একাই বাংলাদেশকে জেতালেন সাকিব
আগেই ফাইনাল নিশ্চিত হওয়ায় দুই দলের ম্যাচটি ছিল নিয়মরক্ষার। তবে শিরোপা যুদ্ধে মাঠে নামার আগে আফগানিস্তানকে সহজভাবে নেয়নি বাংলাদেশ। লক্ষ্য ছিল, আফগানদের বিপক্ষে জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে ফাইনালে যাওয়া। অবশেষে নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করতে পেরেছে স্বাগতিকরা। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের একার লড়াইয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আগামী মঙ্গলবার ফাইনালে আবারো সফরকারীদের মুখোমুখি হবে স্বাগতিকরা।
চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ওভারে সাত উইকেটে ১৩৮ রান করে আফগানিস্তান। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ছয় বল হাতে রেখে চার উইকেটে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে ৭০ রানে অপরাজিত ছিলেন জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান। ২০১৪ সালের পর এই প্রথম আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে জয়ের দেখা পেল লাল-সবুজের দল।
আফগানিস্তানের দেওয়া ১৩৯ রানের ছোট লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। দলীয় ১৩ রান তুলতে দুটি উইকেট হারিয়ে ফেলে। প্রথমে ৪ রানে বিদায় নেন লিটন দাস। নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেও ব্যর্থ হন নাজমুল হোসেন শান্ত। ফিরে যান ৫ রানে।
দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর সাকিব-মুশফিকের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। দুজন মিলে ৫৮ রানের জুটি গড়েন। মুশফিককে ফিরিয়ে সেই জুটি ভাঙেন করিম জানাত। ফেরার আগে ২৬ রান করেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান।
মাঝে ত্রয়োদশ ওভারে ফ্লাড লাই বিভ্রাটের জন্য খেলা কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। কয়েক মিনিট বাদে ম্যাচ শুরু হলে মাহমুদউল্লাহকে হারায় বাংলাদেশ। বরাবরের মতো ব্যর্থ সাব্বির রহমানও। এরপর আশা দেখিয়ে ফেরেন আফিফ। সতীর্থদের ব্যর্থতার মধ্যেও টিকে থাকেন সাকিব। ৩৩ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের দশম হাফ-সেঞ্চুরি। অধিনায়কের দায়িত্বশীল ব্যাটে ভর করে শেষ পর্যন্ত ১৯ ওভারে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। মাত্র ৪৫ বলে ৭০ রানের ইনিংস খেলেন সাকিব। যা সাজানো ছিল আট বাউন্ডারি ও এক ছক্কা দিয়ে।
এরআগে ম্যাচটিতে টস জিতে আফগানিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। বন্দরনগরীর ভেন্যুতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। কিন্তু শুরুর দিকে অধিনায়কের সিদ্ধান্ত খুব একটা কাজে লাগাতে পারেনি স্বাগতিকরা। ধারহীন বোলিংয়ের পাশাপাশি বাজে ফিল্ডিংয়ে শুরুতে কিছুটা বিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
অবশ্য আফগানদের ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট পেতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু ক্যাচ মিসের কারণে সেটা হতে দেননি মাহমুদউল্লাহ। শফিউলের বলে সহজ ক্যাচ ফেলে রহমতউল্লাহ গুরবাজকে জীবন দেন এই অলরাউন্ডার।
আফগানিস্তানের ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের ঘটনা। ওভারের পঞ্চম বলে শফিউলের আউট সুইং ঠিক মতো খেলতে পারেননি রহমতউল্লাহ। ফলে ব্যাটের কানায় লেগে বল উঠে যায় আকাশে। বল চলে যায় ফাইন লেগে। যেখানে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু রহমাতউল্লাহর সেই সহজ ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি তিনি। এক রানে আউট হতে যাওয়া এই আফগান ওপেনার পৌঁছে যান ২৯ রানে। তাঁর সঙ্গে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন হজরতউল্লাহ জাজাইও। বাংলাদেশের বোলারদের পিটিয়ে ৪৭ রানে করেন তিনি। দুই ব্যাটসম্যানে চড়ে শেষ পর্যন্ত ৭৫ রানে থামে অতিথিদের ওপেনিং জুটি।
দশম ওভারে জাজাইকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান আফিফ হোসেন। একই ওভারে দুইবার আঘাত হানেন আফিফ। প্রথমে জাজাইকে ফেরানোর পর ফেরান আসগর আফগানকে। তিনে ব্যাট করতে নামা এই ব্যাটসম্যানকে শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন তরুণ এই অলরাউন্ডার। এরপর ১১ তম ওভারে রহমতউল্লাহকে ফেরান মুস্তাফিজুর রহমান। এবারো ক্যাচ তুলে দেন আফগান তারকা। নিজের ক্যাচ নিজেই তালুবন্দী করে তাঁকে সাজঘরের পথ দেখান মুস্তাফিজ।
দ্রুত তিন উইকেট নেওয়ার পর আফগানিস্তানকে চেপে ধরেন বাংলাদেশি বোলাররা। ওপেনিংয়ের পর আর কোনো জুটিকে থিতু হতে দেননি স্বাগতিক বোলাররা। দ্রুত উইকেট তুলে নিয়ে শেষ পর্যন্ত আফগানদের ১৩৮ রানে থামায় বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বাকি ৯ ব্যাটসম্যানের রান সংখ্যা যথাক্রমে ০, ১৪, ৪, ১, ২৩*, ৩, ১০, ১১*।
বাংলাদেশের পক্ষে বল হাতে ৯ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন আফিফ হোসেন। সমান একটি করে নেন মুস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, শফিউল ইসলাম ও সাকিব আল হাসান।
গত বছর দেরাদুনের পর থেকে এখন পর্যন্ত আফগানদের সামনে টি-টোয়েন্টিতে জয়হীন বাংলাদেশ। দেরাদুনে তিন ম্যাচের সিরিজে তিনটিতেই হেরেছিল বাংলাদেশ। দেশের মাটিতেও কাটেনি সেই দুর্দশা। দলটির বিপক্ষে শেষ ২০১৪ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিতেছে টাইগাররা। তাতে দুই দুলের পরিসংখ্যান দাঁড়িয়েছে ৪-১। অবশেষে টানা চার পরাজয়ের পর আজ শনিবার সফরকারীদের বিপক্ষে জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।