অভিমত
চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও আমাদের কর্তব্য
গত বছরেরই অক্টোবরের এক রাতে কেরানীগঞ্জে চলন্ত বাসে ধর্ষণের শিকার হন এক পোশাককর্মী। আমরা ভাবি, এখানেই হয়তো থেমে যাবে এই নারকীয় কাণ্ড। কিন্তু কিছুদিন আগে রূপা ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ফাঁসির রায়ের পরও আমরা দেখি ঢাকার রাজপথে চালক ও সহকারীরা নারীকে বাসের ভেতর আটকে রাখার চেষ্টা করে, সংসদ ভবনের সামনে। সে ঘটনায় বাস থেকে চালকের সহকারীকে ধাক্কা দিয়ে নেমে গিয়ে বাঁচেন ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী। এর আগে গত বছর নভেম্বরে মামুন আল সোহাগ নামের এক পাঠাও রাইডার চলন্ত বাসে নারীর কান্না শুনে এগিয়ে যান এবং অন্যদের সহায়তায় ধর্ষিত হওয়ার হাত থেকে বাঁচান এক নারীকে।
সর্বশেষ উত্তরার তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে ঘটে একই ধরনের ঘটনা। গাড়িতে যাত্রী আর না থাকায় চালক ও তার সহকারীকে বারবার বলেও বাস থেকে নামতে পারেননি এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বাসের চালক-সহকারীরা তাঁকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে তুরাগ পরিবহনের ৩০টির বেশি বাস আটক করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং সারা দেশের শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান।
পরিবহনে নারী নির্যাতন ও লাঞ্ছনার বিষয়ে নিশ্চয়ই তরুণরা এগিয়ে আসবে। কিন্তু সবকিছু কেবল আন্দোলন-প্রতিবাদ করেই কেন বন্ধ করতে হবে এই দেশে? এখানে কি কর্তৃপক্ষ বলে কিছু নেই? তারা কি বোঝে না, কখন কী করতে হবে? পরিবহন খাতে যাঁরা বিনিয়োগ করেছেন, তাঁদেরও তো মা-বোন আছে, পরিবার-পরিজন আছে। তাঁরা কী করে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিকে দিনের পর দিন সমর্থন দিয়ে যান? বাসচালকরা কি আজীবন এমন গণ্ডমূর্খই থাকবে? তারা কি চিরদিন কেবল গরু-ছাগল চিনে সার্টিফিকেট পেতে থাকবে? কিংবা সার্টিফিকেট বিষয়টিতেই তাদের গা করার দরকার নেই?
ধরে নিলাম অতীতে এ বিষয়ে কেউ কিছু বলেনি বা চালকরাও এমন অনৈতিক কাজে খুব একটা জড়ায়নি। কিন্তু এখন যেহেতু এগুলো অহরহ হচ্ছে। চোখের সামনে এত এত নৈতিক অধঃপতনের চিত্র ভেসে উঠছে। এরপরও কি মালিকরা চিন্তা করবেন না তাঁদের চালক ও সহকারীদের অন্তত কিছু শিক্ষা দরকার, প্রশিক্ষণ দরকার, মানবিকতার চর্চা দরকার? সুযোগ তো নেই এমন নয়। সরকারের ইচ্ছা আছে, জনগণের দাবি আছে, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আবশ্যক হয়ে পড়েছে, এরপরও চালক ও তার সহকারীদের যথাযথ উপায়ে প্রশিক্ষণের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ কেন নেওয়া হচ্ছে না?
বাংলাদেশের পরিবহন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কী করছে? নৈরাজ্য থামাতে যেমন প্রশিক্ষণ ও নৈতিকতার বিষয় আছে, তেমনি অপরাধীকে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনার বিষয়ও আছে। এমনকি অনেকের অভিযোগ আছে, বাংলাদেশে এ ক্ষেত্রে চলমান আইনকানুনও যথেষ্ট নয়। এগুলোর দ্রুত সংস্কার করা দরকার। এ বিষয়ে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কী পদক্ষেপ নিচ্ছে? এসব প্রশ্ন মানুষের মনে আছে। সংশ্লিষ্টদের উচিত এসবের উত্তর দেওয়া এবং খোঁজা।
লেখক : সাংবাদিক, আরটিভি।