‘বিশ্বকাপ জিততে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ’
চারদিকে বেজে উঠেছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের দামামা। আর মাত্র ৯ দিন পর ইংল্যান্ডে শুরু হচ্ছে ওয়ানডে বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসর। আসর শুরুর আগে চলছে দলগুলোর শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি এবং স্কোয়াডে ছোটখাটো পরিবর্তন আনার কাজ। বিশ্লেষক এবং সাবেক ক্রিকেটাররা প্রতিনিয়ত জানাচ্ছেন নিজেদের বিশেষজ্ঞ মতামত। সেই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন ‘ক্রিকেটের বরপুত্র’ খ্যাত ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ব্রায়ান লারা। সম্প্রতি ক্রিকেটবিষয়ক একটি সংবাদমাধ্যমকে একান্ত সাক্ষাৎকারে ২০১৯ বিশ্বকাপ নিয়ে নিজের ভাবনার কথা জানান লারা। এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ।
প্রশ্ন : একসময় ওয়ানডে ক্রিকেটে রাজত্ব করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্লাইভ লয়েডের দল ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালে টানা বিশ্বকাপ জিতে নিল। সেই সময়ের ক্যারিবীয় দল নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
লারা : ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের সেরা সময় ছিল তখন। টানা দুই বিশ্বকাপ জেতার পর ১৯৮৩ বিশ্বকাপেও ফাইনালে উঠেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এতেই বোঝা যায়, সে সময় কতটা শক্তিশালী ছিলাম আমরা। বিশ্বের সেরা বোলিং আক্রমণ ছিল দলটার, যারা ম্যাচের পর ম্যাচ জিতিয়েছে। আর ব্যাটিংটা বিভাগটাও ছিল একেবারে নিখুঁত।
প্রশ্ন : ব্রায়ান লারা কখনো বিশ্বকাপ জিততে পারেননি, এটা কি কষ্ট দেয় না?
লারা : বিশ্বকাপ ঘনিয়ে এলেই ব্যাপারটা পোড়াতে থাকে আমায়। এখন তো আমার বয়স ৫০ হয়ে গেছে। আমার পক্ষে আর বিশ্বকাপ জেতা সম্ভব নয়। কিন্তু এটা মানতেই হবে যে আমাদের সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সবচেয়ে শক্তিশালী দল ছিল না। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম। এমনকি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিও জিতেছিলাম, কিন্তু বিশ্বকাপ জেতা হয়নি।
প্রশ্ন : বিশ্বকাপ জেতার জন্য একটি দলের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় গুণ কোনটি?
লারা : ধারাবাহিকতা। একটা দলকে ম্যাচের পর ম্যাচ জিততে হবে এবং টুর্নামেন্ট এগিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আত্মবিশ্বাসটাও অর্জন করতে হবে। শুধু ব্যাটিং বা বোলিং দিয়ে আপনি ম্যাচ জিততে পারবেন না, দলে ভারসাম্য থাকতে হবে। এবারের বিশ্বকাপ হবে প্রায় ৫০ দিনের, তাই ধারাবাহিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হবে। কোনো দল মাঝপথে ছন্দ হারালে বিপদে পড়বে। সে জন্যই আমি ধারাবাহিকতার কথা বলেছি।
প্রশ্ন : আপনার কি মনে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবার চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে?
লারা : আমার তো মনে হয়, কেন নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে কিছু দুর্দান্ত ক্রিকেটার আছে এখন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বেশ ভালো করেছে ওরা। এখন ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ভালো করার পালা। আমাদের ক্রিকেটাররা দুরন্ত ফর্মে আছে, এখন তাদের মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে এবং ধারাবাহিকতার দিকে খেয়াল দিতে হবে। প্রাথমিকভাবে সেমিফাইনাল খেলার লক্ষ্য থাকা উচিত ওদের। সেখান থেকে আবার নতুন করে শুরু করবে।
প্রশ্ন : ভারতীয় দলকে নিয়ে কী বলবেন?
লারা : ভারত বিশ্বকাপ জিতলে আমার মনে হয় না কেউ অবাক হবে। ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে ওরা ভালো খেলছে। ভারতের দলটাও বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। ওরা বিশ্বকাপ জিতে নিলে সেটা মোটেই অঘটন হবে না। কোনো সন্দেহ নেই, ওরা খুবই শক্তিশালী দল।
প্রশ্ন : আপনার কি মনে হয় ইংল্যান্ড এবার ফেভারিট হিসেবে শুরু করবে?
লারা : আমি ঠিক বলতে পারব না ওরা ফেভারিট কি না, কিন্তু নিঃসন্দেহে ওরা এবার বিশ্বকাপ জেতার দাবিদার। যেকোনো খেলাধুলাতেই স্বাগতিক দল শিরোপা জিততে চায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই, নিজেদের সেরাটা দিয়ে এবার বিশ্বকাপ জিতে নিতে চাইবে ইংলিশরা। আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে, ১৯৭৫ থেকে বিশ্বকাপ শুরু হলেও ওরা কখনো শিরোপা জেতেনি। এবার অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি চেষ্টা করবে ইংল্যান্ড। সত্যি বলতে, ওদের এবারের দলটাও দুর্দান্ত। ওদের দলটার দিকে যদি তাকান, তাহলে সমালোচকরাও বলতে বাধ্য হবে যে সব বিভাগেই দারুণ সব ক্রিকেটার রয়েছে ওদের।
প্রশ্ন : অস্ট্রেলিয়া দলকে নিয়ে কী বলবেন?
লারা : স্মিথ আর ওয়ার্নারের ফিরে আসাটা নিঃসন্দেহে ওদের শক্তি বাড়াবে। আমাদের সময়ে সত্যিকার অর্থেই বিশ্বকাপে রাজত্ব করত অসিরা। কিন্তু বর্তমান দলটা ১৯৯৯ বা ২০০৩ আসরের দলের মতো শক্তিশালী নয়। কিন্তু ভুললে চলবে না, ওরা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন। অবশ্যই এবারও শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে চাইবে ওরা।