এবার সিরিজও হাতছাড়া বাংলাদেশের
প্রথমে ব্যাট করে মাঝারি সংগ্রহ গড়েছিল বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিমের অসাধারণ ব্যাটিং দৃঢ়তায় করেছিল ২৩৮ রান। কিন্তু বাংলাদেশের দুর্বল বোলিং এবং বাজে ফিল্ডিংয়ের সুযোগে শ্রীলঙ্কার এই সংগ্রহ টাপকাতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি। সহজেই সাত উইকেটে জয় তুলে নিয়েছে তারা।
প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে এই হারে সিরিজও হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের এই সিরিজে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এর আগে প্রথম ম্যাচে ৯১ রানে হেরেছিল লাল-সবুজের দল।
লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের সামনে বাংলাদেশের কোনো বোলারই খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। মুস্তাফিজুর রহমান দুই উইকেট পেয়েছেন ঠিক, তবে ৫০ রান খরচ করেছেন ।
লঙ্কানদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ অভিষ্কা ফার্নান্দোর। তিনি ৭৫ বলে ৮২ রান করেন। এ ছাড়া অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস অপরাজিত ৫২ রান করেন। কুসল মেন্ডিস করেন খেলেন হার না মানা ৪১ রানের ইনিংস।
অবশ্য সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে আজ প্রত্যয় ছিল পরিস্থিতি পাল্টানোর। টসও আসে নিজেদের পক্ষে। তবুও পারলেন না তামিমরা। ব্যাট হাতে ধারাবাহিক ব্যর্থ ব্যাটসম্যানরা। সতীর্থদের আশা-যাওয়ার মিছিলে একাই লড়াই করলেন মুশফিকুর রহিম। খেললেন ৯৮ রানের এক অসাধারণ ইনিংস। তাতে নির্ধারিত ওভারে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২৩৮ রানের পুঁজি পায় বাংলাদেশ।
আগে ব্যাট করতে নেমে দেখেশুনে শুরুটা করেছিলেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। কিন্তু টিকে থাকতে পারলেন না। ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই নুয়ান প্রদীপের এলবিডব্লিউর শিকার হন সৌম্য। ১১ রানে তাঁর ফেরায় ভাঙ্গে ২৬ রানের ওপেনিং জুটি। এ নিয়ে টানা ১০ ইনিংসে কোনো ফিফটি নেই বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের।
সৌম্যর পর উইকেটে থিতু হতে পারলেন না তামিমও। ধারাবাহিক ব্যর্থতার চিত্র পাল্টাতে পারলেন না। অনেকটা দৃষ্টিকটুভাবেই ফিরে গেলেন সাজঘরে। ফেরার আগে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৩১ বলে ১৯ রান।
দলীয় ৩১ রানে দুই ওপেনারের উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-মোহাম্মদ মিথুনও। আগের ম্যাচে রান তোলা সাব্বির রান আউটের শিকার হন। এরপর ৮৮ রানে পাঁচ উইকেট হারানো বাংলাদেশের হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম। মাঠে নেমেই আট রান নিয়ে তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে প্রবেশ করেন ছয় হাজারি ক্লাবে। তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩৭তম হাফ-সেঞ্চুরি। বাকিদের আশা-যাওয়ার মিছিলে শেষের দিকের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে লড়াই করেন একা। তাতে নির্ধারিত ওভারে আট উইকেটে লঙ্কানদের সামনে ২৩৯ রানের লক্ষ্য রাখতে পারে বাংলাদেশ। ইনিংস শেষে ৯৮ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিকুর রহিম। ১১০ বলে তাঁর ইনিংসটি সাজানো ছিল ছয় বাউন্ডারি এবং একটি ছক্কা দিয়ে। লঙ্কানদের পক্ষে বল হাতে সমান দুটি করে উইকেট নেন ইসুরু উদানা, নুয়ান প্রদীপ ও ডি সিলভা।
এর আগে সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ৯১ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছিল। শ্রীলঙ্কার করা ৩১৪ রানের বিপরীতে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ২২৩ রানে। বিশ্বকাপের মতো সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে ফিল্ডিং। সেই সঙ্গে ভূতুড়ে ব্যাটিংতো ছিলই। সাকিবের অবর্তমানে মিরাজ-মোসাদ্দেক বোলিংয়ের দায়িত্বটা ঠিকমতো পালন করতে পারেননি। টপ অর্ডারে তামিম ও সৌম্য ব্যর্থ হওয়াতে শুরুতেই ছিটকে যেতে হয়েছে লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। আজ আরও একটি পরীক্ষার সামনে টাইগাররা। সব ভুল কাটিয়ে এই ম্যাচ দিয়ে জয়ে ফেরার চেষ্টা থাকবে টিম বাংলাদেশের।
অন্যদিকে গত প্রায় চার বছরে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে সিরিজ জেতেনি একটিও। ঘরের মাঠে তারা সবশেষ ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে ২০১৫ সালের নভেম্বরে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সেই সিরিজে ক্যারিবীয়দের ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করার পর প্রায় ৪৪ মাসেও সিরিজ জয়ের দেখা পায়নি ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরা। আজ বাংলাদেশকে হারালে সেই আক্ষেপ শেষ হবে লঙ্কানদেরও।