স্বয়ং ক্লপ বললেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য’
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে মঙ্গলবার রাতে বার্সেলোনার মুখোমুখি হওয়ার আগে পাঁড় লিভারপুল সমর্থকও সম্ভবত ভাবেননি, রূপকথার গল্প রচিত হতে যাচ্ছে। প্রথম লেগে ৩-০ গোলে জয়ী হওয়া বার্সেলোনা নেমেছিল লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজসহ নিজেদের সেরা দল নিয়ে। লা লিগায় তিন ম্যাচ বাকি থাকতেই এ মৌসুমে শিরোপা জিতে নেওয়া বার্সার ফর্মটাও তাদের পক্ষেই কথা বলছিল।
অন্যদিকে, চোটের কারণে লিভারপুল দলে ছিলেন না দলের সেরা তারকা মোহাম্মেদ সালাহ এবং ব্রাজিলিয়ান ফিরমিনো। ফাইনালে উঠতে হলে অন্তত চার গোলে জিততে হতো অলরেডদের। কিন্তু ফুটবলবিশ্বকে অবাক করে সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে কোণঠাসা অবস্থায় থাকা দলটিই বার্সাকে ৪-০ গোলে হারিয়ে ফাইনালে উঠে গেছে। আর সুবিধাজনক অবস্থায় থাকার পরও কাতালানদের এমন পরাজয়কে ‘শতাব্দীর সেরা পতন’ হিসেবে অভিহিত করেছে দলটির সমর্থকরা।
ফাইনালে উঠতে হলে একটা গোল দিলেই হয়ে যেত বার্সেলোনার। প্রথম লেগের আগে বার্সার মাঠ ন্যু ক্যাম্পে ড্র করলেও সেটাকে ভালো ফল বলেছিলেন লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ। জানতেন, সালাহ-ফিরমিনোকে ছাড়া দ্বিতীয় লেগে কোনো গোল হজম না করে চার গোলে ম্যাচ জেতাটা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু সেই অসম্ভটাই সম্ভব করার পর যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না লিভারপুল কোচের। ম্যাচের পর সংবাদমাধ্যমকে নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে বলেন, ‘বার্সার মতো দলের বিপক্ষে জেতা কঠিন। কিন্তু কোনো গোল না খেয়ে জেতা! প্রায় অসম্ভব! আমি জানি না ছেলেরা এটা কীভাবে করল।’
আবেগের তোড়ে ভেসে যেতে যেতে ইয়ুর্গেন ক্লপ বলেন, ‘ম্যাচের আগে আমি ছেলেদের বলেছিলাম, আমি মনে করি না এটা সম্ভব। কিন্তু যেহেতু তোমরা খেলবে, আমি মনে করি আমাদের একটা সুযোগ আছে। এটা অবিশ্বাস্য!’ সেই অসম্ভব কাজটাই বাস্তব করেছে লিভারপুলের খেলোয়াড়রা। ম্যাচ শুরুর সপ্তম মিনিটেই ডিভোক অরিগি গোল করে অলরেড শিবিরে আশা জাগান। ম্যাচের ৭৯ মিনিটে দলের হয়ে চতুর্থ গোল করে ফাইনালে তোলেন এই বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড। সঙ্গে উইনালডামের জোড়া গোলে রচিত হয় ৪-০ গোলে অবিশ্বাস্য জয়ের ইতিহাস।
ঠিক বিপরীত চিত্র বার্সা শিবিরে। মেসি আর সুয়ারেজরা গোলের পর গোল করেছেন মৌসুমজুড়ে। প্রথম লেগে ৩-০ গোলে জেতা ম্যাচে মেসির জোড়া গোলের পাশাপাশি সুয়ারেজ করেছিলেন একটি গোল। কিন্তু চরম প্রয়োজনের মুহূর্তে ফাইনালে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় একটি গোল পেতে ব্যর্থ হয় কাতালান দলটি। ম্যাচের শুরুতেই পিছিয়ে গিয়ে খেই হারানো দলটি আক্রমণাত্মক বা রক্ষণাত্মক, কোনো নির্দিষ্ট কৌশলই অবলম্বন করতে পারেনি।
ভাঙাচোরা দল নিয়েও দ্রুতগতির আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার কৌশল নেন ইয়ুর্গেন ক্লপ। আর লিভারপুল কোচের এই চমকে দেওয়া কৌশলের কাছে মার খেয়ে যায় আর্নেস্তো ভেলভার্দের শিষ্যরা। ম্যাচশেষে বিধ্বস্ত এবং হতবিহবল বার্সা ডিফেন্ডার সার্জিও বুসকেটস শুধু একটি বাক্যে বলেন, ‘আজ ওরা আমাদের চেয়ে ভালো ছিল।’