আপনার জিজ্ঞাসা
আল্লাহ কোরআনে কোন ওসিলা তালাশ করতে বলেছেন?
নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত,পরিবার, সমাজসহ জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামবিষয়ক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান ‘আপনার জিজ্ঞাসা’। জয়নুল আবেদীন আজাদের উপস্থাপনায় এনটিভির জনপ্রিয় এ অনুষ্ঠানে দর্শকের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন বিশিষ্ট আলেম ড. মুহাম্মদ মনজুর ইলাহী।
জুমাবারের বিশেষ আপনার জিজ্ঞাসার ৫৩৩তম পর্বে ওসিলা শব্দের সঠিক অর্থ জানতে চেয়ে বেড়া, পাবনা থেকে টেলিফোন করেছেন আনিসুর রহমান। অনুলিখনে ছিলেন জহুরা সুলতানা।
প্রশ্ন : আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা ওসিলা তালাশ করো, আল্লাহর নৈকট্য পেতে হলে ওসিলা লাগে’। এই ওসিলা শব্দের অর্থ কি? অনেকে বলেন ওসিলা অর্থ হচ্ছে, পীর ধরা। এই ওসিলা শব্দের সঠিক অর্থ জানতে চাচ্ছি।
উত্তর : ওসিলা শব্দের অর্থ হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। আল্লাহ বলেছেন, ‘আল্লাহর নৈকট্য অর্জনকে তোমরা অনুসন্ধান করো’।
আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায় ভালো আমলের মধ্য দিয়ে, দোয়ার মধ্য দিয়ে, আল্লাহর আসমা এবং সিফাতের ওসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার মধ্য দিয়ে। ওসিলা অর্জনের এই তিনটি স্বীকৃত পদ্ধতি ইসলামে আছে। যারা এখানে ওসিলার মানে বলছেন কোনো ব্যক্তিকে ধরা বা পীর ধরা, তাঁরা ওসিলার একটি ভুল অর্থ করেছেন যেটি কোনো বিশুদ্ধ তফসিরে আসেনি। ইবনে কাথিরে আসেনি, ফতহুল কাদিরে আসেনি, তবারিতে আসেনি, এ রকম নির্ভরযোগ্য যে বড় তফসিরগুলো আছে, সেগুলোর কোনোটিতেই আসেনি। ওই সব ব্যক্তি ওসিলার অর্থ করেছেন মাধ্যম, আল্লাহর কাছে মাধ্যম তালাশ করো অর্থাৎ লবিং। তাঁদের মতে এই লবিং বা মাধ্যম হচ্ছেন ওলি-আউলিয়ারা, পীর, বুজুর্গ, নবী, বিশেষ ব্যক্তি। কিন্তু এই ধারণাটি পুরোটাই ভুল। আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘যখন তোমার কাছে আমার সম্পর্কে আমার কোনো বান্দা জিজ্ঞাসা করে, তাহলে জেনে রাখ, আমি তাঁদের খুবই কাছাকাছি। আমরা যখন নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, ওমরা করি, হজ করি, কোরবানি করি, সাদকা করি আমাদের কি কোনো মাধ্যম লাগে? এগুলো সবই তো আমরা আল্লাহর জন্য করি।
অতএব এর মাঝে কোনো মাধ্যম ইসলাম সমর্থন করে না। আরেকটি বিষয় বলি, যেটি নিয়ে এই ধারণাটি ভুল হয়েছে, সেটি হলো, আল্লাহর কাছে শাফায়াত করা। মানুষ মনে করে এই বুজুর্গ ব্যক্তি, আল্লাহর ওলি, আল্লাহর কাছে আমার জন্য শাফায়াত করবেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহর কাছে শাফায়াত করলেন, এটি আমি কীভাবে বুঝলাম? সুরা আল বাকারার আয়াতুল কুরসির মধ্যে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কে তাঁর কাছে শাফায়াত করবে?’ তার মানে শাফায়াত আমরা নির্ধারণ করতে পারব না, আমি আপনাকে বলতে পারব না যে, কেয়ামতের দিন আপনি আমার জন্য শাফায়াত করুন।
এই মধ্যস্বত্ব ভোগীদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে বক্তব্য রয়েছে, ইহুদিদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তাঁদের মতো মধ্যস্বত্ব ভোগী হইয়ো না।’ আপনি যদি কোনো বুজুর্গের কাছে কিছু চাইতে চান তাহলে একটি জিনিসই চাইতে পারেন, সেটি হলো, যদি তিনি জীবিত থাকেন তাহলে আপনার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করবেন। কিন্তু সেই বুজুর্গ মৃত হলে আর তাঁর কাছে এটি চাওয়া যাবে না। যারা বুজুর্গ আছেন, জ্ঞানী আছেন, আলেম আছেন, তাঁদের কাছে আমরা দ্বীন শিখব এবং দোয়া চাইব, এর বেশি কিছু নয়, এ ক্ষেত্রে কোনো মধ্যস্বত্ত্বভোগী থাকবে না।