যা কিছু প্রথম আইপিএলে
অবিস্মরণীয় এক ফাইনালের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে গেল আইপিএলের দ্বাদশ আসর। রোববার রাতে লাসিথ মালিঙ্গার শেষ বলের জাদুতে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে টসজয়ী মুম্বাই প্রথমে ব্যাট করে ১৪৯ রান করে। জবাবে ইনিংসের শেষ বলে শার্দুল ঠাকুরকে দুর্দান্ত এক ইয়র্কারে এলবিডব্লিউ করে মুম্বাইকে চতুর্থ আইপিএল শিরোপা এনে দেন মালিঙ্গা। এমন দুর্দান্ত ফাইনাল আইপিএলে আগে কখনো হয়েছে কি না, সেটা নিয়ে দর্শকদের মধ্যে দ্বিধা থাকতে পারে। তবে এমন কিছু ঘটনার সাক্ষী হয়েছে এবারের আইপিএল, যা আগের ১১টি আসরে কখনো দেখা যায়নি। আসুন, এক নজরে দেখে নেওয়া যাক আইপিএলের ইতিহাসে এবারই প্রথম ঘটা কিছু ঘটনা।
সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসর : এবারের আইপিএলকে বলা হচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। আসরের মোট ৬০টি ম্যাচের মধ্যে ১২টি ম্যাচের ফল হয়েছে শেষ ওভারে। উল্লেখিত ম্যাচগুলোতে জয়-পরাজয়ের ব্যবধান হয়েছে ১০ বা তার চেয়েও কম রান। সর্বনিম্ন ১১ পয়েন্ট পেয়ে পয়েন্ট তালিকায় সবার নিচে ছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। আর সর্বোচ্চ ১৮ পয়েন্ট পেয়েছে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস। পয়েন্ট তালিকায় সবার ওপরে এবং নিচে থাকা দলের মধ্যে মাত্র সাত পয়েন্টের ব্যবধানই বলে দিচ্ছে, কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে এবারের আসর।
৩২ খেলোয়াড় পরিবর্তন : এ মৌসুমে মোট ৩২ জন খেলোয়াড় বদল করে একাদশ সাজিয়েছে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। আইপিএলে এটা একটা রেকর্ড। দলের সঠিক সমন্বয় নিয়ে ধুঁকতে থাকা দলটি মৌসুমে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে দুটি ম্যাচও খেলেনি।
কলকাতার ৫৬ উইকেট : এ মৌসুমে খেলা ১৪ ম্যাচে প্রতিপক্ষের মোট ৫৬টি উইকেট নিতে পেরেছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলাররা। আইপিএলের কোনো আসরে এর আগে কোনো দল এত কম উইকেট নেয়নি। এ মৌসুমে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ সাতটি উইকেট নিতে পেরেছেন নাইট বোলাররা। স্বাভাবিক কারণেই মৌসুমের সর্বোচ্চ ২০ উইকেটশিকারির তালিকায় নাম নেই কলকাতার কোনো বোলারের।
২০৪.৮২ ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট : এবারের আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল ব্যাট হাতে ছিলেন খুনে মেজাজে। এবারের আসরে ২০৪.৮২ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন রাসেল। আইপিএলের ইতিহাসে কোনো মৌসুমে কমপক্ষে ১০০ বল খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট। এর আগের রেকর্ডটাও ছিল এই ক্যারিবীয় তারকারই। ২০১৫ মৌসুমে ১৯২.৯০ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছিলেন তিনি।
প্রতি ৪.৭৯ বলে একটি ছক্কা : আইপিএলে ব্যাটসম্যানরা চার-ছক্কা মারেন, কিন্তু একজন ব্যাটসম্যানের পক্ষে কত বল পরপর ছক্কা মারা সম্ভব? পরিসংখ্যান বলছে, এবারের আইপিএলে নিজের খেলা প্রতি ৪.৭৯ বলে একবার করে বল উড়িয়ে সীমানার বাইরে পাঠিয়েছেন আন্দ্রে রাসেল। কমপক্ষে ১০০ বল খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এটাই সবচেয়ে ঘনঘন ছক্কা মারার রেকর্ড। এর আগে এত ঘনঘন ছক্কা মারতে পারেনি আর কোনো ব্যাটসম্যান (আগের প্রতি ৫.৫২ বলে ছক্কা মারার রেকর্ডটাও রাসেলের)।
শেষ তিন ওভারে ১৩ বার ৫০ অধিক রান : আইপিএলের ম্যাচগুলোতে ডেথ ওভারে সাধারণত রানের ফোয়ারা ছোটান ব্যাটসম্যানরা। ২০১৯ আসরে যেন একটু বেশিই দেখা গেছে ব্যাপারটা। শেষ তিন ওভারে ৫০ বা এর চেয়ে বেশি রান করার ঘটনা ঘটেছে ১৩ বার। এর আগে এমন রেকর্ড হয়নি আইপিএলে।
ডেভিড ওয়ার্নারের পাঁচ শতাধিক রান : আইপিএলের ইতিহাসে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা পাঁচ আসরে পাঁচ শতাধিক রান করেছেন ডেভিড ওয়ার্নার। বিরাট কোহলিরও পাঁচ আসরে ৫০০ বা এর অধিক রান করার রেকর্ড আছে, তবে ডেভিড ওয়ার্নারই একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে পরপর পাঁচ আসরে এমন কীর্তি গড়তে পেরেছেন। ২০১৪ আসরে ৫২৮, ২০১৫ আসরে ৫৬২, ২০১৬ আসরে ৮৪৮, ২০১৭ আসরে ৬৪১ এবং এবার ৬৯২ রান করেন এই অসি ব্যাটসম্যান। নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০১৮ আসরে খেলা হয়নি তাঁর।
চেন্নাইয়ের স্পিন বোলিং বিপ্লব : এ মৌসুমে মোট ৬২ উইকেট শিকার করেছেন চেন্নাইয়ের স্পিনাররা। এর আগে আইপিএলের কোনো আসরে কোনো দলের স্পিনাররা এত বেশি উইকেট নিতে পারেননি। এর আগে কলকাতার স্পিনাররা গত আসরে ৫২টি উইকেট নিয়েছিলেন।
ইমরান তাহিরের ২৬ : এবারের আসরে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির ‘পার্পল ক্যাপ’ পুরস্কার জিতে নিয়েছেন চেন্নাই সুপার কিংসের দক্ষিণ আফ্রিকান তারকা ইমরান তাহির। এবারের আসরে মোট ২৬ উইকেট নিয়েছেন এই লেগস্পিনার। আইপিএলের কোনো আসরে এর আগে কোনো স্পিনার এত বেশি উইকেট নিতে পারেনি।