সাক্ষাৎকারে নিগার সুলতানা : আমাদের লড়াইটা অন্যরকম
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দল। সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে যাওয়ার কঠিন পরীক্ষা। দীর্ঘদিন খেলার বাইরে থাকলেও বিগত এশিয়া কাপ জয় কিংবা ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্মৃতিগুলো নিয়ে স্কটল্যান্ডে পাড়ি দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
যাওয়ার আগে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে আসন্ন সফরে নিজেদের লক্ষ্য আর প্রস্তুতি নিয়ে কথা বললেন দলের অন্যতম সদস্য নিগার সুলতানা।
প্রশ্ন : সামনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যাওয়ার কঠিন পরীক্ষা, কতটুকু প্রস্তুত?
নিগার সুলতানা : প্রস্তুতি অবশ্যই ভালোভাবে নিয়েছি। ‘এ’ দলের সঙ্গে জাতীয় দলের প্রায় সাত-আটজন দক্ষিণ আফ্রিকায় সফর করেছি। যেটা আমাদের প্রস্তুতিতে অনেক কাজে দিয়েছে। কারণ, স্কটল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন ও উইকেট প্রায় একই রকম। প্রস্তুতি ম্যাচের পাশাপাশি এখানে কয়েকটা ম্যাচ খেলছি। সব মিলিয়ে মনে হয় ভালোই প্রস্তুতি হয়েছে।
প্রশ্ন : দক্ষিণ আফ্রিকায় সফরের অভিজ্ঞতা বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কতটা কাজে দেবে?
নিগার সুলতানা : অনেক দিন ধরে আমরা কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পাইনি। যার কারণে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর আমাদের খেলার রিদম ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করবে। এ সফরের অভিজ্ঞতা আমাদের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে কাজে দেবে।
প্রশ্ন : দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলায় কতটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে?
নিগার সুলতানা : আসলে বিসিবি অনেক চেষ্টা করেছে যেন আমরা কিছু ম্যাচ খেলে হলেও স্কটল্যান্ডে যাই। আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করতে না পারলেও ‘এ’ দলের হয়ে আমাদের খেলানোর চেষ্টা করেছেন। আমরা যতদিন না পর্যন্ত আইসিসি র্যাংকিংয়ে আটে না ঢুকতে পারব, ততদিন এভাবেই চলতে হবে। কিছু করার নেই। প্রথম সারির দলগুলো যেমন আইসিসি থেকে ম্যাচ পায়, সূচি পায়, আমরা তো সেটা পাই না। সে ক্ষেত্রে আমাদের লড়াইটা অন্যরকম।
প্রশ্ন : এটা কোনো চাপ তৈরি করবে কি?
নিগার সুলতানা : আসলে এটা নিয়ে আমাদের নিজেদেরও আক্ষেপ রয়েছে। যেকোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছাড়াই এত বড় অভিযানে যাচ্ছি। তবে আমার কাছে কোনো চাপ মনে হচ্ছে না। দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলার কারণে ম্যাচের মধ্যেই আছি। আশা করি, কোনো চাপ তৈরি হবে না। তা ছাড়া যাঁরা দলের বাইরে ছিলেন, তাঁরাও সেখানে অনুশীলন করেছেন। সব মিলিয়ে মনে হয় না চাপ পড়বে।
প্রশ্ন : নতুন কয়েকজনকে বেশ ভালো করতে দেখা গেল, তাদের বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
নিগার সুলতানা : আমাদের চাওয়া ছিল, একটা ‘এ’ টিমের ক্রিকেটার তৈরি হোক। কারণ, পাইপলাইনে ক্রিকেটার না থাকলে কখনোই উন্নতি সম্ভব নয়। নতুন প্রতিভা আছে, তারা অন্তত নিজেদের সামর্থ্য দেখানোর একটা জায়গা পেয়েছে। আমি মনে করি, নতুনদের কেউ কেউ জাতীয় দলের দুয়ারে কড়া নাড়ছে। ওদের সে যোগ্যতা আছে। এটা আমাদেরই লাভ।
প্রশ্ন : দক্ষিণ আফ্রিকায় দলকে নেতৃত্ব দিলেন, কতটা শিখলেন?
নিগার সুলতানা : নেতৃত্ব দেওয়ার অনুভূতি একেবারেই অন্যরকম। ক্লাব ক্রিকেটে নেতৃত্ব দিতে সেভাবে চাপ থাকে না। যখন আপনি জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নামবেন, সেটা একেবারে আলাদা একটা ব্যাপার। দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, আবার পুরো দলের কথা মাথায় রাখতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে অধিনায়কত্ব আমি উপভোগ করেছি। কারণ, ওদের সঙ্গে অনেক দিন ধরে খেলছি। তাই আমার কোনো সমস্যা হয়নি। আমি অনেক কিছু শিখেছি, কীভাবে দলকে সামনে থেকে টানা যায়, কীভাবে সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়। এ অভিজ্ঞতা সামনে অনেক কাজে লাগবে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটে প্রথম সুপার ওভার দেখলেন। কেমন ছিল?
নিগার সুলতানা : অনেক উত্তেজনা কাজ করেছিল। তবে বিশ্বাস ছিল, আর যাই হোক, আমরা পারব। শেষ পর্যন্ত হলো না। আসলে আমি কখনো কোনো পর্যায়ে সুপার ওভারে খেলিনি। তো, আমি বুঝতে পারব না কী করতে হয়। আমার বোলারও বুঝতে পারবে না সে কোন অ্যাঙ্গেলে, কোথায় বল করবে। এ ধরনের পরিস্থিতির যত মুখোমুখি হবো, তত শিখতে পারব।
প্রশ্ন : নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট ?
নিগার সুলতানা : আসলে আমার পারফরম্যান্স নিয়ে আমি সন্তুষ্ট নই। আমার মনে হয়, আরো ভালো করা উচিত ছিল। যতটা ভালো করা যায়। আর একজন অধিনায়ক হিসেবে দল আমার কাছে আরো ভালো পারফরম্যান্স আশা করে। কিন্তু যতটুকু পেরেছি, করার চেষ্টা করেছি।
প্রশ্ন : শেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাই কিংবা এশিয়া কাপের জয়স্মৃতি আসন্ন সফরের প্রেরণা হবে কি?
নিগার সুলতানা : এশিয়া কাপ বা বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আমরা যে দল খেলেছি, প্রায় সেই একই দল যাচ্ছি স্কটল্যান্ডে। অনেক দিন ধরে আমরা একসঙ্গে খেলার কারণে আমাদের মধ্যে বোঝাপড়াটা দারুণ। এখন আর যোগাযোগ বা মাঠের ভেতর তথ্য আদান-প্রদানে কোনো ঝামেলা হয় না। এশিয়া কাপে আমরা দল হিসেবে যে ভালো সময় কাটিয়েছিলাম, সামনের দিকেও সেটা করার চেষ্টা থাকবে।
প্রশ্ন : এ অভিযানের লক্ষ্যটা কতদূর?
নিগার সুলতানা : সবার প্রথমে হলো বিশ্বকাপের মূল পর্ব নিশ্চিত করা। এরপর আমরা যে দল হিসেবে ভালো খেলতে পারি, সেটা প্রমাণ করা। প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, আমরা ডমিনেট করে খেলতে চাই।
প্রশ্ন : পেশা হিসেবে ক্রিকেটকে বেছে নিলেন কেন?
নিগার সুলতানা : ক্রিকেট আমি পরিবার থেকে পেয়েছি। যখন আমি খুব ছোট, তখন আমার ভাইয়াদের ক্রিকেট খেলতে দেখতাম। তখন থেকেই মনে হয়, ক্রিকেট আমার রক্তে চলে এসেছে। আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আমার ভাইয়া। যেখানে টেপ টেনিস ক্রিকেট খেলতে যেত ভাইয়া, আমাকে সঙ্গে নিয়ে যেত। এভাবেই ক্রিকেট খেলার শুরু। পেশাদার হয়ে খেলা শুরু করি ২০১১ সালে। সে বছর বাংলাদেশে বসেছিল মহিলা বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব। সেটা দেখার পর খেলাটা চালিয়ে যাই।