পূজার ছুটিতে
হবিগঞ্জের বিথঙ্গল আখড়ায় একদিন
একটু অন্য রকম জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার কথা আপনি যদি ভেবে থাকেন, তবে আপনার জন্য হবিগঞ্জের বিথঙ্গল আখড়া হতে পারে উপযুক্ত জায়গা। শরৎকালেই এখানে যাওয়ার জন্য ভালো সময়। তাই আসছে পূজার ছুটিতে আপনি ঘুরে আসতে পারেন হবিগঞ্জের বিথঙ্গল আখড়া থেকে।
ইতিহাস
লোকমুখে জানা যায়, প্রায় ৬০০ বা ৪০০ বছর আগে হবিগঞ্জের তৎকালীন রিচি পরগনার অধিবাসী রামকৃষ্ণ গোস্বামী এই আখড়ার প্রতিষ্ঠাতা। উপমহাদেশের বিভিন্ন তীর্থস্থান সফর শেষে তিনি বিথঙ্গলে এসে এই আখড়া প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে পালিত উৎসবের মধ্যে আছে কার্তিক মাসের শেষদিন ভোলা-সংক্রান্তি কীর্তন, ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে দোলপূর্ণিমা উৎসব। চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে ভেড়ামোহনা নদীর ঘাটে ভক্তরা স্নান করেন। স্নানঘাটে বারুনীর মেলা ও আষাঢ় মাসে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি উৎসবে হাজারো ভক্ত যোগদান করে থাকেন।
যা দেখবেন
হবিগঞ্জ শহরের কাছে কালাডুবা ঘাট। সেখান থেকেই ট্রলার ভাড়া করে যেতে হয় বিথঙ্গল আখড়ায়।
ঘাট থেকে বিথঙ্গল বাজার যেতে সময় লাগবে প্রায় দুই ঘণ্টার মতো। পথে যেতে যেতে দেখতে পাবেন স্বচ্ছ পানিতে দৃশ্যমান পানির জগৎ আর বুকপানিতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা হিজলগাছ। এসব দেখতে দেখতেই পৌঁছে যাবেন বিথঙ্গল বাজারে। বাজার থেকে হাঁটাপথ পাঁচ থেকে ছয় মিনিটের। বিশাল এই আখড়ার কক্ষসংখ্যা ১২০টি। জনশ্রুতি আছে, এককালে এখানে ১২০ জন বৈষ্ণব থাকতেন। যদিও এখন মাত্র একজন বৈষ্ণবই রয়েছেন এখানে। তাঁদের স্নানের জন্য আখড়ার পাশের দীঘিতে শান বাঁধানো ঘাট তৈরি করা হয়েছিল, যা আজও বিদ্যমান রয়েছে। নতুন-পুরাতন ভবনগুলোর পাশাপাশি এখানে কিছু মন্দিরও রয়েছে। রামকৃষ্ণ গোস্বামীর সমাধিস্থলের ওপর নির্মিত সুদর্শন মঠের সামনে রয়েছে একটি নাট মন্দির। পূর্বপাশে আছে ভাণ্ডার ঘর এবং দক্ষিণে একটি ভোগ মন্দির। এসবের পাশাপাশি আরো কয়েকটি পুরাতন ইমারত রয়েছে এখানে। অতীত ইতিহাস আর ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহনকারী এই আখড়ায় বেশ কিছু দর্শনীয় বস্তু রয়েছে। এখানে আছে ২৫ মণ ওজনের শ্বেত পাথরের চৌকি, পিতলের সিংহাসন, কারুকার্যখচিত রথ, রৌপ্য নির্মিত পাখি এবং রুপা ও সোনার তৈরি মুকুট ইত্যাদি।
যাতায়াত
ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে বাস যায় হবিগঞ্জের দিকে। এর মধ্যে অগ্রদূত, দিগন্ত, বিসমিল্লাহ পরিবহন উল্লেখযোগ্য। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে শুরু করে আধা ঘণ্টা-এক ঘণ্টা পরপর বাস ছেড়ে যায়। দিনের শেষ বাসটি ছাড়ে সন্ধ্যা ৭টায়। ভাড়া এসি ছাড়া ৩৫০ টাকা। এসিসহ ৪০০ টাকা। হবিগঞ্জ শহরে নেমে সেখান থেকে কালাডুবা ঘাট যাওয়ার জন্য ম্যাক্সিতে উঠতে হবে। ভাড়া জনপ্রতি ১৫ টাকা। এই ঘাট থেকে বিথঙ্গল যাওয়ার ট্রলার ভাড়া করতে হবে। সে ক্ষেত্রে ছয়-সাতজনের একটা দল গেলে খরচ অনেক কম লাগবে। একটু দরদাম করে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যেই ট্রলার ভাড়া পাওয়া যাবে।