে না। আরে আমরা চাল সাপ্লাই না দিলে তো জেলেও ভাত রান্না হবে না।
আমাদের মতো নিম্নবিত্তরা কোথায় যাবে? তা নিয়ে ভাবনা নেই সরকারের। তাদের দরকার ক্ষমতায় টিকে থাকা। আর বিরোধী দলের টার্গেট ক্ষমতায় যাওয়া। নিম্নবিত্ত খেল না মরল সেটা তাদের চিন্তার মধ্যে নেই। চালের দাম নিয়ে কেন অনশন করেছে না বিরোধী দল? করুক প্রেসক্লাবের সামনে। সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে আমরণ অনশনের ডাক দিক বিরোধী দল। চালের দাম আগের জায়গায় না আসা পর্যন্ত জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করুক। চিৎকার করে বলুক বিরোধী দলের নেতারা ‘আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই না। সাধারণ মানুষের জন্য আমরা রাস্তায় নামলাম। আপনারা ক্ষমতায় থাকুন সারাজীবন, কিন্তু দালের দাম কমান। গরিব মানুষকে বাঁচতে দিন। নিম্নবিত্ত আর নিম্নমধ্যবিত্তকে বাঁচতে দিন। যতদিন দাম না কমাবেন, কিংবা মুনাফাখোরদের বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা না নেবেন, আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’
মন্ত্রীমহোদয় তো কম হম্বিতম্বি করেননি চালের দাম বাড়ানো নিয়ে, সচিবালয়ে। তাদের টিকিটি ধরার মতো সৎ সাহস থাকলে বহু আগেই চালের দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসত। আর অর্থমন্ত্রী বলেই ক্ষান্ত যে, চালের দামের কারণে গরিব মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু এসব মায়া কান্না কেঁদে আর কতদিন ক্ষমতায় থাকতে চান আপনারা?
এসব রাজনীতি জনগণ বোঝে। শুধু একবার সুযোগ দেন জনগণকে তাদের প্রাপ্য ভোটাধিকারের। একটা সুষ্ঠু নির্বাচনই বুঝিয়ে দেবে জনগণ কখনো ভুল করে না।
চাল নিয়ে আর জনগণের সাথে রাজনীতি না করে মুনাফাখোরদের ব্যাপারে সচেতন হোন। দেখেন কারা কারা এই মুনাফাখোরদের সাথে জড়িত। যাদের কারণে গলার জোর কমে যায় আপনাদের। সৎ সাহসে ঘাটতি দেখা দেয়।
শুধু একমুঠো ভাতই তো চায় সাধারণ মানুষ। সেই ভাতের চালের দামটা কমাতে চেষ্টা করুন। ক্ষমতায় থাকুন যত দিন ইচ্ছে। মানুষের কথা একটু ভাবুন।
সরি, প্রিয়মানুষ, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ সরকার। আপনাদের কাছ থেকে মানুষ একটু বেশিই আশা করে। কারণ বঙ্গবন্ধুর নামটি জড়িয়ে আছে আপনাদের সাথে।
লেখক : ছড়াকার ও সাংবাদিক