‘দ্রুতই আবার ম্যাচসেরা হব’
তাঁকে বলা হয় বাংলাদেশের ‘কাটার-মাস্টার’। ২০১৫ সালে অনেকটা ধূমকেতুর মতো বাংলাদেশ ক্রিকেটে আবির্ভাব তাঁর। এরপর যা হলো সেটাকে এককথায় বলা যায়, ‘এলাম, দেখলাম এবং জয় করলাম।’ তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মাঠটা খুব সহজ জায়গা নয়। প্রতিনিয়ত বোলারদের দুর্বোধ্য ডেলিভারিগুলোকে নিয়ে গবেষণা করতে থাকে প্রতিপক্ষ শিবির। তাই মুস্তাফিজের বিস্ময়কর কাটারও একসময় শুরুর ধার হারিয়ে ফেলতে থাকে। এরপর ইনজুরি আর বল হাতে কিছুটা ফর্মখরা মিলিয়ে ক্রিকেটাঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়ে যায়, ফুরিয়ে যাচ্ছেন ফিজ। তবে মুস্তাফিজ তো অন্য ধাতুতে গড়া একজন। বারবার ক্রিকেটবিশ্বকে চমকে দেওয়াই যেন তাঁর অভ্যাস।
আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচেও যেন অপরিচিত এক মুস্তাফিজকে দেখে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নির্ধারিত ১০ ওভারে দুই উইকেট পেলেও ৮৪ রান দিয়ে দলের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বোলার বনে যান ফিজ। তবে ঠিক পরের ম্যাচেই আবার সেই পুরোনো ঝলক নিয়ে হাজির হন বাঁহাতি পেসার। কাটারের জাদুতে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের রীতিমতো নাচিয়ে ছাড়েন এই তারকা পেসার। ৯ ওভার বল করে ৪৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন। টাইগারদের জয়ের ম্যাচে নির্বাচিত হন ম্যাচসেরা খেলোয়াড়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর এখন অনেকটাই নির্ভার মুস্তাফিজ। ওয়ানডেতে গত সেপ্টেম্বরে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ ৪ উইকেট পেয়েছিলেন বাঁহাতি এই পেসার। আর ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার জিতেছিলেন আরো অনেক দিন আগে। ২০১৭ সালে আইরিশদের বিপক্ষে এই ডাবলিনেই চার উইকেট শিকার করে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন। প্রায় দুই বছর পর ওয়ানডেতে আবার ম্যাচসেরার পুরস্কার নেওয়ার অনুভূতি জানিয়ে ম্যাচের পর আত্মবিশ্বাসী মুস্তাফিজ বলেন, ‘ম্যাচসেরা খেলোয়াড় হতে পেরে আমি খুবই খুশি। আশা করি, পরের ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কারটা জিততে খুব বেশিদিন সময় লাগবে না। প্রথম উইকেটটা নেওয়ার পরই আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।’
প্রায় চার বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন দেখেছেন নিজের চোখেই। সুসময়ের পাশাপাশি কঠিন সময়টাও পেরিয়ে এসে এখন অনেক পরিণত মুস্তাফিজ। তাঁর বলে আগের ধার নেই, এমন সমালোচনার জবাব দেন দারুণ ক্রিকেটীয় বিশ্লেষণে। বলেন, ‘যখন নতুন কোনো বোলার খেলতে আসে, তখন অনেকেরই তাঁর সম্পর্কে কিছু জানা থাকে না। আমার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। আর প্রথম দিকে আমি বেশিরভাগ ম্যাচ খেলেছি দেশে। আর ইনজুরির পর এখন বেশিরভাগ ম্যাচই খেলছি বিদেশের মাটিতে। যদি এখন দেশে খেলতাম, তাহলে পুরোনো আমাকেই দেখতে পেতেন। কারণ দেশের উইকেটগুলোতে বল একটু বেশি গ্রিপ করে আর বলের দিকটাও পরিবর্তন হয়ে যায়।’
ত্রিদেশীয় সিরিজের পরেই শুরু হবে বিশ্বকাপ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাওয়া আত্মবিশ্বাসটা সেখানেও নিয়ে যেতে চান মুস্তাফিজ। আর বিশেষ ভূমিকা রাখতে চান ডেথ ওভারের বোলিংয়ে। ক্রিকেটের মেগা আসরে ভালো বল করার প্রত্যাশা নিয়ে বলেন, ‘এখানে প্রথম ম্যাচে ভালো করতে পারিনি। তবে (পরের ম্যাচে) ভালো করায় অবশ্যই আত্মবিশ্বাস বাড়বে। দীর্ঘদিন ধরে ডেথ ওভারে বোলিং করতে করতে এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সামনেই বিশ্বকাপ, সেখানে ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে চাই আমি।’