আজ পুতিনের শপথ, বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
চতুর্থবারের মতো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ভ্লাদিমির পুতিন।
আজ সোমবার পুতিনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে।
গত ১৮ বছর ক্ষমতায় আছেন ভ্লাদিমির পুতিন। সর্বশেষ গত মার্চে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও জয় পান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দল পুতিনের এই রাজত্বকে রুশ সম্রাট বা যেকোনো সম্রাটের রাজত্বের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তবে সংবাদমাধ্যম এএফপি জানিয়েছে, মস্কোর ক্রেমলিনের এই উদ্বোধন অনুষ্ঠান ২০১২ সালের চেয়ে কম জাঁকজমকপূর্ণ হবে। পুতিন শুধু তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গেই দেখা করবেন বলেও জানা গেছে।
অবশ্য এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আগে গত শনিবার রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে দাঙ্গা পুলিশ ও পুতিনবিরোধীরা মুখোমুখি অবস্থানে ছিল।
বিক্ষোভের কারণ :
শনিবার রাশিয়ার ১৯টি শহর থেকে প্রায় এক হাজারের বেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকেই হচ্ছেন মস্কোর বাসিন্দা।
পুতিন প্রায় ৭৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন এবং এটিই তাঁর সর্বোচ্চ প্রাপ্ত ভোট। কিন্তু কিছু আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগও করেছে। এমনকি গত নির্বাচনেও ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছিল।
প্রধান বিরোধী নেতা আলেক্সি নাভালনিকে জালিয়াতির দায়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি, যদিও তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই বিরোধী নেতাকে শনিবারের বিক্ষোভ সমাবেশে যাওয়ার পথে গেপ্তার করা হয়। ওই সমাবেশের স্লোগান ছিল ‘সে আমাদের রুশ রাজা নয়’।
বিরোধীরা অভিযোগ করেন, পুতিনের ‘ম্যানেজড ডেমোক্রেসি’ পলিসি রাশিয়ার গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দিয়েছে। তাঁরা আরো অভিযোগ করেন বিরোধীদলকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখতে এবং তিনি এবং তাঁর রাজত্বকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্ষমতায় রাখতেই এই পলিসি গ্রহণ করা হয়েছে।
পুতিনের সাম্রাজ্য কি চলতেই থাকবে?
২০০০ সালে প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পুতিন ২০০৪ সালে ক্ষমতায় পুনর্বহাল হন এবং ২০০৮ সালে তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী হন। এ সময় প্রেসিডেন্ট ছিলেন দিমিত্রি মেদভেদেভ। কারণ, আইন অনুযায়ী তিনি শুধু দুই মেয়াদেই ক্ষমতায় থাকতে পারবেন।
২০১২ সালে পুতিন পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং এবার ছয় বছরের জন্য ক্ষমতা নিশ্চিত করেন।
যদি ২০২৪ সালে পুতিন তাঁর চতুর্থবারের ক্ষমতা শেষ করেন, তাহলে ৬৫ বছরের এই বৃদ্ধ এক শতাব্দীর প্রায় এক-চতুর্থাংশ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকবেন।
অবশ্য এত দিন ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও এটি সোভিয়েত নায়ক জোসেফ স্টালিনের ৩১ বছরের রাজত্ব এমনকি কিছু রুশ সম্রাট যেমন দ্বিতীয় আলেকজান্ডার (২৬ বছর) এবং প্রথম নিকোলসের (৩০ বছর) রাজত্বের চেয়ে কম।
গোয়েন্দা থেকে প্রেসিডেন্ট
১৯৫২ : রাশিয়ার দ্বিতীয় শহর লেলিনগার্ডে (বর্তমান সেন্ট পিটার্সবার্গ) ৭ অক্টোবর ভ্লাদিমির পুতিন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং কমিউনিস্ট ইস্ট জার্মানির কেজিবি সিক্রেট পুলিশে গোয়েন্দা হিসেবে যোগদান করেন।
১৯৯০ : সেন্ট পিটার্সবার্গ মেয়রের শীর্ষ সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করার পর তিনি ১৯৯৭ সালে বরিস ইয়েলটসিন ক্রেমলিনে যোগদান করেন এবং এফএসবি প্রধান হন।
১৯৯৯ : ইয়েলটসেন থেকে পদত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করার পর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হন।
২০০০ : প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং চার বছর মেয়াদে দুবার প্রেসিডেন্ট থাকেন।
২০০৮ : তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতা আসতে বাধা পান এবং প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ট হন। এ সময় প্রেসিডেন্ট ছিলেন তার সরকারেরই দিমিত্রি মেদাভেদেভ।
২০১২ : পুনর্নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন এবং নতুন আইনে ছয় বছরের জন্য ক্ষমতায় আসেন।
২০১৮ : চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হন।