চালের মূল্য আরো বাড়বে! তা হলে?
চালের দাম নীরবেই বেড়ে চলেছে। কিছুদিন স্থিতিশীল থাকে, আবার বাড়ে। এ নিয়ে সরকারের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই। মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরেই যেন আছে, এমনভাবেই কথা বলেন মাঝেমধ্যে মন্ত্রীসহ সরকারে থাকা কর্তাব্যক্তিরা।
গত বছর চালের বাজারে ঘটে যাওয়া ঘটনা সবার মনে আছে। ৭০ টাকা কেজি খেতে হয়েছে চিকন চাল। আর মোটা চাল কিনতে হয়েছে ৫৪ থেকে ৫৮ টাকায়। দেশব্যাপী আকাল যেন লেগেছিল। চাল সংকটের ধুয়া তুলে একশ্রেণির মুনাফাখোর কামিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। চালের মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে রাজনীতিও ছিল, এমন কথাও শোনা গেছে। কুষ্টিয়ার এক চাল ব্যবসায়ী বিরোধী দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাই নাকি সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চালের বাজারকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে। কত কথাই না শোনা গেছে তখন।
কিন্তু এখন কেন চালের দাম কমছে না? এখনো কি বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে জড়িতরা চালের মূল্য বাড়িয়ে চলেছে? সরকার তো কম সুবিধা দিল না ব্যবসায়ীদের। তা হলে কেন এখনো কেন চিকন চাল খেতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৬২ টাকায়?
মূল প্রসঙ্গ থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে ভূমিকা দিলাম এতক্ষণ। এবার আশঙ্কার জায়গায় আসি। গত বছর সুনামগঞ্জের হাওরে এপ্রিল মাসে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টির কারণে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। এর ফলে ১৫৪টি হাওরের বোরো ধান তলিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় জেলার তিন লাখ ২৫ হাজার ৯৯০টি কৃষক পরিবার। সেই অকাল বন্যায় হাওরের ধানের ক্ষতি হওয়ায় এবং বৈশ্বিক কিছু কারণে দেশে চালের দাম হু-হু করে বেড়ে যেতে থাকে।
দেশব্যাপী আলোচনায় উঠে আসে চালের দাম। মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে। অনেকেই ভেবেছিল, চালের মূল্য না জানি আবার ১০০ টাকা কেজি হয়ে যায়। সরকারের কিছুটা সচেতনতা আর গণমাধ্যমের সংবাদ পরিবেশনের কারণে দামের ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরা গিয়েছিল। কিন্তু একসময় সরকারের নীরবতা আবার চালের মূল্যকে বাড়তে সুযোগ করে দেয়।
পত্রিকা মারফত জানা গেল যে অকাল বন্যার কারণে চালের মূল্য বেড়েছিল, সেই বন্যায় ভেঙে যাওয়া বাঁধ নির্মাণে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। এবার সেই সুনামগঞ্জে দুই লাখ ২১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। তাই তো এবার বর্ষায়ও যদি পাহাড়ি ঢল নামে, তবে আবার ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। সেই সুযোগটা নেবে মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা।
কেন সঠিক সময়ে বাঁধ নির্মাণ শেষ হয়নি? গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কাজ হয়েছে ৬৫ ভাগ। জানা গেছে, ৫০টি হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ হচ্ছে। এ কাজে ১২২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আগে কখনো এত টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
এবার যাঁরা কাজ পেয়েছেন, তাঁরা বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। এখন সাধারণ মানুষের আশঙ্কা, আদৌ কাজ শেষ হবে কি না কে জানে। কারণ যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের কাজের ভালো-মন্দের হিসাব চাইতে যাবে কারা?
সুতরাং কোনোভাবে কাজ করে শেষ করতে না করতে যদি বর্ষাকাল চলে আসে, তবে তো আর কথাই নেই। অকাল বন্যায় আবার তলিয়ে যাবে বাঁধ, পানির তোড়ে মাটি চলে যাবে ফসলি জমিতে। কে দেখতে যাবে মাটি আসলে কতটুকু ফেলা হয়েছিল বাঁধে। অর্থাৎ আবারও বর্ষা শেষে বরাদ্দ হবে, মিলবে কাজ, কামানো যাবে টাকা।
এ মুহূর্তে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের হাওরে গিয়ে দেখা দরকার কাজ আদৌ কতটা হয়েছে। তা না হলে এবারও বন্যায় বাঁধের ক্ষতি হলে তলিয়ে যাবে ফসলি জমি। আকাল লেগে যাবে কৃষক পরিবারে। হাহাকার লাগবে চালের বাজারে।
লেখক : ছড়াকার ও সাংবাদিক।