মাটির নিচে গলিত লোহার নদী!
সূর্যের পৃষ্ঠের যে তাপমাত্রা সেই একই তাপমাত্রার দেখা মিলেছে মর্ত্যে। মাটির গভীরে গনগন করে জ্বলছে গলিত লোহার আধার! প্রথমবারের মতো এই ধরনের গলিত লোহার প্রবাহসহ চৌম্বক ক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া গেল উত্তর আমেরিকা ও রাশিয়ার ভূপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার কিলোমিটার গভীরে।
এই লৌহপ্রবাহের বিস্তৃতি প্রায় ৪২০ কিলোমিটার এবং প্রতি বছরই এর আয়তন ও গভীরতা বাড়ছে। সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে বেড়ে এই প্রবাহের এলাকা চলেছে ইউরোপের দিকে। এর গতি অন্য যেকোনো তরলের গতির চেয়ে বেশি।
নিউ সায়েন্টিস্টের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, এই গলিত লোহা প্রবাহের প্রচণ্ড গতির কারণ সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন এমন একদল বিজ্ঞানী বলেন, সম্ভবত এটি এই গলিত লোহার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, যা লাখ লাখ বছর ধরে চলছে। এর মাধ্যমে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রগুলোর গঠন বোঝা যাবে, যেগুলো আমাদের সৌরবায়ু থেকে নিরাপদ রাখে।
মাটির নিচে লোহার এই ধারাকে অসাধারণ আবিষ্কার বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ফিল লিভারমোর। আবিষ্কারক দলের এই নেতা বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছিলাম যে, এই তরল প্রবহমান। তবে এই ঘটনা চাক্ষুস প্রত্যক্ষ না করা পর্যন্ত বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য ছিল না।’
এ বিষয়ে দলটির আরেক সদস্য টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ডেনমার্কের অধ্যাপক ক্রিস ফিনলে বলেন, ‘আমরা পৃথিবীর গভীরে কী আছে তার চেয়ে সূর্যের গভীরে কী আছে সে সম্পর্কে বেশি জানি। তবে এই আবিষ্কার পৃথিবীর গভীরের বিষয় সম্পর্কে জানতে আরো সাহায্য করবে।’
সোয়ার্ম নামে ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সির তিনটি স্যাটেলাইটের সম্মিলিত পর্যবেক্ষণের কারণেই বিষয়টি আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। কক্ষপথ থেকেই এরা মাটির তিন হাজার কিলোমিটার গভীরের চৌম্বক ক্ষেত্রের বৈচিত্র্য অনুসন্ধান করতে পারে।