আপনার জিজ্ঞাসা
সাততলা আসমান বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ।
জুমাবারের বিশেষ আপনার জিজ্ঞাসার ৫২৬তম পর্বে পবিত্র কোরআনে বর্ণিত সাত আসমান কেমন, সে সম্পর্কে জানতে সাভার থেকে টেলিফোন করেছেন নজরুল ইসলাম বাদল। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : আমি অনেকবার বাংলায় তর্জমা করে কোরআন শরিফ পড়েছি। সেখানে আল্লাহ বলেছেন যে, আমি সাততলা আসমান, সাততলা জমিন সৃষ্টি করেছি। প্রথম আসমান আমি প্রদীপমালা দ্বারা সজ্জিত করেছি। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই সাততলা আসমান বলতে কী বোঝানো হয়েছে? বাকি ছয় আসমান কি?
উত্তর : সাততলা বা সাত স্তরে আসমান, এই কথাটি কোরআনে কারিমের কোথাও আসেনি। বরং আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সাত আসমান সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে।’ দুনিয়াতে আমরা যে আসমান দেখতে পাচ্ছি, এই আসমানের ঠিক ওপরে আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা আরেকটি আসমান তৈরি করেছেন, তার ওপর আরেকটি আসমান তৈরি করেছেন, এভাবে আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা সাতটি আসমান তৈরি করেছেন—প্রথম আসমান, দ্বিতীয় আসমান, তৃতীয় আসমান এভাবে। মুসতাদরাকের মধ্যে একটি হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে, হাদিসটির সনদ নিয়ে বিতর্ক আছে, তবে একদল ওলামায়েকেরাম এই হাদিসকে সহিহ বলেছেন। হাদিসটি অনুসারে এই যে আসমান রয়েছে, প্রত্যেকটি আসমান একে অপরের থেকে ৫০০ বছরের দূরত্বে অবস্থান করছে, অর্থাৎ ৫০০ বছরের পথ। কিন্তু এই ৫০০ বছর কীভাবে বা কোন মাধ্যমে পাড়ি দেওয়া হবে, সেটি উল্লেখ করা হয়নি। সেটি কি গাড়িতে যাবেন, নাকি আলোকবর্ষে যাবেন, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো বর্ণনা আসেনি।
সুতরাং, এই তথ্যের চেয়ে অতিরিক্ত কোনো তথ্য গ্রহণ করার মতো ধারণক্ষমতা মনে হয় আমাদের নেই। যদি থাকত, তাহলে আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা বিস্তারিত বর্ণনা করতেন। এই আসমান সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞানও কোনো তথ্য দিতে পারেনি, যেখানে বিজ্ঞানের এত উৎকর্ষ সাধন হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘এই দুনিয়ার আসমানকে আমি বিভিন্ন ধরনের লাইট দিয়ে সুসজ্জিত করেছি।’ এই লাইটগুলো সম্পর্কেও আমাদের স্পষ্ট কোনো জ্ঞান নেই। আমরা নক্ষত্রমালার অনেককিছুই এখনো জানি না। সুতরাং পরবর্তী আসমান সম্পর্কে এতটুকু জ্ঞানই আমাদের জন্য যথেষ্ট।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘আমি মানুষকে জ্ঞানের খুব অল্পই দিয়েছি।’ আল্লাহ আমাদের যতটুকু জানিয়েছেন, ততটুকুর মধ্যেই যদি আমরা থাকতে পারি, অধ্যয়ন করতে পারি, উপলব্ধি করতে পারি, তাহলে আমাদের জীবন সুন্দর হতে পারে।