সাক্ষাৎকার
চোটযুদ্ধে জয়ী হতে চান সাইফউদ্দিন
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক হয়েছে খুব বেশি দিন হয়নি। অবশ্য এরই মধ্যে জাতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছেন তরুণ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তবে দীর্ঘদিন ধরে ইনজুরি সঙ্গে লড়ছেন তিনি। ইনজেকশন দিয়ে খেলেছেন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ। পিঠের চোটে সদ্য শেষ হওয়া শ্রীলঙ্কা সফরেও যেতে পারেননি এই পেসার। মাঠে ফেরার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। স্বপ্ন দেখছেন, চোটযুদ্ধে জয়ী হয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার হওয়ার।
এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স এবং ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন সাইফউদ্দিন। জানিয়েছেন, চোট নিয়ে ভবিষ্যৎ শঙ্কার কথাও।
প্রশ্ন : শুরুতে ইনজুরির কথাই জানতে চাই, বর্তমান অবস্থা কেমন?
সাইফউদ্দিন : শরীর আগে থেকে অনেক ভালো। শেষ দুই সপ্তাহ ধরে পুনর্বাসনে আছি। ব্যাটিং অনুশীলনও শুরু করেছি। আগে থেকে সবকিছুতে এখন ভালো অনুভব হচ্ছে।
প্রশ্ন : ডাক্তার জানিয়েছেন এই চোটে নাকি নয় বছর ধরে ভুগছেন?
সাইফউদ্দিন : আসলে প্রত্যেক পেসারের কিছু না কিছু ইনজুরি থাকেই। একজনের এক রকম ইনজুরি। আমার হয়তো একটু আলাদা। এভাবেই চলতে হবে, যত দিন খেলব এটা নিয়েই খেলতে হবে।
প্রশ্ন : এই চোট ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় ফেলছে কি না?
সাইফউদ্দিন : চিন্তা তো অবশ্যই হয়। এখন আমার প্রথম কাজ হলো নিজেকে কীভাবে এই চোট থেকে মুক্ত করা যায়, সেটা ভাবা। নিজেকে ফিট রাখা। নিজের সব দুর্বলতা নিয়ে কাজ করা। ভালোভাবে মাঠে ফেরা। তবে বেশি যে ভাবছি, তা নয়। কারণ, দিন শেষে আমাদের ভাগ্যে যা থাকবে, তা-ই হবে। আমি আমার চেষ্টা করে যাব। চিকিৎসার জন্য ঈদের পর ইংল্যান্ড যাব।
প্রশ্ন : বিশ্বকাপের কথায় আসি, বিশ্বকাপে নিজের পারফরম্যান্সে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?
সাইফউদ্দিন : চেষ্টা করেছি ভালো করার। হয়তো মোটামুটি পেরেছি, আমার দিক থেকে ৬০-৭০ ভাগ করতে পেরেছি। ৪০ ভাগের মতো ভুলত্রুটি ছিল। তাতে আমার দিক থেকে আমি সন্তুষ্ট বলা যায়। তবে আরো ভালো করতে পারলে ভালো লাগত।
প্রশ্ন : মনে হয়নি যে আরেকটু ভালো করা যেত?
সাইফউদ্দিন : সেটা তো অবশ্যই। নিজের দিক থেকে নিজে চেষ্টাও করেছি। কখনো সফল হয়েছি, আবার কখনো হইনি। ভালো-খারাপ নিয়েই ক্রিকেট।
প্রশ্ন : বিশ্বকাপে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা বোলার আপনি, বিষয়টি কতটা প্রেরণা দেয়?
সাইফউদ্দিন : এটা ভালো লাগার মতো বিষয় ছিল। যদি সেরা উইকেট শিকারি হতে পারতাম, তাহলে আরো ভালো লাগত। কিন্তু এখন যেটা হয়ে গেছে তা তো আর পাল্টানো যায় না। নিজে সন্তুষ্ট। চেষ্টা থাকবে আরো ভালো করে দেশের সেরা বোলার হওয়ার।
প্রশ্ন : শেষ দিকের ম্যাচগুলোতে আপনাকে কিছুটা আগ্রাসী দেখা গেছে। তখন মানসিকতায় কি কোনো পরিবর্তন আসে?
সাইফউদ্দিন : আমরা যাঁরা অলরাউন্ডার, তাঁরা যদি বোলিংয়ে খারাপ করে ফেলি, তাহলে চেষ্টা করি ব্যাটিং দিয়ে সেটা পূরণ করার। ভারতের আগে দুটি ম্যাচে বল হাতে নিজেকে মেলে ধরতে পারিনি। সে জন্য চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে ভালো করার। তা ছাড়া ব্যাটিংয়ে অবদান রাখার চেষ্টা সব সময়ই থাকে।
প্রশ্ন : ভারতের বিপক্ষে দলের বিপর্যয়ে যে ইনিংস খেললেন তাতে ব্যাটসম্যান সাইফউদ্দিনের আত্মবিশ্বাস কতটা বেড়েছে?
সাইফউদ্দিন : আমি অনূর্ধ্ব-১৯ দলে থাকাকালে থেকেই অলরাউন্ডার হিসেবে খেলেছি। তখন আরো ওপরের দিকে ব্যাট করার সুযোগ পেতাম। জাতীয় দলে কম্বিনেশনের কারণে হয়তো সেটা হয় না। সাতে-আটে ব্যাটিং করতে হয়। তবে আশা করি, আস্তে আস্তে ব্যাটিংয়ে আরো উন্নতি করতে পারব। আর অবশ্য ওই ম্যাচটায় একটু হলেও আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
সাইফউদ্দিন : ভালো-খারাপ খেলারই একটি অংশ। একটা কথা আছে, খারাপ সময় পর সবকিছুরই ভালো সময় আসবে। আমরাও সেই ভালো সময়ের অপেক্ষায়। আশা করি, এই পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। একটি ভালো জয় সবকিছুর পরিবর্তন আনতে পারে। সবাই আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে পারে।
প্রশ্ন : ফাইনালে বেন স্টোকসের নৈপুণ্যে বিশ্বকাপ জিতল ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ দলে তেমন ভূমিকায় দেখা যাবে কি আপনাকে?
সাইফউদ্দিন : চেষ্টা করব সেরাদের একজন হতে। বেন স্টোকস অবশ্যই একজন ভালো অলরাউন্ডার। কিন্তু স্টোকস নয়, আমি আমার দক্ষতার ওপর বিশ্বাস করি। আমি তাঁর চেয়েও বড় চাই। সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। বাকিটা ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
প্রশ্ন : বিশ্বকাপ থেকে কী শিক্ষা নিয়ে এলেন?
সাইফউদ্দিন : প্রথম বিশ্বকাপ, এটা আমার জন্য অনেক আনন্দদায়ক ছিল। অনেক উৎসাহ কাজ করেছিল। এখান থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। মানসিকভাবেও আগে থেকে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বুঝেছি কীভাবে ভালো-খারাপ সময় মোকাবিলা করতে হয়। কঠিন অবস্থায় কীভাবে বল করতে হয়, ব্যাট করতে হয়, বিশ্বকাপ আমায় এসব শিখিয়েছে।
প্রশ্ন : বিশ্বকাপের সেরা মুহূর্ত কোনটি ছিল?
সাইফউদ্দিন : অনেক আগে থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল আমি বিরাট কোহলির উইকেট নেব। যেটা আমি বিশ্বকাপে যাওয়ার আগেও বলেছিলাম। প্রস্তুতি ম্যাচেই সেটা করতে পেরেছি। বিরাট কোহলির উইকেট নেওয়া আমার জন্য অনেক ভালো লাগার ছিল।
প্রশ্ন : বিশ্বকাপে আপনার বিষয়ে কিছু নেতিবাচক খবর বের হয়। সেই বিষয়গুলো নিয়ে কী বলবেন?
সাইফউদ্দিন : বিষয়টি বেশ কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে আমি খুব একটা ভাবছি না। কারণ, সাংবাদিকদের কাজ হলো লেখা আর আমার কাজ হলো ক্রিকেট খেলা। দুইটা আলাদা জায়গা। আমি আমার জায়গা থেকে নিজের কাজটাই ভালোভাবে করতে চাই। বাকিরা কে কী বলল, সেটা নিয়ে ভাবতে চাই না। নিজে ভালো করলে কোনো কথাই স্পর্শ করবে না আমাকে। আর অবশ্যই সঠিক তথ্য দেওয়াটাই সবার কাজ হওয়া উচিত।
প্রশ্ন : সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে বেশ হতাশ ভক্তরা, তাঁদের উদ্দেশে কী বলবেন?
সাইফউদ্দিন : বিশ্বকাপে আমরা নিজেদের মেলে ধরতে পারিনি। সবার প্রত্যাশামতো পারফরম্যান্স করতে পারিনি। তবুও আশা করি, ভক্তরা আমাদের সঙ্গে থাকবে। আমাদের ওপর আস্থা হারাবেন না। সামনের দিকে আমরা আরো ভালোভাবে আপনাদের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করব। আপনারা আমাদের পাশে থাকুন। যেভাবে এত দিন সমর্থন দিয়েছেন, সামনের দিকেও সেভাবে দেবেন।
প্রশ্ন : বিপিএলে এবারও আপনাকে রাখতে চায় কুমিল্লা, কিন্তু নিয়ম গঠিত কারণে দলবদল হলে সেটাকে কীভাবে নেবেন?
সাইফউদ্দিন : একজন পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে যেই দলে ডাক আসবে, সেই দলের হয়েই নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। শেষ তিন বছর ধরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খেলছি, যার কারণে কুমিল্লার ড্রেসিংরুম আমার চেনা। তাই কুমিল্লার হয়ে খেলা আমার জন্য সহজ হতো। এখন যদি অন্য দলে যাই, ম্যানেজ করে খেলতে হবে।
প্রশ্ন : যদি কুমিল্লার হয়েই সুযোগ হয়, তাহলে সেরা হয়ে উঠতে কতটা প্রস্তুত?
সাইফউদ্দিন : শেষ তিন বছর ধরে বিপিএল খেলছি। দিন দিন নিজের উন্নতি হচ্ছে। চেষ্টা থাকবে শেষ বছরের চেয়ে এবার আরো ভালো কিছু করার। আলাদা করে নিজেকে প্রমাণ করার।