গাঁজা থেকে মৃগী রোগের ওষুধ
এই প্রথমবারের মতো গাঁজা থেকে প্রস্তুত করা কোনো ওষুধের অনুমোদন দিল যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিন্সট্রেশন (এফডিএ)। গত সোমবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটি এ কথা জানায়।
চলতি বছরের এপ্রিলে ‘এপিডায়োলেক্স’ নামে একটি ওষুধ অনুমোদনের জন্য এফডিএর কাছে সুপারিশ করে উপদেষ্টা কমিটি। তারই ধারাবাহিকতায় এই অনুমোদন দিল এফডিএ।
বিবৃতিতে এফডিএ কমিশনার চিকিৎসক ড. স্কট গটলিব বলেন, ‘চিকিৎসা ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সফলতা’। যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষার করে ওষুধের গুণগত মান নিশ্চিত হওয়ার পরই এটিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে এপিডায়োলেক্স প্রস্তুতকারী যুক্তরাজ্যভিত্তিক বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ‘জিডব্লিউ ফার্মাসিউটিক্যালস’ বিবৃতিতে জানায়, এই প্রথম মৃগী রোগের চিকিৎসায় গাঁজাজাত কোনো ওষুধ যুক্ত হলো।
এর আগে গাঁজার উপাদান ‘ক্যানাবাইনয়েড’ কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত করে ক্যানসারের ব্যথানাশক হিসেবে ও আরো কিছু উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছিল এফডিএ। কিন্তু মৃগী রোগের (ড্রাভেট সিনড্রম, লেনক্স গ্যাসটাউট সিনড্রম ইত্যাদি) চিকিৎসায় এই প্রথম এমন কোনো ওষুধের অনুমোদন দিল সংস্থাটি।
জিডব্লিউ ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাস্টিন গোভার এই অনুমোদনকে ‘ঐতিহাসিক মাইলফলক’ আখ্যা দিয়েছেন। গুণগত মানসমৃদ্ধ ‘এপিডায়োলেক্স’ খুব শিগগিরই বাজারে পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।
সিএনএনকে গোভার জানান, এফডিএর আদর্শ মান নিশ্চিত করে আগামী শীতেই ওষুধটি বাজারে সহজলভ্য হবে। ওষুধের দাম কেমন হবে সেটা তিনি নিশ্চিত করেননি। ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর তা জানানো যাবে বলে উল্লেখ করেন গোভার।
নিরাময়ের আশায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম চিকিৎসা করেও যেসব রোগী মৃগী ও মৃগীর খিঁচুনির নিরাময় খুঁজে পাননি, এই নতুন ওষুধ তাঁদের উপকারে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনার ‘এশেলম্যান স্কুল অব ফার্মাসি’র সহকারী অধ্যাপক ও ফার্মাসি ক্লিনিক্যাল স্পেশালিস্ট, শনা গ্যারিস অনুমোদিত ওষুধটির কার্যকারিতা বিষয়ে বলেন, এটি সম্ভবত ‘সাধারণ’ আর ‘খুব ভালো’র মাঝামাঝি মাত্রায় কাজ করবে।
‘এপিডায়োলেক্স’ উদ্ভাবনের কাজের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও ফার্মাসিস্ট গ্যারিস ওষুধটিকে কেন্দ্র করে যে মাত্রার প্রচারণা তৈরি হয়েছে, এর কার্যকারিতা সেই প্রত্যশা পূরণ করতে পারবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।
ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে তন্দ্রাভাব হতে পারে বলে জানান জিডব্লিউ ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী গোভার। কিন্তু গ্যারিস বলেন, তন্দ্রাভাবের ছাড়াও অন্য ওষুধের সঙ্গে এই ওষুধ গ্রহণ করলে আরো অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। অধিকাংশ মানুষই বিভিন্ন সময় কোনো না কোনো ওষুধ খেয়েই থাকেন।
এ ছাড়া এ রকম একটি ওষুধ বাজারে এলে এর অপব্যবহার হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এফডিএর বরাত দিয়ে গোভার বলেন, সে সম্ভাবনা খুব কম বা প্রায় নেই বললেই চলে।
এদিকে, গাঁজা থেকে প্রস্তুত করা ওষুধ ‘এপিডায়োলেক্স’ এমন এক সময় অনুমোদন পেল যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে গাঁজাকে বিনোদন ও চিকিৎসার প্রয়োজনে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে এবং হোয়াইট হাউস রাষ্ট্রীয়ভাবে এটিকে নিষিদ্ধ রাখা না রাখার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করছে।