‘তিন তালাক’ বিল উঠছে ভারতের রাজ্যসভায়
ভারতে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত ‘তিন তালাক’ প্রথা বাতিল ও তাকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা বিষয়ক একটি খসড়া আইন পাসের ব্যাপারে রাজ্যসভার (উচ্চকক্ষ পার্লামেন্ট) প্রতিনিধিদের সমর্থন চায় সরকার।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবর অনুসারে আজ শুক্রবার প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে উত্থাপিত হবে।
যদি রাজ্যসভা এতে সমর্থন না দেয়, তাহলে সরকার অধ্যাদেশ কিংবা জরুরি নির্বাহী আদেশ হিসেবে এই আইন বলবৎ করার পরিকল্পনা করছে বলে এনডিটিভি সূত্রে জানা যায়।
নারীদের বিবাহ অধিকার সুরক্ষায় ‘মুসলিম ওমেন বিল ২০১৭’ নামক একটি সংশোধিত আইনে সম্মতি দিয়ে স্বাক্ষর করে ভারতীয় মন্ত্রিসভা। আইনটিতে দুটি বিতর্কিত বিধানের সংশোধন আনা হয়।
প্রথম পরিবর্তন অনুসারে মৌখিকভাবে তাৎক্ষণিক ‘তিন তালাক’ দেওয়া হলে কোনো স্ত্রী বা তার কোনো নিকটাত্মীয়ই কেবল ওই স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে মামলা করতে পারবে।
দ্বিতীয় সংশোধনী অনুসারে, ‘তিন তালাক’ দেওয়ার পর স্বামী যদি আপস করতে আসে, তাহলে স্ত্রী চাইলে মামলা থেকে সরে আসতে পারে।
কিন্তু অভিযুক্তের তিন বছরের কারাদণ্ড কিংবা পুলিশও নয়, কেবল কোনো হাকিম অভিযুক্তকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার অধিকার রাখে, বিলটিতে এ সংক্রান্ত অবস্থানে সরকার দৃঢ়।
বিচারক কেবল স্ত্রীর কথাবার্তা শোনার পরেই জামিনে অভিযুক্তকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
গত বছর মূল বিলটি লোকসভায় (নিম্নকক্ষ পার্লামেন্ট) পাস হয়ে যায়, কিন্তু রাজ্যসভায় এসে সেটা আটকে গেছে। কেননা লোকসভায় সংখ্যাগুরু হলেও রাজ্যসভায় ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জোট সংখ্যালঘু।
সরকার আশা করছে, মন্ত্রিসভার এই অনুমোদন এনডিএ জোটের বাইরের দলগুলোকে, যারা এই বিলটির অপব্যবহার হতে পারে বলে উদ্বিগ্ন, তাদেরও সংশোধিত বিলটিতে সমর্থনে উদ্বুদ্ধ করবে।
বিজেপি বিলটি উত্থাপনের সময় নিজেদের সকল সাংসদকে রাজ্যসভায় উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছে।
বিলটিতে আনা নতুন পরিবর্তনগুলো বিষয়ে এনডিএর বাইরের দল এআইএডিএমকে ও উড়িষ্যার মুখ্য মন্ত্রী নবীন পাটনায়েকের বিজু জনতা দল কী ভাবছে, তা জানা যায়নি। রাজ্যসভায় এ দুই দলের ২২ জন সাংসদ আছেন।
গত বছর লোকসভায় ওই বিলটির ব্যাপারে এ দুই দল বিরোধিতা করেছিল। সে সময় বিজেপির ভারত্রুহারি মাহতাব বিলটিকে ত্রুটিপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করেন এবং বলেন, বিলটি মুসলিম নারীদের অপকার সাধন করতে পারে। এআইএডিএমকে কেন্দ্রের কাছে প্রস্তাব রাখে স্বামীদের তিন বছরের কারাদণ্ডের ধারাটি বাতিলের ব্যাপারে। এ দুই দল সে সময় বিলটির বিরোধিতা না করলেও ভোট দেওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখে।
এদিকে গতকাল দেশটির আইনমন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের (ইউপিএ) চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধীকে খোঁচা মেরে বলেন, ‘আমি সোনিয়া গান্ধীর কাছে জানতে চাই, আপনি কি নারীদের সম্মান ও মর্যাদার প্রশ্নে দাঁড়াবেন? কংগ্রেসের উচিত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করা।’