করুণানিধিকে শেষ শ্রদ্ধা, ভিড়ে দুজনের মৃত্যু
ভারতের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ এম করুণানিধিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের ভিড়ে পদদলিত হয়ে দুজন মারা গেছেন। ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন ৩৩ জন।
আজ বুধবার তামিলনাড়ুর চেন্নাইয়ের রাজাজি হলে ওই ঘটনা ঘটে। সেখানেই করুণানিধিকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার চেন্নাইয়ের কাবেরি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মুথুভেল করুণানিধি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। ভারতের প্রভাবশালী এ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন পাঁচবার।
জানা যায়, প্রয়াত করুণানিধিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন তাঁর দল দ্রাবিঢ় মুনেত্রা কাজাঘামের (ডিএমকে) অগণিত কর্মী ও সমর্থকরা। কিন্ত রাজাজি হলের ধারণ ক্ষমতার বাইরে জনসমাগম হয়। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। প্রথম থেকেই রাজাজি হলের সামনে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা একটি নির্দিষ্ট পথ দিয়ে ভেতরে ঢোকাচ্ছিলেন শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষজনকে। কিন্তু বাইরে ভিড় প্রচণ্ড পরিমাণে বেড়ে যাওয়ার কারণে একসময় সেই ব্যারিকেড ভেঙে যায়। পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে সবাই একসঙ্গে রাজাজি হলের ভেতর ঢোকার চেষ্টা করতে থাকে। এতে শুরু হয়ে যায় তুমুল বিশৃঙ্খলা। সেই বিশৃঙ্খলার জেরে পদদলিত হয়ে মারা যান দুজন। আহত হন ৩০ জনেরও বেশি মানুষ। এর পরই পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বুধবার বিকালে রাজাজি হল থেকে করুণানিধির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মেরিনা বিচের আন্না স্কোয়ারে। রাজাজি হল থেকে মেরিনা বিচ যাওয়ার তিন কিলোমিটার রাস্তা কার্যত জনসমুদ্রে রূপ নেয়। মেরিনা সৈকতে আন্না মেমোরিয়ালেই করুণানিধিকে সমাধিস্থ করা হবে।
বুধবার সকালেই রাজাজি হলে গিয়ে করুণানিধিকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি করুনানিধির পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন।
মঙ্গলবার করুণানিধির মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর ওই দিনই চেন্নাই পৌঁছে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ ছাড়া প্রয়াত করুণানিধিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত ছিলেন ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। ডিএমকে প্রধানের মৃত্যুতে বুধবার ভারতের সংসদে শোক প্রস্তাবের পর মুলতুবি হয়ে যায় সংসদের উভয় কক্ষের অধিবেশন।
বর্তমান তামিলনাড়ু সরকার চেন্নাইয়ের মেরিনা বিচে করুণানিধির সমাধিস্থল তৈরির অনুমতি দেয়নি। যার ফলে ডিএমকে মাদ্রাজ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। মঙ্গলবার মধ্যরাতে মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হুলুভেলি জি রমেশের বাসভবনে বিশেষ আদালত বসে। রাত থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত শুনানি হয়। তামিলনাড়ু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, গান্ধী মণ্ডপে দুই একর জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে করুণানিধির সমাধিস্থলের জন্য। কিন্তু আদালত সেই কথা না শুনে ডিএমকের দাবি মতো চেন্নাইয়ের মেরিনা সৈকতে করুণানিধিকে সমাধিস্থ করা যাবে বলে রায় দেন। তামিল ভূমিতে নির্বাচনে করুণানিধি যেমন হারেননি, তেমনই জীবনের অন্তিমলগ্নে এসেও বিজয়ী রয়ে গেলেন আদালতের রায়ে।