ম্যাচ হারলেও হৃদয় জিতেছে বাংলাদেশ
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ প্রথম অংশ নেয় ১৯৮৬ সালে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ২০০০ সালের ২৬ জুন ওয়ানডে স্ট্যাটাস লাভ করে। এর পরই শুরু হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের উত্থানের গল্প। স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা প্রমাণ করে দেখিয়েছে নিজেদের। এমনকি বিগত চারটি এশিয়া কাপের তিনটিই খেলেছে বাংলাদেশ। তবে এবারে নিজেদের দাপট দেখিয়েছে টাইগাররা। ১৪তম এশিয়া কাপ হয়তো বাংলাদেশ পায়নি ঠিকই, তবে তাঁদের ক্রিকেট নিবেদন জয় করে নিয়েছে ভক্তদের মন।
গতকাল শুক্রবার আবুধাবিতে এশিয়া কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ এবং ভারত। প্রায় সবকটি একপেশে ম্যাচে জিতে ফাইনালে এসেছে ভারত। তবে গ্রুপ পর্ব থেকেই লড়াই করে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইনজুরিতে পড়েন ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। পাঁজরে চোট নিয়ে খেলছিলেন মুশফিক। একটি করে শটের পর মুশফিকের মুখ কুঁচকে থাকা অনেকদিন মনে রাখবে ভক্তরা। সেই মুশফিককেই সঙ্গ দিতে তামিম গ্লাভস কেটে হাতে কোনোমতে পরে মাঠে নামেন শেষ উইকেট জুটিতে। স্ট্রাইকে এক হাতে ব্যাট করেন তামিম। দেশের জন্য খেলতে গিয়ে নিজেকে কতটুকু উজাড় করে দেওয়া যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তামিম। এশিয়া কাপ খেলারই কথা ছিল না বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের। গত জানুয়ারির সেই ত্রিদেশীয় সিরিজে পাওয়া চোট না সারিয়েই বিসিবির অনুরোধে মাঠে নেমেছেন তিনি। মাশরাফির হাঁটুতে তো অস্ত্রোপচার হয়েছে অনেক। এমন অবস্থায়ও পিছিয়ে যাননি সিনিয়র খেলোয়াড়রা।
তবে সেই প্রথম ম্যাচ থেকেই তামিম ইনজুরিতে পড়ায় তাঁকে দলে পায়নি বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে হারলেও সুপার ফোরের ম্যাচে নিজেদের উজাড় করে খেলেছে তরুণরা। মুশফিক-মোহাম্মদ মিঠুনের জুটি বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে নিরাপদ স্কোরে। এবারের এশিয়া কাপে সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে বোলারদের পারফরমেন্স। নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়েছেন তাঁরা। মাশরাফি বিন মুর্তজা যেভাবে দলকে নিয়ে লড়াই করে গেছেন, জয় ছিনিয়ে এনেছেন পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে, তা প্রশংসিত হয়েছে ক্রিকেট মহলে।
এমনকি এশিয়া কাপে নিজেদের তৃতীয় ফাইনালে এসে মাত্র ২২২ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় বাংলাদেশ। ভারতের মতো ক্রিকেটীয় পরাশক্তির কাছে সেই রান তুচ্ছ। তবে সেটিই ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ করে তুলেছিল বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। ভারতকে লক্ষ্যভেদ করতে খেলতে হয়েছিল ইনিংসের সর্বশেষ বল পর্যন্ত। এই বাংলাদেশ দল জয়ের খুব কাছে গিয়ে হেরেছে অনেকবার। তবে খেলোয়াড়দের ক্রিকেটের প্রতি নিবেদন এবং মাঠে নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার ঘটনা সাড়া ফেলেছে ভক্তদের মনে। এমনকি সাকিবের চোটের চিকিৎসা করতে গিয়ে ডাক্তাররা জানিয়েছেন, আর কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করলেই সম্পূর্ণ হাতে ছড়িয়ে পড়ত সংক্রমণ। নিজেদের ঝুঁকি নিয়েও এশিয়া কাপ খেলেছেন বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা।
খেলোয়াড়দের এই পেশাদারত্ব, এই আত্মত্যাগ এবং দেশের প্রতি নিবেদন বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের মন ছুঁয়ে গেছে। তাই ট্রফি না পেলেও ঠিকই ভক্তদের মন জয় করেছেন টাইগাররা।