১৯৩৮ বিশ্বকাপ : ইতালির টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয়
দুয়ারে কড়া নাড়ছে ক্রীড়াবিশ্বের অন্যতম বড় আসর ফুটবল বিশ্বকাপ। আর মাত্র ২৮ দিন পরেই পুরো বিশ্ব মেতে উঠতে যাচ্ছে ফুটবলের উন্মাদনায়, যার আঁচটা পাওয়া যাচ্ছে এখন থেকেই। ফুটবল বিশ্বকাপ সামনে রেখে এনটিভি অনলাইনও নিয়ে এসেছে বিশেষ আয়োজন। আজ পাঠকদের সামনে হাজির করা হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বকাপের গল্প। ১৯৩৮ সালে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপের তৃতীয় আসরের অনেক অজানা কথা নিয়ে থাকছে আজকের প্রতিবেদন।
বিশ্বকাপের শুরুটা হয়েছিল যার হাত ধরে, সেই জুলে রিমের দেশ ফ্রান্সে প্রথমবারের মতো ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই আয়োজিত হয় ১৯৩৮ সালে। ফুটবল ইতিহাসের তৃতীয় বিশ্বকাপের শিরোপাটাও জিতে নিয়েছিল ইতালি। ফলে দুবার অংশ নিয়ে টানা দুবারই শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট মাথায় তোলে মুসোলিনির দেশ। এ আসরের পর অবশ্য ১৯৪২ ও ১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে বিশ্বকাপই মাঠে গড়ায়নি।
দক্ষিণ আমেরিকা বা ইউরোপ যেকোনো এক মহাদেশে হবে বিশ্বকাপ, এমনটাই ছিল তৃতীয় আসরের পরিকল্পনা। আয়োজক দেশ হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছিল ফ্রান্স, জার্মানি ও আর্জেন্টিনার নাম। সেখানে ভোটে জিতে ফ্রান্সই দায়িত্ব পায় বিশ্বকাপ আয়োজনের। উরুগুয়ের ক্ষোভ তো ছিলই, সঙ্গে এবার যোগ হলো আর্জেন্টাইনদের ক্ষোভ। ব্যস, প্রথম বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা দুই দলই অনুপস্থিত তৃতীয় আয়োজনে। ফ্রান্সের মোট নয় শহরের নয়টি মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছিল আসরের ১৬টি ম্যাচ।
১৯৩৮ বিশ্বকাপের বল ‘অ্যালেন’
বাছাইপর্ব শেষে এই বিশ্বকাপেও ১৬ দল সুযোগ পেয়েছিল মূলপর্বে লড়ার। তবে অস্ট্রিয়া শেষ মুহূর্তে হিটলারের ‘আনস্লুজ’ নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সরে আসে বিশ্বকাপ থেকে। ফলে ১৫ দল নিয়েই মাঠে গড়ায় তৃতীয় বিশ্বকাপ। অংশ নেওয়া দলগুলো ছিল বেলজিয়াম, চেকোস্লোভাকিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, হাঙ্গেরি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, কিউবা ও ডাচ ইস্টইন্ডিজ (ইন্দোনেশিয়া)। কিউবাও ইন্দোনেশিয়ার সেটাই ছিল, এখন পর্যন্ত প্রথম ও শেষ বিশ্বকাপ আসর।
দ্বিতীয় বিশ্বকাপের মতো এই আসরও মাঠে গড়িয়েছে দুই গ্রুপের নকআউট পর্ব দিয়ে। ১৯৩৮ সালের ৪ জুন থেকে মাঠে গড়ায় প্রথম পর্বের খেলা। সে পর্ব শেষে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নেয় ইতালি, ফ্রান্স, চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন ও প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া কিউবা। সেবারই প্রথম বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বের দেখা পেয়েছিল ব্রাজিল।
স্বাগতিক ফ্রান্স, চেকোস্লোভাকিয়া, সুইজারল্যান্ড ও কিউবাকে হারিয়ে সেমিফাইনালে পা রাখে শিরোপাধারী ইতালি, ব্রাজিল, হাঙ্গেরি ও সুইডেন। ব্রাজিলকে পরাজিত করে ফাইনালে ওঠে ইতালি। অন্যদিকে হাঙ্গেরি শিরোপা জেতার ম্যাচে পা রাখে সুইডেনকে হারিয়ে। ব্রাজিল আর সুইডেনের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে জয় পায় সাম্বার দেশ।
প্যারিসের এস্তেদিও অলিম্পিক ডি কলম্বেস স্টেডিয়ামে ৪৫ হাজার দর্শকের সামনে মাঠে ফাইনালের লড়াইয়ে মাঠে নেমে ছিল হাঙ্গেরি ও ইতালি। তবে ৪-২ ব্যবধানের সহজ জয় নিয়ে হাঙ্গেরির স্বপ্ন ভেঙে দেয় ইতালি। প্রথম দুই অংশগ্রহণেই দুই বিশ্বকাপ জেতা দলটির জন্যই অবশ্য শিরোপা হয়ে যায় ‘সোনার হরিণ’। সেবার ট্রফি উঁচিয়ে ধরার সময় বোধ হয় ইতালির খেলোয়াড়রা একবারও ভাবেনি পরের শিরোপাটা পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হবে আরো ৪৪ বছর!