হ্যাটট্রিক-ম্যান আলিসের রূপকথার গল্প!
এ যেন ‘স্লামডগ মিলিয়নিয়র’ বা হলিউডি কোনো সিনেমার স্ক্রিপ্টকে হার মানানো গল্প। চাইলে আরব্য রজনীর গুপ্তধনের সন্ধান পাওয়া তরুণ আলাদিনের গল্পগাঁথার সাথেও তুলনা করতে পারেন। বিপিএলে ঢাকা ডায়নামাইটসের স্পিনার আলিস আল ইসলামের উত্থান এমনই এক বিস্ময়কর গল্পের মতো। জীবনের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে হ্যাট্রিক করে দলকে জিতিয়ে আলিস হার মানিয়েছেন রূপকথার গল্পকেও।
ঢাকা ডায়নামাইটস নামটির মতো দলের স্কোয়াডটাও সুপারস্টারে ঠাসা। ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টির বিশ্বমাতানো তারকাদের কয়েকজন খেলছেন ঢাকায়। দেশীয় ক্রিকেটারদের মধ্যেও বড় নামগুলো থাকে ঢাকা শিবিরে। দলের ক্রিকেটাররা তাই প্র্যাকটিস করতে বা মাঠে পানি নিয়ে নামলেও টিভি ক্যামেরা আর সংবাদমাধ্যমের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন এই তারকারাই। কিন্তু এক লহমায় সব আলো নিজের দিকে কেড়ে নিয়েছেন অজানা এক নাম আলিস আল ইসলাম।
জীবনে কখনো বড় টুর্নামেন্ট বা ম্যাচ দূরে থাক, মিরপুরের মতো মাঠেই কখনো নামার সুযোগ হয়নি অ্যালিসের। স্রেফ নেটে ঢাকা ডায়নামাইটসের ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে বল করার সুযোগ হয় তাঁর। আর সেখানেই প্রথাগত অফ স্পিনের পাশাপাশি কিছুটা দুসরা করতে পারার সক্ষমতার কারণে চোখে পড়ে যান ঢাকার কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের। এরপর ঢাকার স্কোয়াডে সুযোগ পাওয়া আলিস তৃতীয় ম্যাচে এসে মূল একাদশে ডাক পেয়ে যান।
ম্যাচে অভিষেকের সময় ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান তারকা সুনীল নারিন ক্যাপ পরিয়ে দেওয়ার সময়ও হয়তো ভাবেননি মাঠে কী ঘটতে যাচ্ছে। দলের বোলিংয়ের সময় শর্ট ফাইন লেগে পরপর দুই বলে দুটি সহজ ক্যাচ ছেড়ে দিয়ে নার্ভাসনেসের চূড়ান্ত প্রকাশটাই দেখান। কিন্তু সেখানে গল্পটার শুরুও হয়নি। প্রথম দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষকে স্রেফ উড়িয়ে দেওয়া ঢাকা আরেক ফেভারিট রংপুরের বিপক্ষে বড় পরীক্ষাতেই পড়ে গেছে তখন। শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে রাইলি রুশো আর মোহাম্মদ মিঠুনের পাল্টা আক্রমণে তখন ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকে গেছে ঢাকা। এমনই পরিস্থিতিতে অধিনায়ক সাকিবের ডাকে বল করতে এসে প্রথম ওভারেই আলিস স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন মাত্র ৪৪ বলে ৮৩ রান করা বিপজ্জনক রাইলি রুশোকে।
আর ব্যক্তিগত তৃতীয় ওভারের শেষ তিন বলে ঘটিয়ে ফেলেন জীবনের সবচেয়ে বড় ঘটনা। রংপুরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার মোহাম্মদ মিঠুনকে চতুর্থ বলে বোল্ড করেন আলিস । আর পরের দুই বলে মাশরাফি আর ফরহাদ রেজার উইকেট নিয়ে করে ফেলেন এবারের বিপিএলে প্রথম হ্যাট্রিক। তাঁর এমন অবিস্মরণীয় বোলিংয়ে প্রায় হারা ম্যাচে দারুণভাবে ফিরে আসে ঢাকা। ইনিংসের শেষ ওভারে ১৪ রান রক্ষা করতে বোলিংয়ে এসে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন এই তরুণ।
ম্যাচ শেষে আলিসের বোলিং অ্যাকশনের শুদ্ধতা নিয়ে কিছুটা প্রশ্ন উঠেছে। তবে নেটের সামান্য এক বোলার থেকে জীবনের প্রথম ম্যাচে খেলতে নেমে হ্যাট্রিক করার এমন নজির বিশ্ব ক্রিকেটেই আর নেই। ক্যাচ ছেড়ে চাপে পড়ে যাওয়া এই তরুণ খাদের কিনারা থেকে পথ দেখিয়েছেন দলকে। তাই অন্য কোনো পার্শ্ব আলোচনা আপাতত ভাবাবে না তাঁকে। নাম না জানা এক অচেনা ক্রিকেটার থেকে আলোচনার শীর্ষবিন্দুতে চলে আসা আলিস আপাতত উপভোগ করুন প্রতিটি মুহূর্ত।