সুদান ভয়াবহ লড়াই, কূটনীতিকদের সরিয়ে নিল বিভিন্ন দেশ
সুদানের রাজধানী খার্তুমে সেনাবাহিনী ও আধা সামরিক বাহিনীর ভয়াবহ লড়াই অব্যাহত থাকায় নিজেদের কূটনীতিক ও নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া দেশের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। গতকাল রোববার (২৩ এপ্রিল) নিজেদের কূটনীতিকদের সুদান থেকে সরিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এছাড়া ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি ও স্পেন দেশটি থেকে কূটনীতিকদের সরিয়ে নিয়েছে। খবর বিবিসির।
মার্কিন প্রশাসন জানায়, রোববার (২৩ এপ্রিল) সকালে তিনটি হেলিকপ্টার দিয়ে একশরও কম মানুষকে সরিয়ে আনা হয়েছে। খার্তুমে মার্কিন দূতাবাস এখন বন্ধ রয়েছে। এখনই মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে আনা সরকারের পক্ষে নিরাপদ নয়।
এদিকে ব্রিটিশ কূটনীতিক এবং তাদের পরিবারকে সুদানের বাইরে নিতে সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লিভারলি বলেন, সুদান থেকে অবশিষ্ট ব্রিটিশ নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার বিকল্প উপায়গুলো খুব সীমিত।
আরও কয়েকটি দেশ রোববার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানান, রোববার ফরাসি নাগরিক এবং অন্যান্যদের নিয়ে একটি বিমান আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে পৌঁছেছে। অল্প সংখ্যক ডাচ নাগরিক ফরাসি বিমানে খার্তুম ছেড়েছেন।
জার্মানির সেনাবাহিনী জানায়, তাদের তিনটি বিমানের প্রথমটিতে ১০১ জন যাত্রী জর্ডানের উদ্দেশে সুদান ছেড়েছে।
ইতালি ও স্পেন নিজেদের নাগরিকদের সরিয়ে নিয়েছে। স্পেনের সরিয়ে আনা দলে আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, আয়ারল্যান্ড, পর্তুগাল, পোল্যান্ড, মেক্সিকো, ভেনিজুয়েলা ও সুদানের নাগরিকও ছিল। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, তাদের কূটনৈতিকদের সরিয়ে এনেছে সরকার।
এর আগে শনিবার সফলভাবে মানুষকে সুদান সরিয়ে নিয়েছে আরও কয়েকটি দেশ। মিশর, পাকিস্তান, কানাডা এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর ১৫০ জনেরও বেশি মানুষকে সমুদ্রপথে সৌদি আরবের জেদ্দা বন্দরে সরিয়ে আনা হয়েছে।
আফ্রিকা, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে গিয়ে খার্তুমে আটকে পড়া বহু বিদেশি শিক্ষার্থী সাহায্যের জন্য খবর পাঠাচ্ছে। খার্তুমে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ থাকেন।
এদিকে, সুদানে ইন্টারনেট সংযোগ প্রায় সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে খার্তুম এবং অন্যান্য শহরে আটকেপড়াদের সহায়তার সমন্বয় কাজকে ভীষণ বিঘ্নিত করবে।
ক্ষমতার জন্য দুই বাহিনীর এই লড়াইয়ে সুদানের রাজধানী শহরে ব্যাপক গোলাগুলিতে ইতোমধ্যে কয়েকশ মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছে।
খার্তুম এবং অন্যান্য জায়গায় প্রায় অবিরাম গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ মানুষের খাদ্য ও পানির নিরাপদ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সংঘাতে ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা পেতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। কারণ শহরের বেশির ভাগ হাসপাতাল লড়াইয়ের কারণে বন্ধ রয়েছে।
খার্তুমের পাশাপাশি দারফুরের পশ্চিমাঞ্চল লড়াইয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, নিরাপত্তার জন্য নারী ও শিশুসহ প্রায় ২০ হাজার মানুষ দারফুর সীমান্ত দিয়ে সুদান ছেড়ে চাদে পালিয়েছে।