পিএইচপি কুরআনের আলোর সেরা হাফেজ নেত্রকোনার মুসা
পথচলার দীর্ঘ ১১ বছর পূর্ণ করেছে পিএইচপি কুরআনের আলো প্রতিভার সন্ধানে অনুষ্ঠান। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে দর্শক শ্রোতাদের ভালোবাসায় বারবার সিক্ত হয়েছে এ অনুষ্ঠান। খুদে হাফেজদের কণ্ঠে মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বাণী দর্শকদের যেমন বিমোহিত করেছে তেমনি দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে কুরআনের আলোকিত বার্তাও। অনুষ্ঠানের এবারের গ্র্যান্ড ফিনালের আসরও ছিল জমজমাট। আজ রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এই অনুষ্ঠান হয়।
সর্ববৃহৎ টেলিভিশনভিত্তিক জাতীয় হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ২০১৯ পিএইচপি কুরআনের আলোয় এবার প্রথম হয়েছেন নেত্রকোনার হাফেজ মো.আবু বকর সিদ্দিক মুসা। দ্বিতীয় হয়েছেন পিরোজপুরের হাফেজ মো. জুনায়েদ আওরঙ্গজেব। তৃতীয় হয়েছেন নরসিংদীর হাফেজ মো.তানভীর আহমেদ। চতুর্থ হয়েছেন মৌলভীবাজারের হাফেজ খুজাইমা ইবনে মাতলুব। তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। অনুষ্ঠানটির মিডিয়া পার্টনার এনটিভি।
শিশুর নিষ্পাপ কণ্ঠে মহান আল্লাহর শ্বাশত বাণী সুরের জাদুতে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে দীর্ঘ একমাস ধরে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের হৃদয়জুড়ে। রমজানের শেষ বিকেলে মহান রবের বাণী তন্ময় হয়ে তিলাওয়াত করেন হাফেজরা। কণ্ঠের মাধুর্য, শুদ্ধ উচ্চারণ আর ইসলামের শান্তিময় আবেশ ছড়িয়ে রমজান মাসজুড়ে দর্শকদের মহাগ্রন্থ আল কুরআনের শ্বাশত বাণীতে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন এসব খুদে হাফেজরা।
গ্র্যান্ড ফিনালেতে খুদে হাফেজদের তিলাওয়াত শুনতে এসেছিলেন সুধীজন, এসেছিলেন গুরুজনরাও। মধুর তিলাওয়াত ও বিচারকদের কঠিন প্রশ্নের পরীক্ষা শেষে অনুষ্ঠানের শেষে ঘোষণা করা হয় বিজয়ীর নাম।
চ্যাম্পিয়ন হাফেজ আবু বকর সিদ্দিক মুসার হাতে ক্রেস্ট ও পুরস্কার তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ অতিথিরা। এ ছাড়া দ্বিতীয় স্থান অধিকারী হাফেজ মো. জুনায়েদ আওরঙ্গজেব, তৃতীয় স্থান অধিকারী হাফেজ মো. তানভীর আহমেদ ও চতুর্থ স্থান অধিকারী হাফেজ খুজাইমা ইবনে মাতলুবের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।
ইসলামের শান্তি সাম্য আর ভ্রাতৃত্বকে উড্ডীন করে খুদে হাফেজদের কণ্ঠে উচ্চারিত কুরআনের এই আলো আলোকিত করেছিল লাখো শ্রোতার হৃদয়। উপস্থিত সবার কণ্ঠেই ছিল এমন নান্দনিক আয়োজনের গুনগান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, এনটিভির পরিচালক আশফাক উদ্দিন আহমেদ, বাংলা ক্যাট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ফকির, রহিম আফরোজ বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক নিয়াজ রহিম, বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক মোয়াজ্জেম হোসাইন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে পিএইচপি কুরআনের আলো প্রতিভার সন্ধান ২০১৯ প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। ছবি : এনটিভি
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ইসলাম সাম্য ও সত্যের পথ। কুরআন এ ধর্মের প্রধান বাণী। কুরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এই ক্ষুদে হাফেজরা বিশ্বের দরবারে দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি নিজে ছোট বেলা থেকে কিরাত প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অনেকবার প্রথম হয়েছি। কুরআনের এ ধরনের মহতী অনুষ্ঠানে আসতে পেরে নিজেকে অনেক ধন্য মনে করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও ইসলামের খেদমত করছেন। কওমী মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি, প্রত্যেক উপজেলাপর্যায়ে একটি সরকারি মসজিদ প্রতিষ্ঠা এবং প্রত্যেক উপজেলায় মসজিদের ইমামদের ভাতা প্রদান করে ইসলামের সেবা করে চলেছেন। আজকের এ ক্ষুদে শিশুরা তাদের প্রতিভার যে নজির রেখেছেন আমি সত্যি মুগ্ধ হয়েছি।
এ সময় ড. হাছান মাহমুদ এ অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি এ অনুষ্ঠানকে আরো বড় পরিসরে আয়োজন করার জন্য ধর্মমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। একইসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ঢাকা উত্তর সিটি কপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ক্ষুদে হাফেজদের এ প্রতিযোগিতা আমাকে মুগ্ধ করেছে। কুরআনের এ অনুষ্ঠান অব্যাহত রাখতে আমি সব ধরনের সহযোগিতা করে যাব।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এনটিভির পরিচালক আশফাক উদ্দিন আহমেদ বলেন, কুরআনের এ প্রতিযোগিতা দীর্ঘ ১১ বছর ধরে চলে আসছে। সারা দেশের ২৫ হাজার প্রতিযোগী থেকে সেরা চারজনকে বাছাই করা হচ্ছে। এনটিভি পরিবারের পক্ষ থেকে এখানে সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ভবিষ্যতেও এনটিভি পরিবার কাজ করবে। এনটিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী অনুষ্ঠানের আয়োজক এবং প্রতিযোগী সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এনটিভি পরিবারের পক্ষ থেকে ভবিষ্যতেও এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে আলহাজ সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ছোট্ট মনিরা এ বয়সে কুরআনকে ধারণ করেছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে এ ক্ষুদে কুরআনের বাহকরা বিশ্বদরবারে পৌঁছাবে বলে আশাবাদ করছি। এখানে যারা অংশ নিয়েছে তারা সবাই যোগ্য। তবু প্রতিযোগিতার জন্য কেবল বাছাই করতে হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।