বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ইসরায়েল ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আছে। স্বাধীন ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকা বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে ইসরায়েল প্রবেশ করতে পারেন না। আর কেউ এ চেষ্টা করলে তাঁকে পেতে হয় শাস্তি।

তবে ব্যতিক্রম একজন তরুণের নাম ড. শাদমান জামান (২৫)। গত বুধবার থেকে যিনি অবস্থান করছেন ইসরায়েলে। এবারই প্রথম নয়, এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ইসরায়েল ভ্রমণে যান তিনি। শুধু তাই নয়, এর আগে শাদমান দীক্ষা নেন ইহুদি ধর্মেও। 

এ মুহূর্তে ইসরায়েলের রাজধানী তেলআবিবে অবস্থান করছেন শাদমান। অবশ্য বর্তমানে তিনি বাংলাদেশে নয়, লেখাপড়ার জন্য যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছিলেন। আর সেখান থেকেই গত বুধবার ‘ব্রিটেন ইহুদিবাদী সংঘ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে ইসরায়েল সফরে যান তিনি। 

ইসরায়েলে অবস্থানকালে শাদমান কথা বলেছেন দেশটির সংবাদমাধ্যম জেরুজালেম পোস্টের সঙ্গে। সেই আলাপচারিতায় নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেছেন বাংলাদেশে সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন প্রতিকূলতার কথা। 

জেরুজালেম পোস্টকে শাদমান জানান, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে তীব্র ইহুদি-বিদ্বেষ কাজ করে। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রমেও ইহুদিদের সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলা হয়। 

বাংলাদেশে কোনো ইহুদি নেই এবং সবচেয়ে ইহুদি-বিদ্বেষী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি বলেও সে দেশের সংবাদমাধ্যমকে জানান এই তরুণ। তিনি বলেন, তাঁর বর্তমান বাসস্থান ব্রিটেনও ইহুদি ও ইসরায়েলবিরোধী। তবে সেখানে ইহুদিদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে তাঁর খুবই ভালো লেগেছে। 

ইসলামের সঙ্গে ইহুদি ধর্মের অনেক মিল রয়েছে উল্লেখ করে শাদমান বলেন, ইসলামের অনেক প্রথাই ইহুদি ধর্ম থেকে এসেছে। 

শাদমানের দাদাও ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করেন। বাংলাদেশে তিনিই প্রথম ইহুদিদের পক্ষে কথা বলেন বলে জানান শাদমান। তিনি বলেন, ‘বাঙালিদের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে যেমন বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি ইহুদিদের জন্য ইসরায়েল সৃষ্টি হয়েছে।’

জেরুজালেম পোস্টকে শাদমান জানান, ১২ বছর বয়স থেকে ইহুদিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন তিনি। এ সময় তিনি পরিবারের কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন পান। তাঁর দাদা বিভিন্ন সময়ে দেশের বাইরে থেকে ইহুদিবাদ-সংক্রান্ত বিভিন্ন বই তাঁর জন্য নিয়ে আসতেন বলে জানান শাদমান। 

এ সময় শাদমান অভিযোগ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় ইসরায়েল আমাদের পূর্ণ সমর্থন করেছিল। কিন্তু আমাদের ইতিহাসে তার উল্লেখ নেই। আরবের কাছ থেকে বিভিন্ন সহায়তা পাওয়ার আশায় বাংলাদেশ কখনো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি।’

ইহুদিবাদকে সমর্থনের কারণে বিভিন্ন সময়ে প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন বলে জানান শাদমান। আর সে কারণেই নিরাপত্তার জন্য গত বছরে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান তিনি। 

বাংলাদেশ ও ইসরায়েলের সম্পর্ককে মজবুত করা তাঁর লক্ষ্য বলে জেরুজালেম পোস্টকে জানান শাদমান। তবে ইসরায়েল ভ্রমণের পর বাংলাদেশে প্রবেশে তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে জানান এই তরুণ।