সাক্ষাৎকার
‘বাংলাদেশ এখন আর সেই দলটি নেই’
আর কদিন বাদেই অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরে আসছে। সফরে দুই টেস্ট খেলবে তারা। এই দলের বিপক্ষে কেমন করবে বাংলাদেশ, সে সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন সাবেক তারকা ক্রিকেটার এবং বর্তমান ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খান। এনটিভি অনলাইনের পাঠকের জন্য তা তুলে ধারা হয়েছে :
প্রশ্ন : শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফরে আসছে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল। নিশ্চয়ই এটা আমাদের জন্য সুখকর সংবাদ?
আতহার আলী : অবশ্যই এটা আমাদের জন্য সুখকর সংবাদ। ১১ বছর পর তারা বাংলাদেশ সফরে আসছে। বাংলাদেশের জন্য দারুণ সুযোগ, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে ঘরের মাঠে খেলতে যাচ্ছে। তা ছাড়া এ দলের কেউই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ খেলেনি। তাদের জন্যও দারুণ সুযোগ নিজেদের প্রমাণ করার। আশা করছি, এ সফরে আমাদের দল ভালো কিছু করবে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের সাফল্যে কতটুকু আশাবাদী আপনি?
আতহার আলী : আমরা ঘরের মাঠে খেলব। এটা আমাদের জন্য বড় একটা সুবিধা। এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে সাফল্য পাওয়া অসম্ভব নয়। সেই সামর্থ্য আমাদের আছেও। গত বছর ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের মতো দলের সঙ্গে টেস্ট সিরিজে ড্র করেছিলাম। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও ভালো করার দারুণ সুযোগ রয়েছে আমাদের। বিশেষ করে গত কিছুদিন আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদের মাটিতে আমরা শততম টেস্টে জিতেছিলাম। এবারও সে ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে বাংলাদেশ দল, এমনটা আশা করাই যায়। আমারও মনে হয়, বাংলাদেশ ভালো কিছু করবে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে অস্ট্রেলিয়াকে ২-০ তে হারাতে আশাবাদী। তা কি সম্ভব?
আতহার আলী : কথাটা শুনতে খুবই ভালো লাগে। আমরাও চাই অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ বড় সাফল্য পাবে। তা ছাড়া নিজেদের মাটিতে খেলছে বলে খেলোয়াড়রাও আত্মবিশ্বাসী থাকবে। তা ছাড়া কোচ খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করতে হয়তো এমন কথা বলেছেন। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে ভালো করতে হলে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং—তিন বিভাগেই ভালো করতে হবে। আর অস্ট্রেলিয়ার এই দল খুবই শক্তিশালী দল। যাদের সামর্থ্য আছে আমাদের হারানোর। এই জায়গায় আমাদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে তাদের হারানো খুব একটা সহজ হবে না।
প্রশ্ন : অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কেমন সাফল্য পেলে খুশি হবেন?
আতহার আলী : বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ জিতুক, এই চাওয়াটা আমাদের সব সময়ের। আর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হলে তো কথাই নেই। আসন্ন এই সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে জিতলে খুশি হবো। আর ২-০তে জিতলে খুবই ভালো লাগবে। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের সাফল্য সব সময়ই কমনা করি। সেটা যেকোনো ক্ষেত্রেই হোক না কেন। এই অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারাটা হবে আমাদের জন্য অনেক বড় একটি অর্জন।
প্রশ্ন : অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাশক্তি দলের বিপক্ষে জয়ের আশা করছে বাংলাদেশ। তাদের শক্তির জায়গা কোনটি, যেটি বাংলাদেশ দলকে আশাবাদী করে তুলেছে?
আতহার আলী : সবাই বলে বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণ হচ্ছে দলের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা। কিন্তু আমি বলব, বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, সাকিব আল হাসান ও ইমরুল কায়েসের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান রয়েছেন। সঙ্গে আছেন সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমনের মতো তরুণরা। তাঁরা বড় পার্টনারশিপ গড়লে ভালো কিছু ইনিংস গড়া সম্ভব হবে। আর দলের সংগ্রহ বড় হলে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলা সম্ভব হয়। তা ছাড়া তামিম এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিণত। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর খেলায় সেটা ভালোভাবেই চোখে পড়ছে সবার। এ সিরিজে তাঁর কাছে প্রত্যাশাটা একটু বেশিই থাকবে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের কোনো দুর্বলতা চোখে পড়ে কি, যেখানে আরো উন্নতি করা প্রয়োজন?
আতহার আলী : প্রায়ই দেখা যায়, আমাদের ব্যাটসম্যানরা সেট হওয়ার পর বড় সংগ্রহের পথে যখন এগিয়ে যাচ্ছেন, তখন আউট হয়ে যাচ্ছেন। এটি বাংলাদেশ দলের দুর্বলতার একটি জায়গা। যেখানে আমাদের আরো উন্নতি করা প্রয়োজন। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের আরেকটি দুর্বলতার জায়গা পেস বোলিং। অনেক সময় বোলাররা লাইন-লেন্থ ঠিক রেখে বল করতে পারেন না। কোর্টনি ওয়ালশের মতো কিংবদন্তি পেসার এখন আমাদের বোলিং কোচ। তাঁর অধীনে পেসাররা আরো উন্নতি করবে বলে আমার বিশ্বাস। আর এই তাঁর একটি প্রতিফলন দেখতে পারব বলে আমার বিশ্বাস।
প্রশ্ন : ঘরের মাঠে এই সিরিজে মুস্তাফিজের সাফল্য পাওয়া কতটুকু জরুরি?
আতহার আলী : মুস্তাফিজ চোট থেকে ফিরেছে খুব বেশি দিন হয়নি। ঘরের মাঠে এই সিরিজে তাঁর জন্য পরীক্ষা নিজেকে ফিরে পাওয়ার। ওয়ালশের মতো কোচকে পাশে পেয়ে নিশ্চয়ই সে নিজেকে তৈরি করার সুযোগ পেয়েছে। সে ভালো করতে পারলে দলের জন্য ভালো হবে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলের সাফল্য পেতে সুবিধা হবে।
প্রশ্ন : ব্যাট হাতে তামিম-মুশফিকরা পারবে জ্বলে উঠতে?
আতহার আলী : প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের ভালো করার ওপর নির্ভর করে দলের সাফল্য। দলের অন্যতম শক্তির জায়গা ব্যাটিং লাইন। তাঁরা যদি উইকেটে লম্বা সময় থাকতে পারেন, দলকে একটা ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। আমাদের ব্যাটসম্যানদের সেই সামর্থ্য রয়েছে। বিশেষ করে তামিম-মুশফিকরা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে দলের সাফল্যের পথটা সুগম হবে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের কাছে হারলে অস্ট্রেলিয়ার র্যাংকিংয়ে অবনতি হওয়ার শঙ্কা থাকবে। তাঁরা নিশ্চয়ই নিজেদের সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করবে ভালো করতে?
আতহার আলী : আমাদের মনে রাখতে হবে, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি দল। র্যাংকিংয়ে তারা এখন হয়তো খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। তবে তারা আমাদের বিপক্ষে জেতার জন্যই খেলবে। আর জেতার মতো সামর্থ্য তাদের আছেও।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মোকাবিলা করার জন্য অস্ট্রেলিয়া তাদের স্পিন শক্তি বাড়িয়ে আসছে। তাদের মোকাবিলায় নিশ্চয়ই সতর্ক থাকতে হবে?
আতহার আলী : অস্ট্রেলিয়া তাদের স্পিন শক্তি বাড়িয়ে এই সফরে আসছে, তাতে আমি মোটেও অবাক হইনি। তারা নিশ্চয়ই অবগত, আমাদের এই কন্ডিশনে খেলার জন্য স্পিন শক্তি বাড়ানো খুবই জরুরি। সে বিবেচনায় তারা হয়তো তিনজন স্পিনার নিয়ে আসছে। হ্যাঁ, এঁদের মোকাবিলায় আমাদের আরো সতর্ক থাকতে হবে।
প্রশ্ন : গত বছর ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সে আত্মবিশ্বাস নিশ্চয়ই কাজে আসবে এই সিরিজে?
আতহার আলী : ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের মতো দলকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে এখন একটা আত্মবিশ্বাস জন্মেছে যে এখন তারা বড় দলগুলোর বিপক্ষেও টেস্ট ম্যাচ জেতার সামর্থ্য রাখে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের সে আত্মবিশ্বাস এবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজেও কাজে আসবে বলে আমার বিশ্বাস।
প্রশ্ন : অস্ট্রেলিয়াও নিশ্চয়ই বাংলাদেশের মোকাবিলায় সতর্ক থাকবে?
আতহার আলী : অবশ্যই, বাংলাদেশ এখন আর সেই দলটি দল নেই। এসেই তাদের হারিয়ে দিয়ে চলে গেলাম। বাংলাদেশ এখন অনেক পরিণত। এই দলের বিপক্ষে জিততে হলে ঘাম ঝরাতে হবে বড় দলগুলোকেও।